The lockdown through the lens of Ronny Sen, Arnab Maity and Rohan Chakravarty dgtl
CAMERA
লকডাউন। লেন্সে প্রবন্ধ।। দেখুন কলকাতার নামী ফোটোগ্রাফারদের সঙ্গে
ফোটোগ্রাফার হিসাবে এঁরা কেউই সুন্দরের পূজারী নন, বরং প্রকৃতি ও জীবনের অন্ধকারকেই টেনেহেঁচড়ে আমাদের মুখোমুখি করেন।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২০ ০৯:০০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
লকডাউন। গত দু’মাসে কলকাতা তার গায়ে মেখেছে এক অন্য অভিজ্ঞতা। সে সব কথাই আমরা তুলে ধরেছি পাঠকের সামনে। এ বার তুলে ধরছি কয়েক জন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফোটোগ্রাফারের কথা। যে কথা বলেছে তাঁদের লেন্স। এঁদের কাজ বিভিন্ন দেশে প্রদর্শিত এবং প্রশংসিত হয়েছে। ফোটোগ্রাফার হিসাবে এঁরা কেউই সুন্দরের পূজারী নন, বরং প্রকৃতি ও জীবনের অন্ধকারকেই টেনে-হিঁচড়ে আমাদের সামনে নিয়ে আসেন।
০২১৬
বারান্দা থেকে। লকডাউন চলাকালীন নিজের তোলা ছবিগুলোকেই এই নামেই ডাকতে চান এই ফোটোগ্রাফার। কলকাতার ছেলে রনি সেন প্রকৃতির বিভিন্ন রহস্যের মধ্যে যে সৌন্দর্য তাকেই ধরতে চান ছবিতে। ফোটেগ্রাফির নিজের ভাষায় অব্যক্ত কথাগুলোকেই বাঁধকে চান ক্যামেরার আলো-আঁধারির মায়ায়।
০৩১৬
নামেই মালুম, লকডাউনের সময় বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে যে সব দৃশ্য চোখে পড়েছে তাদেরই ক্যামেরাবন্দি করেছেন রনি। লকডাউনের সময় কলকাতায় আটকে পড়লেও রনির কাজের পরিধি বিশ্ব জুড়েই।
০৪১৬
ছবি তোলার শুরুর দিকে ‘খমের দিন’ ও ‘এন্ড অব টাইম’ নামে দু’টি ছবির বই প্রকাশিত হয়। দু’টি বই-ই সমালোচকদের প্রশংসা আদায় করে নেয়। বিশ্বের নানা আর্ট মিউজিয়ম, উৎসব ও গ্যালারিতে রনির ছবি প্রদর্শিত হয়েছে। ২০১৬-য় ঝরিয়া কয়লাখনি অঞ্চলের উপর তোলা বেশ কয়েকটি ছবি নিয়ে ভেলভেডেয়ার মিউজিয়মে ২০১৮-য় তাঁর প্রথম একক ছবির প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও বিপুল সাড়া জাগে দর্শকমহলে। এই কাজের জন্য গেটি ইমেজেস ইনস্টাগ্রাম গ্রান্টও পেয়েছিলেন রনি।
০৫১৬
কর্মসূত্রে এখন কলকাতায় থাকলেও রনির কাজ শুধু ছবিতে আটকে নেই, ছায়াছবিও তৈরি করে ফেলেছেন তিনি। ২০১৯-এ স্ল্যামডান্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে তাঁর ছবি ‘ক্যাট স্টিক’ প্রথম মুক্তি পায় ও বিচারকদের বিচারে সেরা ছবি হিসেবেও নির্বাচিত হয়। ২০১৯-এর কলকাতায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগে একমাত্র বাংলা ছবি হিসাবে এই ছবি প্রদর্শিত হয়। ছবি ও ছায়াছবি আঁকড়েই বেঁচে থাকার আনন্দ পান রনি।
০৬১৬
গত ১৫ বছর ধরেই ছবির সঙ্গে বসত গড়া রনি শুধু ছবির সৌজন্যেই চষে বেড়িয়েছেন দিল্লি, মুম্বই-সহ দেশের নানা গ্যালারি ও বিদেশের নানা মিউজিয়ম ও প্রদর্শনী।
০৭১৬
২৬ বছরের অর্ণব মাইতি আবার ছবি তোলাকে পেশা নয়, নেশা হিসেবে নিতেই পছন্দ করেন। কাঁথির ছেলে অর্ণবের ক্যামেরার সঙ্গে প্রথম ভাব-ভালবাসা কলেজে পড়তে পড়তেই।
০৮১৬
সেই সময় বাবার কিনে দেওয়া ক্যামেরা দিয়েই ছবির দুনিয়াকে ভালোবেসে ফেলেন অর্ণব। জীবনের খুব ছোটখাটো বিষয়ের মধ্যেও লুকিয়ে থাকা অসাধারণকে খুঁজে বার করাতেই আনন্দ অর্ণবের।
০৯১৬
লকডাউনের সময় বাড়িতে বসেই ক্যামেরা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে রোজনামচার কিছু ছবি ধরা পড়ে অর্ণবের ক্যামেরায়। তবে এ বার আর পছন্দের ডিএসএলআর নয়, নিজের মোবাইলের ক্যামেরাতেই আমপানের সময় বাড়ির পাশের গাছ কাটার দৃশ্যেও খুঁজে পেয়েছেন জীবনের টান।
১০১৬
ছবির একাকিত্ব আর সারল্যই অর্ণবকে আনন্দ দেয়, তাই সাদা-কালো ছবির মধ্যে সেই একাকিত্বকে বেশি করে খুঁজে বেড়ান তিনি। এই লকডাউনের ছবিগুলোর মধ্যেও সেই ছাপ রেখে দিতে চেয়েছেন অর্ণব।
১১১৬
কোনও প্রতিষ্ঠান বা কর্মশালা নয়, বরং নিজেই নিজের আগের কাজকে ছাপিয়ে ছবি তোলার শিল্পকে আয়ত্তে আনতে চান এই শিল্পী। তাই নিয়ত কিছু বই পড়ে ও ক্যামেরার সঙ্গে সখ্য পাতিয়েই ছবির সঙ্গে মোলাকাত হয় অর্ণবের।
১২১৬
অর্ণব যেখানে জীবনের ঘটনায় ছবিকে খুঁজতে চান, আর এক ফোটোগ্রাফার রোহন চক্রবর্তী আবার জীবনের কিছু অনুভবকে আরও ভাল করে উপলব্ধি করতে ছবির শরণ নিয়ে থাকেন। এই লকডাউনের সময়েও সেই অনুভবের পিছুটানই তাঁকে ক্যামেরার পিছনে দাঁড় করায়। তাই তাঁর ক্যামেরায় এক বিন্দু জলের ফোঁটাও যেন এই অস্থিরতাতেও জ্যান্ত একটা জীবনের কথাই বলে।
১৩১৬
ছোটবেলায় পিসি কিনে দিয়েছিলেন ক্যামেরা। তার পর সেই ক্যামেরা এতই স্বজন হয়ে উঠল যে পোশা হিসেবেও ফোটোগ্রাফিকেই বেছে নিলেন রোহন। কলকাতার ছেলে বড় হয়ে পাড়ি দিলেন বাংলাদেশে। নামজাদা ফোটোগ্রাফার প্রতীক সরকার ও মুনেম ওয়াসিফের তত্বাবধানে ‘পাঠশালা’-য় শুরু হল তাঁর আরও ভাল করে ছবি তোলার হাতেখড়ি।
১৪১৬
পরে উচ্চশিক্ষার জন্য প্যারিস গেলেন রোহন। জীবনের অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো কী ভাবে আধুনিকতার কাঠামোয় ধরা দেয় সেগুলোকেই ক্যামেরাবন্দি করে রাখতে শুরু করেন রোহন। প্যারিসে পড়তে পড়তেই বিভিন্ন ওয়ার্কশপে অংশ নেওয়া এবং প্রজেক্টে কাজ করা শুরু করেন তিনি।
১৫১৬
ইউনিসেফ, ইউএনডিপি, কোয়ার্টজ গ্লোবাল, কোয়ার্টজ আফ্রিকা, ওয়ার্ল্ড রাগবি, অ্যাটলাস ফাউন্ডেশন-সহ নামজাদা নানা সংস্থার হয়ে কাজ করেছেন রোহন।
১৬১৬
প্রকৃতিকেও নিজের কাজের এক অবিচ্ছেদ্য বিষয় করে নিয়েছেন রোহন। তাঁর কাজ প্রশংসিত হয়েছে ক্যারাভান ম্যাগাজিন, মেন্টাল ফ্লস, ফোকাস, প্লিজ ম্যাগাজিন-সহ নানা পত্র-পত্রিকায়। সাদা-কালো হোক বা রঙিন, ক্যামেরার ভাষায় রোহনের জীবনের খোঁজ চলে অনন্ত।