Advertisement
E-Paper

Syndicate: ‘দাদার নির্দেশ ছাড়া একটা ইটও গাঁথার উপায় ছিল না’

মাঝে কিছুটা কমলেও দলবদলের নানা সমীকরণের জেরে ফের কি বাড়তে পারে সিন্ডিকেটের রমরমা?

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২১ ০৭:৫৮
Share
Save

‘আশীর্বাদের খাম’। মুখে মুখে এখনও ঘোরে কথাটা। যত হাতই ঘুরুক, সেই খাম যত দ্রুত জায়গা মতো পৌঁছবে, ততই বাড়বে কাজের গতি। প্রশাসনিক ঝামেলা থাকবে না। কেউ নাকও গলাবে না। দেদার চলবে যেমন খুশি দর হাঁকার সিন্ডিকেট-রাজ! কোনও রকম প্রতিবাদ হলেই নেওয়া হবে আরও বেশি দর হাঁকার ‘কড়া ব্যবস্থা’।

অভিযোগ, বিশেষ ব্যবস্থাপনায় রাজারহাট-নিউ টাউন জুড়ে এমনই রাজত্ব ফেঁদে বসেছিলেন এক নেতা-দাদা। কালে কালে তাঁর
রাজনৈতিক ক্ষমতা যত বেড়েছে, রাজারহাট-নিউ টাউন ততই ওই ব্যবসার স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে। খুব দ্রুত ইতিউতি গজিয়ে ওঠে ওই সিন্ডিকেট ব্যবসার ঘর। অভিযোগ, সেখান থেকেই নির্দেশ যেত, কোন কাজের কী দর উঠবে! স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের কাছেই ওই ঘরগুলি এখনও ‘আতঙ্কের
টুরিস্ট স্পট’।

নিউ টাউনের বহু দিনের বাসিন্দা এক ব্যক্তির মন্তব্য, ‘‘ওই দাদার নির্দেশ ছাড়া একটা ইটও গাঁথার উপায় ছিল না। নিজের উদ্যোগে বাড়ি
করতে যাওয়ার সময়ে ওই সিন্ডিকেটের ঘরে আমাদের ডেকে বলা হয়েছিল, প্রতিটি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য সিন্ডিকেটের দাদাদের এক লক্ষ টাকা করে দিতে হবে। এ ছাড়া, সেই বাড়িতে নির্মাণ সামগ্রী পাহারা দিতে নিরাপত্তাকর্মী হিসাবে রাখা লোকের খরচও দিতে হবে।’’ আর এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘নিজে বাড়ি তৈরি করলে যে খরচ হত, তার
অন্তত ২০ গুণ বেশি খরচ করে বাড়ি তৈরি করেছি। ওই বাড়তি খরচের হিসাব আমাদের সেই আতঙ্কের টুরিস্ট স্পটে বসেই শোনানো হয়েছিল। জানলার রং থেকে ফ্রেম, দেওয়ালের রং থেকে বাড়ির পাঁচিল কত ইঞ্চির হবে, সবই ঠিক হত ওই সিন্ডিকেটের দাদাদের কথায়।’’

দাদার ‘স্নেহধন্যদের’ বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল আরও অনেক। বহু নির্মাণ সংস্থারই দাবি, নিউ টাউনে প্রায় কোনও কাজই তারা শেষ করতে পারেনি পূর্ব-নির্ধারিত খরচের
হিসাবে। এমনই একটি সংস্থার এক কর্মীর কথায়, ‘‘ধরা যাক, একটি নির্মাণস্থলে বালি ফেলা হল। অথচ, রসিদ তৈরি হল তিনটি। একটি প্রকল্পে ফেলা বালি দেখিয়েই এর পরে ওই তিনটি রসিদে টাকা তোলা হল তিনটি আলাদা সংস্থা থেকে।’’ অভিযোগ, এমনও হয়েছে, বরাত পেয়ে বালি নিয়ে নির্মাণস্থলে গিয়েছেন এক সরবরাহকারী। কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেখানে পৌঁছেছে বাইকবাহিনী। সরাসরি নির্দেশ এসেছে, দাদা এই কাজ তাঁকে নয়, অন্য কাউকে করতে বলেছেন।

রাজারহাট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা প্রবীর করের অবশ্য দাবি, ‘‘কোনও এক ব্যক্তির পক্ষে এত বড় সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। সব রাজনৈতিক দলের লোকই সিন্ডিকেটের সঙ্গে সমান ভাবে যুক্ত ছিল।’’

বাম আমলে ‘ল্যান্ড লুজ়ার কোঅপারেটিভ সোসাইটি’ নামে একটি ছাতার তলায় অসংখ্য বেকার যুবক রাজারহাট-নিউ টাউনে ইমারতি দ্রব্য সরবরাহ করতেন। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পরে সেই সোসাইটিরই জায়গা নেয় ‘সিন্ডিকেট’। সময় যত গড়ায়, বেকার যুবকদের এই ব্যবসা হয়ে দাঁড়ায় রাজারহাট-নিউ টাউনের ক্ষমতার অন্যতম কেন্দ্র। রাজারহাট-নিউ টাউন বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটে জেতা এক নেতা-দাদার দল ক্রমশ ভারী হতে থাকে। ক্রমে তিনিই হয়ে ওঠেন ওই এলাকায় নির্মাণকাজের শেষ কথা। সিন্ডিকেটের সমর্থনে প্রকাশ্যে গলা ফাটাতেও শোনা যায় তাঁকে। অভিযোগ, সিন্ডিকেট নিয়ে একের পর এক অভিযোগ উঠলেও সে সময়ে প্রশাসন ছিল কার্যত নীরব দর্শক। ওই নেতা-দাদার নির্দেশে তাঁর সিন্ডিকেট বাহিনীকে একের পর এক নির্বাচন ‘পরিচালনা’ করতেও দেখা গিয়েছে। লাগাতার সমালোচনার মুখে পড়ে এর পরে পুলিশের কাছে কড়া হওয়ার নির্দেশ আসে প্রশাসনের শীর্ষ মহল থেকে। পুলিশি ধরপাকড়ে কয়েক মাসেই কার্যত দিশাহারা হয়ে পড়ে সিন্ডিকেট বাহিনী। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সে সময়েই বিধানসভায় সরব হন রাজারহাট-নিউ টাউনের তৎকালীন বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘সিন্ডিকেট ছিল, আছে, থাকবে।’’

এর পরেই আসরে নামে বিরোধীরা। সরকার পক্ষের একাংশ দাবি করে, নাম আলাদা হলেও বাম আমলেই এই সিন্ডিকেট-রাজের জন্ম। সব্যসাচী দাবি করেন, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের কথা মাথায় রেখেই তিনি সিন্ডিকেট ব্যবসার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। এর পরে বিধাননগরের মেয়র হয়েও সিন্ডিকেট নিয়ে নিজের অবস্থান বদলাননি তিনি। পরে যদিও রাজনৈতিক অবস্থান বদল করে বিজেপিতে গিয়েছিলেন, আবার তৃণমূলে ফিরেও এসেছেন। কিন্তু রাজারহাট-নিউ টাউনের সিন্ডিকেট ব্যবসার কালো অধ্যায় নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এখনও সিন্ডিকেট ব্যবসা বেআইনি নয় বলেই জানি। এই ব্যবসা বেকার যুবকদের বড় ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছিল। কিন্তু কোনও কালেই সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ী ছিলাম না।’’

এ প্রসঙ্গে বিধাননগর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, ‘‘আইন মেনে নির্মাণ ব্যবসা করাই যায়, কিন্তু সেটা যদি জোরজুলুমের পর্যায়ে যায়, তা অন্যায়। এটা অনেকটাই স্থানীয় নেতৃত্বের উপরে নির্ভর করে। রাজারহাট-নিউ টাউনের মতো এত অভিযোগ তো অন্য কোথাও শোনা যায়নি।’’

Syndicate Sujit Bose Sabyasachi Dutta Rajarhat Newtown

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।