Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Adenovirus

কলকাতায় বাড়ছে অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা, কেন এত ভয়ঙ্কর এই ভাইরাস?

ডিসেম্বরে অ্যাডিনোভাইরাস ছিল ২২ শতাংশের মতো। জানুয়ারিতে ছিল ৩০ শতাংশ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অ্যাডিনোভাইরাস রয়েছে ৩০ শতাংশের বেশি।

An image representing a child suffering from Adenovirus

সর্বত্রই হাসপাতাল ভরে যাচ্ছে জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত শিশু রোগীতে। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:২৮
Share: Save:

শহর থেকে জেলা, সর্বত্রই হাসপাতাল ভরে যাচ্ছে জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত শিশু রোগীতে। নেপথ্যে রয়েছে পুরনো ও চেনা সেই আপাতনিরীহ অ্যাডিনোভাইরাস। কিন্তু, এ বছর সেই ভাইরাস আচমকা কেন এতটা মারাত্মক হয়ে উঠেছে, তা নিয়ে ধন্দে চিকিৎসকেরাও। তবে কি পরিচিত ওই ভাইরাসের চারিত্রিকপরিবর্তন ঘটেছে? যে কারণে করোনার মতো এই ভাইরাস শিশুদের ক্ষেত্রে কার্যত অতিমারির পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

চিন্তার ভাঁজ স্বাস্থ্যকর্তাদের কপালেও। শনিবার সকালে তড়িঘড়ি সমস্ত জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, শহরের মেডিক্যাল কলেজগুলির অধ্যক্ষ এবং স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। আবার বছর দুয়েক পরে ফিরে আসা অ্যাডিনোভাইরাসের মিউটেশনের মাধ্যমে জিনগত কোনও পরিবর্তন ঘটেছে কি না, ইতিমধ্যেই তা জানার চেষ্টা শুরু করেছে নাইসেড। জানা যাচ্ছে, রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে বছরভর নাইসেডে পাঠানো নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণের (রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন) উপরে নজরদারি চালানো হয়। সেটি মূলত ইনফ্লুয়েঞ্জা ও প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের উপরে নজরদারির জন্য হলেও, রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট প্যানেলে আরও কতগুলি ভাইরাস আছে, যা পরীক্ষা করা হয়।

নাইসেডের সেই রিপোর্টেই উঠে এসেছে উদ্বেগের ছবিটা। জানা যাচ্ছে, ডিসেম্বরে অ্যাডিনোভাইরাস ছিল ২২ শতাংশের মতো। জানুয়ারিতে ছিল ৩০ শতাংশ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অ্যাডিনোভাইরাস রয়েছে ৩০ শতাংশের বেশি। অধিকর্তা শান্তা দত্ত বলেন, “এ রাজ্যেই আচমকা অ্যাডিনোভাইরাসের এত প্রকোপ কেন, সেটা বোঝা যাচ্ছে না। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ফোন আসছে। বিষয়টি জানতে অ্যাডিনোভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করা হচ্ছে।”

সাধারণ শয্যা তো বটেই, পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিকু) রোগীর সংখ্যাও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। পিকু-তে এক থেকে দু’বছরের শিশুর সংখ্যাই সব থেকে বেশি। স্বাস্থ্য ভবনের বৈঠকেও জানানো হয়েছে, রাজ্যে করোনার সময়ে শিশুদের চিকিৎসার জন্য যে পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছিল, তা যেন পুরোপুরি কাজে লাগানো হয়। অযথা যেন কোনও শিশুকে ‘রেফার’ করে শহরের হাসপাতালের উপরে চাপ তৈরি করা না হয়। প্রতিদিনই নমুনা পাঠাতে হবে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে। স্বাস্থ্য-অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, “অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় কী করণীয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সে বিষয়ে আবারও আলোচনা হয়েছে।”

বি সি রায় শিশু হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। খোলা হয়েছে ফিভার ক্লিনিক। যদিও সেই হাসপাতাল চত্বরে সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন সেখানকার রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান, সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার। তাঁর কথায়, “অযথা আতঙ্ক তৈরির কোনও প্রয়োজন নেই। ভিতরে ঢুকলে শিশুরা আতঙ্কিত হয়ে যাবে।” যদিও অ্যাডিনোভাইরাস ইতিমধ্যেই কোভিড-পরবর্তী নতুন আতঙ্ক তৈরি করেছে বলেই মত অধিকাংশ চিকিৎসকের। শহরের একটি মেডিক্যাল কলেজের এক শিশুরোগ চিকিৎসকের কথায়, “দু’বছরের কমবয়সি বাচ্চাদের অতি দ্রুত রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন হচ্ছে। অনেকের শারীরিক অবস্থা এত দ্রুত খারাপ হচ্ছে যে, ভেন্টিলেশন কিংবা অন্যান্য কৃত্রিম উপায়ে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখতে হচ্ছে।” শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালের শিশুরোগ চিকিৎসক শান্তনু রায়ের মতে, “মিউটেশনের কারণেই অ্যাডিনোভাইরাস এত বেশি সংক্রামক ও ভয়ানক বলে মনে হচ্ছে। আগে এই ভাইরাসে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা বেশি পাওয়া যেত না। এ বার সেটি মারাত্মক বেশি। মেনিনজাইটিসও হচ্ছে।”

আবার ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের মতে, দেশ তথা রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ কোভিশিল্ড নিয়েছেন। এর মাধ্যমে শিম্পাঞ্জির মডিফায়েড (পরিবর্তিত) অ্যাডিনোভাইরাস ‘ভেক্টর ভাইরাস’ মানবশরীরে ঢুকেছে। রেপ্লিকেট (বিভাজিত হয়ে সংখ্যা বৃদ্ধি) করতে অপারগ এই ভাইরাস কোষের মধ্যে থেকে করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন তৈরিতে নিয়োজিত থাকার কথা। সিদ্ধার্থ বলেন, “বর্তমানে জনগোষ্ঠীতে এই মডিফায়েড ভাইরাস আদতে রয়েছে কি না, থাকলেও সর্দি-কাশি তৈরি করে, এমন অ্যাডিনোভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্ক কী, তা নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন। কাজটা কঠিন হলেও জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমেই উত্তর মিলতে পারে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Adenovirus Viral fever Children
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy