The Lockdown through the lens of Soham Gupta, Sutapa Roy and Saheli Das dgtl
sky
লকডাউন। লেন্সে প্রবন্ধ।। দেখুন কলকাতার নামী ফোটোগ্রাফারদের সঙ্গে
লকডাউন। গত দু’মাসে কলকাতা তার গায়ে মেখেছে এক অন্য অভিজ্ঞতা। সে সব কথাই আমরা তুলে ধরেছি পাঠকের সামনে। এ বার তুলে ধরছি কয়েক জন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ফোটোগ্রাফারের কথা।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২০ ০৯:০০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
লকডাউন। গত দু’মাসে কলকাতা তার গায়ে মেখেছে এক অন্য অভিজ্ঞতা। সে সব কথাই আমরা তুলে ধরেছি পাঠকের সামনে। এ বার তুলে ধরছি কয়েক জন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ফোটোগ্রাফারের কথা। যে কথা বলেছে তাঁদের লেন্স। এঁদের কাজ বিভিন্ন দেশে প্রদর্শিত এবং প্রশংসিত হয়েছে। ফোটোগ্রাফার হিসাবে এঁরা কেউই সুন্দরের পূজারী নন, বরং প্রকৃতি ও জীবনের অন্ধকারকেই টেনেহেঁচড়ে আমাদের মুখোমুখি করেন।
০২১৬
পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবা কিনে দিয়েছিলেন ক্যামেরা। তার পর থেকেই ছেলের লেখাপড়ায় মন কম। সারা দিন ক্যামেরা নিয়েই খুটখাট। বয়স যত বাড়ে, ক্যামেরাই হয়ে ওঠে দোসর। অবশেষে রুটিরুজিও। আমি-আপনিও দেখি। তিনিও দেখেন। তবে তিনি দেখেন চোখ পেরিয়ে লেন্স ছাপিয়ে। তিনি কলকাতার সোহম গুপ্ত।
০৩১৬
লেন্সের দুনিয়ায় যাঁর বিস্তর নামডাক মাত্র ৩২-এ পৌঁছেই। ২০১৮-য় ব্রিটিশ জার্নাল অব ফোটোগ্রাফির বিচারে বিশ্বসেরাদের তালিকায় ১৬ নম্বরে জায়গা করে নিয়েছেন।
০৪১৬
২০১৯-এ পৃথিবীখ্যাত চিত্রপ্রদর্শনী লা বিনালে দি ভেনেজিয়ার ৫৮তম বর্ষে অংশও নিয়েছেন। এ ছাড়াও নানা আন্তর্জাতিক মঞ্চ তাঁকে এনে দিয়েছে খ্যাতি ও সম্মান।
০৫১৬
লেন্সের মধ্যে দিয়ে আলো নয়, চারপাশের অন্ধকারকেই ফুটিয়ে তুলতে চান এই ‘ডার্ক ফোটোগ্রাফার’। সমাজের অন্ত্যজ শ্রেণির অন্ধকারময় জীবন, প্রকৃতির মনকেমন বার বারই তাঁকে তাড়া করে বেড়ায়।
০৬১৬
এই অ্যালবামের পাঁচটি ছবিও আদতে দুর্যোগের আকাশের গল্পগাথা। কালো ভারী মেঘ এই অস্থির সময়ে আকাশকেও যে ভাল থাকতে দেয় না! আকাশ তার মনখারাপের গল্প শোনায় সোহমের ক্যামেরাকে।
০৭১৬
সোহম যখন লেন্স দিয়ে আকাশের মনের কথা ধরেন, তখন আবার সুতপাকে টানে মানব-মনের কারসাজি। এ যেন আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়ানোর ফ্রেম। সব ছবিতেই মনের কারসাজি। মনের কথা। বছর পাঁচেক ধরেই চারপাশের নানা দৃশ্যকল্পকে মনের আলো- অন্ধকারের সঙ্গে মিশিয়ে ক্যামেরাবন্দি করছেন এই গল্পকার। থুড়ি, ফোটোগ্রাফার সুতপা রায়।
০৮১৬
কিন্তু গল্পকার বলব না-ই বা কেন? লকডাউনের সময় ইলেকট্রিক তারের জট পাকানো দৃশ্য তাঁকে মনে করায় মনের জটিলতাকে। ডিমের ভাঙা খোলার দৃশ্য আদতে তাঁর কাছে মনের অন্ধকার ফুঁড়ে আলোর উৎসরণ। গাড়ির চাকায় রোদ পড়াও যেন অন্ধকার জীবনে আলোর ছোঁয়াচ। তা হলে তিনি তো গল্পকারই। গল্প বলেন লেন্স দিয়ে।
০৯১৬
কোনও প্রশিক্ষণ ছিল না। বাড়ির কেনা ক্যামেরা ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতেই এক দিন ছবিকে নেশা বানিয়ে ফেলেছিলেন কলকাতার এই মেয়ে। আজ ঝুলিতে স্বীকৃতি ও পুরস্কারও অঢেল।
১০১৬
২০১৮-য় ‘নিকন ওম্যান ফোটোগ্রাফি কনটেস্ট’-এ জয়ী হন সুতপা। সম্প্রতি ২০১৯-এ‘ইন্ডিয়ান ফোটো ফেস্টিভ্যাল পোর্ট্রেট’ প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত নির্বাচিতদের তালিকায় ছিলেন। ২০২১-এ রয়েছে নিউ ইয়র্ক পোর্টফোলিয়ো রিভিউ প্রোগ্রামে যাওয়ার আমন্ত্রণ। নিয়ত দেশ-বিদেশের নানা প্রজেক্ট নিয়ে স্বতন্ত্র ভাবে কাজ করে চলেছেন সুতপা।
১১১৬
জীবনের যে কোনও দৃশ্যের সঙ্গে মনের যোগসাজশ খুঁজে বেড়ানোতেই তাঁর আনন্দ। করোনার সময় হাত ধোওয়ার দৃশ্যও তাই তাঁর কাছে সাবান দিয়ে কচলে মনের কলুষ বার করে দেওয়ারই আর এক রূপ!
১২১৬
ফোটোগ্রাফার সহেলী দাস আবার ছবিকে দেখেন অন্য ভাবে। কলকাতার রাস্তায় এলোমেলো হাঁটতে হাঁটতেই ছবির সঙ্গে সখ্য সহেলীর। উত্তর কলকাতার গলি, তস্য গলি, গলির ফাঁকে ছেঁড়া ছেঁড়া আকাশ, পুরনো বাড়ি এগুলোই ছবির নেশা ধরিয়ে দিয়েছিল সহেলী দাসকে।
১৩১৬
ক্যামেরা না থাকলেও শিল্পী যেমন তাঁর চোখ আর মাথা দিয়ে ছবি তুলে রাখেন, সে ভাবেই সে সব দৃশ্য সরিয়ে রাখতেন মনের তাকে। সেই সব দৃশ্যকে তাড়া করতে করতেই এক দিন ভালবেসে ফেললেন ছবিকে।
১৪১৬
বাবার কিনে দেওয়া ক্যামেরায় ছোটবেলা থেকে ছবি তুললেও ২০১৬ থেকে ছবি তোলার কাজে বেশি করে মন বসিয়েছেন মালদহের এই মেয়ে। কলকাতার নামকরা গ্যালারিতে ছবি দেখতে যাওয়া, গুণী শিল্পীদের কাজ ছাপ ফেলে যেত মনে।
১৫১৬
নিজেও কাজ করছেন নানা অনলাইন মাধ্যমে। নানা সংবাদপত্রে। বিভিন্ন নামকরা গ্যালারিতে আমন্ত্রণ পেয়েছেন প্রদর্শনীর। ধীরে ধীরে বুঝেছেন, ছবিতে ধরে রাখতে হবে সময়কে।
১৬১৬
এই ছবিগুলোতেও লকডাউনের সময় মস্তিষ্কের অবসাদ, অস্থির রসায়ন ঠাঁই পেয়েছে। তাই হয়তো নিজের অজান্তেই বেছে নিয়েছেন সাদা-কালো মাধ্যম। ছায়া আর কায়া মিলিয়ে এমন আলো-আঁধারি ছবি যেমন নেশা ধরায়, তেমনই হঠাৎ দেখলে গা ছমছম করে!