সুদেষ্ণা ভৌমিক
এক কলেজছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে পর্ণশ্রী থানা এলাকার মায়া দাসী রোডে। মৃতার নাম সুদেষ্ণা ভৌমিক (২১)। তিনি নিউ আলিপুর কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সুদেষ্ণা কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পরে রাতে খাওয়ার সময়ে তাঁর সঙ্গে মায়ের মনোমালিন্য হয়। সুদেষ্ণা জানান, পড়ার চাপের কারণে তিনি খেতে পারবেন না। এর জন্য মেয়েকে সামান্য বকাবকি করেন মা। এর পরেই ওই ছাত্রী ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। শুক্রবার সকাল ছ’টা নাগাদ মা মঞ্জুলাদেবী মেয়ের ঘরে ঢুকতে গিয়ে দেখেন, দরজা-জানলা বন্ধ। অনেক ডেকেও সাড়া না মেলায় সন্দেহ হয় তাঁর। জানলার ফাঁক দিয়ে দেখেন, সিলিং ফ্যান থেকে মেয়ে ঝুলছে। বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে সুদেষ্ণাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পুলিশের অনুমান, আত্মঘাতী হয়েছেন ওই ছাত্রী।
মেধাবী ওই ছাত্রীর এমন মৃত্যু কিছুতেই মানতে পারছেন না প্রতিবেশীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, পড়াশোনা নিয়েই থাকতেন সুদেষ্ণা। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সামনে পরীক্ষা থাকায় ইদানীং পড়া নিয়ে চাপে ছিলেন ওই ছাত্রী। মঞ্জুলাদেবী জানান, আগামী ৫ জুলাই থেকে তাঁর মেয়ের অফলাইনে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। সে জন্য গত কয়েক দিন পড়া নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলেন সুদেষ্ণা। খাওয়াদাওয়াও খুব কমিয়ে দিয়েছিলেন। মঞ্জুলাদেবী বলেন, ‘‘বুধবার মেয়ে রাত জেগে পড়েছে। ভোর পাঁচটা পর্যন্ত পড়ে ঘণ্টাখানেক ঘুমোয়। তার পরে উঠে আবার বই নিয়ে বসেছিল। বেলায় কলেজ যায়। বলছিল, দ্রুত প্রজেক্ট রিপোর্ট শেষ করতে হবে।’’
এ দিন ওই ছাত্রীর বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, বিছানায় তখনও ছড়ানো বইপত্র। মঞ্জুলাদেবী বলেন, ‘‘মেয়েকে বলতাম, শুধু পড়লে হবে? ঠিক মতো খাওয়াদাওয়াও তো করতে হবে। কিন্তু গত কয়েক দিন ও একদম খেতে চাইছিল না। বৃহস্পতিবার রাতে না খাওয়া নিয়ে ওকে একটু বকেছিলাম। রাতে শুধু বিস্কুট খেয়ে ছিল। পড়া নিয়ে ওর এত কী চাপ হল?’’
তাঁদের ছাত্রীর এমন খবরে স্তম্ভিত নিউ আলিপুর কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান নীলাঞ্জনা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘সুদেষ্ণা অনলাইন পরীক্ষায় খুবই ভাল ফল করেছিল। অফলাইন পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। নিয়মিত কলেজে আসত এবং ক্লাস করত। ওর মধ্যে কোনও ধরনের অবসাদ আমরা দেখিনি। পড়াশোনা নিয়ে চাপের কথাও কোনও দিন বলেনি।’’ কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁদের কোনও পড়ুয়া অবসাদে থাকলে কলেজের তরফেই তাঁর কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। ওই ছাত্রী পড়া নিয়ে চাপে থাকার কথা জানালে তাঁর জন্যও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হত। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, সুদেষ্ণা যে পড়ার চাপের কারণেই এমন ঘটিয়েছেন, তা মনে করেন না তাঁরা। এ দিন ওই ছাত্রীর বাড়িতে যান কলেজের অধ্যক্ষা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
পর্ণশ্রীর মায়া দাসী রোডে সুদেষ্ণাদের দোতলা বাড়ি। দোতলায় থাকেন সুদেষ্ণারা। একতলা ভাড়া দেওয়া। সুদেষ্ণার বাবা তাপস ভৌমিক ২০২০ সালে মারা যান। ভাই রাজর্ষি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তাপসবাবুর মৃত্যুর পরে বাড়ির ভাড়া থেকেই সংসার চলত সুদেষ্ণাদের। তাঁর মামা রাজু পাল বলেন, ‘‘প্রথমে মারা গেলেন জামাইবাবু, এখন ভাগ্নি। দিদি কী নিয়ে বাঁচবে? ছেলেটা কত ছোট।’’
পুলিশ জানিয়েছে, ওই ছাত্রীর দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলেই মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy