Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Picnic in Winter

ডিসেম্বরের শেষেও উধাও শীত, তাল কাটছে পিকনিকের

গত কয়েক দিন ধরেই বঙ্গে পারদ ঊর্ধ্বমুখী। গত চার দিনে এক ধাক্কায় প্রায় ছ’ডিগ্রি বেড়েছে শহরের তাপমাত্রা। শুক্রবার ১৪.৬ ডিগ্রি থেকে মঙ্গলবার পারদ ছুঁয়েছে ২০.৭ ডিগ্রিতে।

ছুটি: ডিসেম্বরের শেষেও নেই ঠান্ডা। পাতলা জামা পরেই ময়দানে খুদে।

ছুটি: ডিসেম্বরের শেষেও নেই ঠান্ডা। পাতলা জামা পরেই ময়দানে খুদে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:১৫
Share: Save:

গরম পোশাক পরে বেরোলেও তা গায়ে রাখতে পারছেন না প্রায় কেউই। কোমরে বা কাঁধে ঠাঁই হয়েছে সেই পোশাকের। ডিসেম্বরকে ‘সম্মান’ দেখাতে শীতপোশাক যাঁরা পরেছিলেন, তাঁদের ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা। ছোট হোক বা বড়— বুধবার, পৌষের দুপুরে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে গিয়ে দেখা গেল, হাঁসফাঁস অবস্থা সকলেরই।

গত কয়েক দিন ধরেই বঙ্গে পারদ ঊর্ধ্বমুখী। গত চার দিনে এক ধাক্কায় প্রায় ছ’ডিগ্রি বেড়েছে শহরের তাপমাত্রা। শুক্রবার ১৪.৬ ডিগ্রি থেকে মঙ্গলবার পারদ ছুঁয়েছে ২০.৭ ডিগ্রিতে। স্বাভাবিকের চেয়ে যা প্রায় সাত ডিগ্রি বেশি! বুধবারও পরিস্থিতির তেমন হেরফের হয়নি। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, এ দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২০.৬ ডিগ্রি। যা স্বাভাবিকের থেকে প্রায় সাত ডিগ্রি বেশি। এর আগে, ২০০৪ সালের ২২ ডিসেম্বর শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২০.৪ ডিগ্রি ছুঁয়েছিল। চলতি বছরের ২৭ ডিসেম্বরের আগে পর্যন্ত সেটিই ছিল সর্বোচ্চ।

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, ডিসেম্বরের শেষ লগ্নে শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এত বেশি হয়নি গত ৫০ বছরে। ১৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই সাধারণত শীতের আমেজ পাওয়া যায়। অথচ এ বছর সেই সময়েই ২০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস যদিও আশ্বাস দিয়ে জানাচ্ছেন, আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা ৫-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস নামার পূর্বাভাস রয়েছে। বর্ষশেষে শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিক, অর্থাৎ ১৪-১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসবে।

বড়দিনের পর থেকে নতুন বছরের শুরুর প্রথম দু’সপ্তাহ পর্যন্ত মূলত শীতের উৎসবে পথে বেরোন মানুষ। সেই মতো এ দিনও যথেষ্ট ভিড় ছিল চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, জাদুঘর, প্রিন্সেপ ঘাট, ময়দানে। উল্লেখ করার মতো ভিড় ছিল নিউ টাউনের বিনোদন পার্ক, ইকো পার্ক, নিক্কো পার্কে। কোথাও কোথাও দর্শকের উপস্থিতি এখনই দৈনিক ৩০-৪০ হাজার বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

ভিড় টানছে ইএম বাইপাসের ধারে ভেড়ি সংলগ্ন পিকনিক স্পটগুলিও। তেমনই এক জায়গায় গিয়ে দেখা গেল, শীতবস্ত্রের বালাই নেই অধিকাংশের। বাইপাসের সুকান্তনগর লাগোয়া একটি ভেড়ির কাছে পিকনিক করতে আসা হাবড়ার বাসিন্দা এক তরুণী বললেন, ‘‘সকালে জ্যাকেট পরে বেরিয়েছিলাম। বাসেও গায়ে জ্যাকেট ছিল। কলকাতায় নেমে বুঝলাম, ওটা না খুললে গরমে মরে যাব। শীতে পিকনিক হচ্ছে, না কি বসন্তে, বোঝা দায়!’’ আর এক যুবক বললেন, ‘‘এমন গরম পড়বে জানলে কি পিকনিকে আসতাম? নেহাত টাকা দিয়ে সব ঠিক হয়ে গিয়েছে, তাই আসতে হল।’’

ময়দানে পরিবার নিয়ে হাজির স্কুলশিক্ষিকা সুপর্ণা দত্তগুপ্ত। শিক্ষিকসুলভ ভঙ্গিতে বললেন, ‘‘আমেরিকা বিধ্বস্ত সাইক্লোন বোমায়। ঠান্ডায় কাঁপছে উত্তর ভারত। কিন্তু বাংলায় শীতেও শীতের দেখা নেই! তবু এর মধ্যেও যতটুকু আনন্দ করা যায়, করছি।’’ ময়দানে পিকনিকে এসে নাতির সঙ্গে গল্পে মশগুল অসীমা সাহা বললেন, ‘‘সত্তরের কাছাকাছি বয়স হল। এত গরমের ২৮ ডিসেম্বর কবে দেখেছি, মনে পড়ে না। ছেলেমেয়েরা বলছে, জানুয়ারিতে আবার পিকনিক করবে। তখনও ঠান্ডা না পড়লে, আর গরমের পোশাক বয়ে আনা হবে না।’’

তখন সন্ধ্যা নামছে। হালকা ঠান্ডা হাওয়া গায়ে লাগতেই পিকনিক ফেরত এক সদস্যের মন্তব্য, ‘‘দিনভর গরমে হুটোপাটি করে এখন একটু আরাম লাগছে। তবে শীতের নয়, এ যেন ফাগুন হাওয়া।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Picnic in Winter Rising temperature December
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy