নিমতলা ঘাটের কাছে দূষিত গঙ্গা। —ফাইল চিত্র।
‘‘ভারতের সব নদী গঙ্গা। অথচ, আজ এই দেশে এমন একটি নদীও অবশিষ্ট নেই, যেটা তার উৎপত্তিস্থল থেকে প্রবাহিত হয়ে বিনা বাধায় সমুদ্রে এসে মিশেছে। প্রতি পদে নদীর প্রবাহকে বাঁধ দিয়ে জবরদখল করে রীতিমতো হত্যা করা হচ্ছে।’’— শনিবার এপিসি রায় রোডের রামমোহন লাইব্রেরিতে দেশের গঙ্গা-আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ স্বামী শিবানন্দ সরস্বতী যখন এই কথাগুলো বলছিলেন, তখন ভিড়ে ঠাসা হলরুমে পিন পড়লেও যেন আওয়াজ পাওয়া যাবে।
আর হবে না-ই বা কেন? পরিবেশবিদ থেকে গঙ্গা-আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সচেতন নাগরিকেরাও জানেন, দেশের গঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের ক্ষেত্রে হরিদ্বারের মাতৃসদন আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা শিবানন্দ সরস্বতীর ভূমিকা কী। এই আন্দোলনের জন্য ইতিমধ্যেই মাতৃসদন আশ্রমের চার সন্ন্যাসী অনশনের মাধ্যমে প্রাণত্যাগ করেছেন। পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, গঙ্গা বাঁচাতে প্রাণত্যাগ করাকে এই আশ্রমের সন্ন্যাসীরা সম্মানজনক বলে মনে করেন। যেমন শিবানন্দ সরস্বতীর শিষ্য ব্রহ্মচারী আত্মবোধানন্দ গঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের পক্ষে সওয়াল করে টানা ১৯৬ দিন অনশন করেছেন। অনশনের ১৫০ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরে যখন সবাই উদ্বিগ্ন, কোনও দুর্ঘটনা ঘটবে কি না ভেবে, তখন আত্মবোধানন্দ বলেছিলেন, ‘‘আমার কথা ভেবো না। গঙ্গা বাঁচানোর কথা ভাবো।’’ সেই আত্মবোধানন্দও এ দিন উপস্থিত ছিলেন এই আলোচনাসভায়। তিনি বলছিলেন, ‘‘বর্তমানে শুধু গঙ্গাই নয়, দেশের সব নদীরই যা অবস্থা, তাতে পরবর্তী প্রজন্মকে নদী কী, তা বুঝতে বিদেশে যেতে হবে। কারণ, এ দেশে নদীর কোনও অস্তিত্বই থাকবে না।’’
প্রসঙ্গত, এ দিনের আলোচনা ‘গঙ্গা মহাসভা’র মূল উদ্যোক্তা পশ্চিমবঙ্গের ‘নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও আন্দোলন’ সংগঠন। সংগঠনের জাতীয় আহ্বায়ক তাপস দাস, কল্লোল রায়েরা জানালেন, কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় গঙ্গার পাড়ে জবরদখল শুরু হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বলেও বেশির ভাগ সময়েই তার কোনও সুরাহা মিলছে না। নদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত লেখিকা জয়া মিত্রের বক্তব্য, এটা ভারতের দুর্ভাগ্য যে, এই দেশ নদীমাতৃক হওয়া সত্ত্বেও এখন বলতে হচ্ছে— নদী বাঁচাও, নদীকে রক্ষা করো। তাঁর কথায়, ‘‘কারণ, আইনরক্ষাকারীরা শুধু মিথ্যে কথা বলেন। তাই শুধু আইন করে গঙ্গাকে বাঁচানো যাবে না।’’
পরিবেশবিজ্ঞানী তপন সাহা আবার জানালেন, নদীর ভাঙন এ রাজ্যে কী বিপজ্জনক আকার ধারণ করেছে। তাঁর কথায়, ‘‘তার কারণ, পলি জমে নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে। শুধুমাত্র নদীর যে অংশে জাহাজ চলাচল করে, সেখানে পলি নিষ্কাশনের কাজ করা হয়। তা-ও সেটা সাময়িক ভাবে। বেশির ভাগ সময়ে পলি নিষ্কাশনের কাজটাই হয় না।’’
কিন্তু প্রশাসনের যত উদাসীনতাই থাক, প্রশাসনের তরফে আন্দোলন বন্ধের যত চেষ্টাই হোক, তাঁরা থামবেন না। এ কথা স্পষ্ট জানালেন স্বামী শিবানন্দ সরস্বতী। বললেন, ‘‘গঙ্গা বাঁচানোর লড়াই আমরা আমরণ চালাব। কারণ, গঙ্গা না বাঁচলে আমরা কেউ বাঁচব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy