—প্রতীকী ছবি।
রাস্তার ধারে বাতিস্তম্ভ। কিন্তু তাতে এলাকা আলোকিত হয় না। সেটির বাল্ব বহুকাল আগেই জ্বলা বন্ধ করে দিয়েছে। বাল্বের জায়গায় তৈরি হয়েছে পাখির বাসা। খড়কুটো ঝুলছে! স্থানীয় এক বাসিন্দা বাতিস্তম্ভটি দেখিয়ে বললেন, ‘‘আলো জ্বলে না। অথচ, এ দিকে কারও নজর নেই। ভোটের মরসুমে স্তম্ভের গায়ে দিব্যি প্রার্থীর মুখ দেওয়া স্টিকার লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ স্থানীয়দের অনেকেরই দাবি, এই স্তম্ভ আরও একটি কাজে ব্যবহার হয়। এখান থেকে তার দিয়ে টেনে নেওয়া বিদ্যুৎ যায় এলাকার বাড়ি বাড়ি। তাই স্তম্ভের মেরামতি হয় না। নতুন বাল্ব লাগানোর চেষ্টাও হয় না।
বুধবারের নির্বাচনের আগে মানিকতলার সাহেববাগানে খোঁজ করতেই দেখা মিলল এমন একাধিক বাতিস্তম্ভের। এমন স্তম্ভও রয়েছে, যেটির দায় নিতে চায় না কেউই। পুরসভা বলে, স্তম্ভটি সিইএসসি-র। আর ওই বিদ্যুৎ সংস্থা বলে, স্তম্ভটি কার, পুরসভাই ভাল বলতে পারবে। এই ধরনের স্তম্ভ থেকে প্রায়ই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন কেউ না কেউ। মৃত্যুও ঘটে। কিন্তু দিনকয়েকের আলোচনার পরে পরিস্থিতি যে কে সে-ই। স্তম্ভের মৃত্যু-ফাঁদ থেকেই যায়। শুধু ওই এলাকাতেই নয়, চুরির বিদ্যুৎ আর বাতিস্তম্ভের বিপদ রয়েছে মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রের অনেক জায়গাতেই। ভোটের মুখে এ নিয়ে সব পক্ষ কথা বললেও পরিস্থিতির বদল হবে কবে, তার উত্তর মেলে না।
বছরকয়েক আগে বৃষ্টির মরসুমে মানিকতলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় শ্যামল দে-র। সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার সময়ে তিনি একটি বিদ্যুতের স্তম্ভ ছুঁয়ে ফেলেন। রাস্তায় ছটফট করতে করতেই মৃত্যু হয়। কেউ এগিয়ে যাননি। ওই চত্বরের ক্যানাল ইস্ট রোডের এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘এই তল্লাটের প্রায় সকলেই কম-বেশি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন। স্তম্ভে হাত দিলেই শক খেতে হয়। বাচ্চারা ভয়ে স্তম্ভের ধারেকাছে ঘেঁষে না। ভয়েই কেউ সে দিন ওই যুবককে ধরতে যাননি।’’ সেই ঘটনার এক মাসের মাথায় সাহেববাগানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় পুষ্পা বর্মার। শৌচাগারের জল বিদ্যুদয়িত হওয়ায় তিনি মারা যান।
তাঁর দেহ নিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এক দল চড়াও হন পুরপ্রতিনিধির বাড়িতে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এই ঘটনার কয়েক দিন আগেই আমপানের তাণ্ডবের পরে মানিকতলায় রাস্তার খুঁটিতে হাত দিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান দু’জন। পর পর এমন ঘটনায় প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয় মানুষের মধ্যে। প্রশাসন সে সময়ে দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কথা বললেও সম্প্রতি গিয়ে দেখা গেল, অবস্থার বদল ঘটেনি এখনও। এখনও তারের জট বাড়ির সামনে। এমন মিটার বক্স আছে, যাতে অন্তত শ’খানেক মিটার। সেখান থেকেই তার গিয়েছে আশপাশের বাড়িতে। কিছু তার স্থানীয় খুঁটি থেকে বাড়ি বাড়ি ঢুকেছে। সেগুলির কোনওটি ছিঁড়ে রাস্তায় পড়ে, কোনওটি বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে। মানিকতলা মেন রোডে আবার ট্র্যাফিক সিগন্যালের স্তম্ভ থেকেও ঝুলতে দেখা গেল কোনও কালে লাগানো টেপ খুলে বেরিয়ে আসা তার।
পুষ্পার পুত্রবধূ অঙ্কিতা বর্মা বললেন, ‘‘যাঁর যায়, তাঁর যায়। ভোটের মরসুমে কোনও মৃত্যুর কথাই ওঠে না। আর কত মৃত্যু হলে এই তারের জটহীন জীবন পাব?’’ মানিকতলা কেন্দ্রে বিধানসভা ভোটের মুখে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বললেন, ‘‘খোলা তার নিয়ে সর্বত্র কড়া বার্তা দেওয়া আছে। ভোটের কোনও ব্যাপার নয়, মানুষের জীবন সবার আগে।’’ কিন্তু তার পরেও এই পরিস্থিতি দিনের পর দিন থাকে কী করে? কোনও পক্ষ থেকেই অবশ্য স্পষ্ট কোনও উত্তর মেলে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy