—প্রতীকী ছবি
চার্জশিটে যিনি অভিযুক্ত, তিনিই আবার মামলার সাক্ষী! পোস্তা থানার অফিসারের পেশ করা এমন নথি দেখে তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলেন বিচারক। কী ভাবে এক জন অভিযুক্ত নিজের বিরুদ্ধেই সাক্ষ্য দিতে পারেন এবং তা পুলিশ নথিবদ্ধ করে আদালতে পেশ করতে পারে, তার কোনও ব্যাখ্যা খুঁজে পাননি তিনি। তবে বিচারক এটা বুঝেছিলেন, পোস্তা থানা তদন্তে গোলমাল করেছে। চার্জশিটের এই গরমিল দেখেই পোস্তা থানার ওসি, মামলার তদন্তকারী অফিসার এবং থানার তদারকির দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনারকে সশরীরে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা পুর আদালতের সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট প্রদীপকুমার অধিকারী।
আগামী ২২ জানুয়ারি ওই তিন পুলিশ অফিসারের আদালতে হাজির হওয়ার কথা। কেন তাঁদের বিরুদ্ধে গাফিলতির দায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তারও লিখিত ব্যাখ্যা আদালতে জমা দিতে বলেছেন বিচারক। এ ছাড়াও, তদন্তে গাফিলতির বিষয়টি কলকাতা পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল)-কে তদন্ত করে দেখতে বলেছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী অফিসারের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ করে তা আদালতকে জানাতেও বলা হয়েছে ডিসি (সেন্ট্রাল)-কে।
আদালত সূত্রের খবর, ২০১৮ সালের ২০ জুন পুরসভার বিল্ডিং দফতরের এক জন সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পোস্তা এলাকায় পরিদর্শনে গিয়ে একটি অবৈধ নির্মাণ চিহ্নিত করেন। সংশ্লিষ্ট বরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার আশিস কুণ্ডু ওই দিনই অভিযোগ দায়ের করেন। ২৩ জুন এফআইআর দায়ের করে পোস্তা থানা। কেস ডায়েরি অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর তদন্ত শেষ করে চার্জশিট লেখা হয়েছিল। তার দু’বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরে সেই চার্জশিট আদালতে এসে পৌঁছয়। চার্জশিট এবং কেস ডায়েরি খতিয়ে দেখতে গিয়েই বিস্মিত হয়ে পড়েন বিচারক। চার্জশিটে প্রথমে সুনীল আগরওয়াল নামে এক ব্যক্তির নাম ছিল। পরে সেখানে দ্বারকানাথ পোদ্দার নামে আরও এক ব্যক্তিকে যুক্ত করেছেন তদন্তকারী অফিসার। কেস ডায়েরিতে আবার এক জন অভিযুক্তের নাম রয়েছে। সুনীল আগরওয়াল অভিযুক্ত হিসেবেও উল্লেখিত এবং তিনি চার্জশিটে সাক্ষী হিসেবেও উল্লেখিত। যার অর্থ, নিজের অভিযোগের বিরুদ্ধে তিনি নিজেই সাক্ষ্য দিয়েছেন। অভিযুক্তদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেনি, গ্রেফতার করেনি, নোটিস পাঠিয়ে তলবও করেনি! অভিযুক্তেরা ওই নির্মাণের সঙ্গে কী ভাবে যুক্ত, তারও উল্লেখ তদন্তের নথিতে নেই। এই সব গরমিলের কথা বিচারক নির্দেশে উল্লেখ করেছেন।
আদালতের খবর, পুরসভার যে ইঞ্জিনিয়ার অভিযোগ জানিয়েছিলেন, এফআইআরে তাঁর সই বা আঙুলের ছাপ নেই। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেননি তদন্তকারী অফিসার। অভিযোগ রয়েছে, একটি বসতবাড়িকে বাণিজ্যিক বহুতল হিসেবে তৈরি করা হচ্ছিল। সে ক্ষেত্রে দমকলের ছাড়পত্র জরুরি। সেই অভিযোগের তদন্ত হয়নি, দমকলের কোনও বক্তব্য জানেননি তদন্তকারী অফিসার। নির্মাণে ব্যবহৃত মশলাপাতির গুণাগুণ বিশ্লেষণ, নির্মাণটির গলদ রয়েছে কি না, তা-ও পুরসভার তালিকাভুক্ত বিশেষজ্ঞদের কাছে জানতে চাওয়া হয়নি। এ ধরনের মামলায় পুরসভার নিকাশি, পানীয় জল, ট্র্যাফিক পুলিশের বক্তব্য নথিভুক্ত করতে হয়। তা-ও জানতে চাননি তদন্তকারী অফিসার।
সব শুনে পুলিশেরই একাংশ বলছেন, কলকাতা পুলিশের মতো বাহিনীতে এ কেমন তদন্ত? সেই চার্জশিট কী ভাবে ওসি এবং পদস্থ কর্তারা সই করে আদালতে জমা দিলেন? এমনই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে খোদ আদালতও!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy