হাসিখুশি: শিশুদের সঙ্গে সান্তারা। মঙ্গলবার, কলকাতা বিমানবন্দরে। নিজস্ব চিত্র
অ্যাঞ্জেল দ্বীপের অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া খেলনা বিক্রেতা নিকোলাস ক্লজ থাকতেন ইউরোপের কোনও এক দেশে। স্ত্রী গ্রেটচেন অবশ্য তাঁকে ডাকতেন সান্তা নামে। পৃথিবীর সব শিশুকে খেলনা উপহার দেওয়ার ইচ্ছে ছিল তাঁদের। কিন্তু বিক্রির তুলনায় উপহার দেওয়ার সংখ্যা বেশি হওয়ায় ক্রমে দেনায় ডুবে যান নিকোলাস। টাকা না পেয়ে একসময়ে তাঁদের তাড়িয়ে দেন বাড়িওয়ালা। অবশিষ্ট খেলনাগুলি অ্যাঞ্জেল দ্বীপের অনাথ আশ্রমে দিতে বেরিয়ে ঝড়ের মুখে পড়েন নিকোলাস দম্পতি। জাহাজ নিয়ে পৌঁছে যান উত্তর মেরু। সেখানে ক্রিসমাস এল্ফদের (রূপকথার চরিত্র) বাধা সত্ত্বেও বড়দিনে বিশ্বের সব শিশুর হাতে নিজেদের তৈরি খেলনা উপহার দেন তাঁরা। নিকোলাস ঘোষণা করেন, চিরকাল এই প্রথা মানবেন তাঁরা। শুরু হয় সান্তার যাত্রা।
টবি ব্লুথ নির্দেশিত, ১৯৯৬ সালে মুক্তি পাওয়া অ্যানিমেশন ছবি ‘দ্য স্টোরি অব সান্তা ক্লজ’-এর কাহিনিই বলে, সান্তা আসলে কোনও জাদুকর নন। নিজের যন্ত্রণা ভুলতেই অন্যের মুখে হাসি ফুটিয়ে চলেন তিনি।
এ শহরের সান্তারাও যেন অজান্তে হেঁটে চলেছেন সে পথেই। নিজেদের দুঃখ আর শূন্য ঝুলি ঢাকতে অন্যের খুশির কারণ হয়ে ওঠেন ওঁরা। যে কারণে সান্তার ঝোলা কাঁধে নিয়ে এই বড়দিনের সময়ে পথে বেরিয়ে পড়ে ব্যারাকপুরের কুণ্ডুবাড়ি এলাকার অভিষেক ঘোষ। বাবা পেশায় গাড়িচালক। ছ’বছরের বোন আর মাকে নিয়ে অভাবের সংসার। গত বছর মাধ্যমিক পাশ করেও পড়াশোনায় ছেদ পড়েছে বছর সতেরোর ওই কিশোরের। এখন ঘণ্টায় একশো টাকা হিসেবে চার-পাঁচ ঘণ্টার সান্তার ডিউটি করে সে। গোঁফ-দাড়ি আর লাল পোশাকের আড়ালে ঢেকে যায় তার অপ্রাপ্তি। এ বারের বড়দিন অবশ্য কিছুটা অন্য রকম। সম্প্রতি কেক কারখানায় কাজ পেয়েছে সে। তবে সন্ধ্যার অবসরে কিছু বাড়তি রোজগারের আশায় এ বারেও সান্তা সাজবে কিশোর অভিষেক।
আর এক সান্তা তো সেই দশ বছর বয়স থেকেই পরিবারের ভরসা। ছোটবেলায় প্রথম চার্লি চ্যাপলিন সেজেছিলেন তিনি। গত সাত বছর ধরে সান্তা সাজছেন ব্রজেশ মাহাতা। আসানসোলের বাড়িতে থাকেন বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত বাবা ও মা। বছর বাইশের ব্রজেশ থাকেন সোদপুরের মামার বাড়িতে। অভাবের সংসার, তাই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে নেমে পড়েছিলেন বেলুন ও ফুল সাজানোর ব্যবসায়। জানাচ্ছেন, এ বছর বড়দিন থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ২২টি অনুষ্ঠানে সান্তা সাজার ডাক পড়েছে তাঁর। আক্রার বাসিন্দা, বছর কুড়ির সাদ্দাম হুসেনের (নাম পরিবর্তিত) অবশ্য ডাক এসেছে তিনটি অনুষ্ঠানে। চেনা পরিচিতদের মাধ্যমেই কাজের ডাক পেতে উৎসাহী সাদ্দাম। তাঁর কথায়, “কারও অধীনে কাজ করলে টাকা বেশি মেলে না।”
চাহিদা মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সান্তা এবং কার্টুন চরিত্রে লোক সাজিয়ে পাঠায় বেশ কিছু সংস্থা। এমনই একটি সংস্থার কর্ণধার পার্থপ্রতিম পাল বলেন, “শহরতলির ছেলেরাই এ কাজে বেশি আগ্রহী। অনুষ্ঠানপিছু এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়।” তবে সান্তাদের মধ্যে যে পেশাদারিত্বের অভাব রয়েছে, তা মানছেন অনেকেই।
হাতে গোনা দু’-এক জন আবার শখে সান্তা সাজেন। যেমন উল্টোডাঙার বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা চট্টোপাধ্যায়। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার প্রিয়াঙ্কা বছর চারেক আগে চাকরি ছেড়ে গল্পের মাধ্যমে সামাজিক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার সংস্থা খুলেছেন। ২০১৬ সালে একটি অনাথ আশ্রমে প্রথম সান্তা সাজেন তিনি। সে বছর জুলাইয়ে কোপেনহাগেনে ‘ওয়ার্ল্ড সান্তা ক্লজ কংগ্রেস’ দেখেই তাঁর এমন কিছু করার ভাবনা বলে জানালেন প্রিয়াঙ্কা। তবে নিজেকে বাবুস্কার (রাশিয়ান দিদা) সঙ্গে মিলিয়ে দেখতেই আনন্দ পান তিনি। প্রিয়াঙ্কার কথায়, “সংসারে পুরুষ ও নারী উভয়েরই ভূমিকা আছে। তাই শুধু পুরুষ সান্তা কেন খুশির বার্তা দেবে? সে কারণেই বাবুস্কারূপী সান্তা আমি।” ছোটদের জন্য তাঁর ঝুলিতে উপহার ছাড়াও থাকে ক্রিসমাস ঘিরে প্রচলিত গল্পগুচ্ছ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy