ফাইল চিত্র
শহরের এক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একটি বিভাগ থেকে গত মে মাসে ইস্তফা দিয়েছিলেন আট জন চিকিৎসক। ওই বিভাগের অর্ধেকেরও বেশি চিকিৎসকের ইস্তফায় যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, প্রায় দু’মাস পরেও সেই ঘাটতি মিটিয়ে উঠতে পারেননি কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে ‘অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনিকলজিক্যাল’-এর অন্তর্বিভাগ এখনও চালু করা যায়নি। প্রায় দু’মাস ধরে সেখানে বন্ধ প্রসূতি এবং স্ত্রী-রোগে আক্রান্তদের ভর্তি। জুন মাস থেকে শুরু হয়েছে বহির্বিভাগটি। কিন্তু বিভাগীয় প্রধান-সহ পাঁচ জন শিক্ষক-চিকিৎসক নিয়ে বহির্বিভাগেও রোগী দেখা যে ক্রমশ কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তা মানছেন বর্তমান চিকিৎসকেরা।
হাসপাতালের কোভিড ও অন্য রোগের পরিষেবা নিয়ে আলোচনার জন্য বুধবার ফের বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ এবং প্রশাসনিক স্তরের কর্তারা। যেখানে স্ত্রী-রোগ বিভাগের পরিষেবা পুরোদমে শুরু করা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে খবর। দ্রুত স্ত্রী-রোগ বিভাগে পরিষেবা শুরুর আশ্বাস আগেও দেওয়া হয়েছিল। এ দিনের বৈঠকেও ফের সেই আশ্বাস দেওয়া হয়। তবে দু’জন মাত্র আরএমও দিয়ে যে তা কোনও মতেই সম্ভব নয়, সে কথা মানছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসকেরা। অভাব রয়েছে শিশু-রোগ চিকিৎসকেরও।
এ দিকে দীর্ঘদিন ধরে পরিষেবা বন্ধ থাকায় নাকাল হতে হচ্ছে রোগীদের। দিন কয়েক আগে আজাদগড়ের বাসিন্দা সোনালি কর্মকারকে নিয়ে ওই হাসপাতালের স্ত্রী-রোগের বহির্বিভাগে যায় তাঁর পরিবার। পরিবার সূত্রের খবর, চিকিৎসক ওই প্রসূতিকে দেখার পরে কোনও সরকারি হাসপাতালে টিকিট করিয়ে রাখার কথা বলেছেন। এতেই বিপদে পড়েছে কর্মকার পরিবার। কারণ, করোনা আবহে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক সরকারি হাসপাতালের দরজা। এমন পরিস্থিতিতে সোনালির চিকিৎসা কোথায় হবে, সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁরা।
অথচ ১৫০ শয্যার কোভিড হাসপাতালের পাশাপাশি নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও রয়েছে এই কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এই মুহূর্তে নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা মসৃণ রাখতে এই পরিষেবা চালু থাকা খুবই জরুরি। চিকিৎসকদের একটি অংশের অভিযোগ, এ বিষয়ে হাসপাতাল প্রশাসন প্রয়োজনীয় তৎপরতা দেখায়নি। চিকিৎসকদের ইস্তফার সময়ে কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয়েছিল, ‘কয়েক জন প্রসূতি কোভিড পজ়িটিভ হওয়ায় ডাক্তারদের এই ইস্তফা। কারণ তাঁদের বাড়িতেও বয়স্করা আছেন।’ সেই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ ওই চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, হাসপাতালের বাইরে রোগী দেখা এবং অস্ত্রোপচার করে চলেছেন তাঁরা এখনও। এমনকি তাঁদের মধ্যে কয়েক জন কোভিড হাসপাতালের সঙ্গেও যুক্ত আছেন। এক চিকিৎসকের কথায়, “আমার বাবার বয়স ৭৫। স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক হিসেবে তিনি এখনও অস্ত্রোপচার করছেন। সুতরাং কোভিড নিয়ে আমরা আতঙ্কিত নই। বরং সামনে থেকে লড়ছি। ইস্তফার এই যুক্তি কর্তৃপক্ষের সম্পূর্ণ নিজস্ব। যা আমাদের পক্ষে অসম্মানের।”
তবে তিন জন প্রসূতির কোভিড পজ়িটিভের রিপোর্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে চিকিৎসকদের কেন দেরিতে জানানো হয়, এ নিয়েই যে মূল ক্ষোভ ও ইস্তফা— তা মানছেন ডাক্তারদের একটি অংশ। তথ্য দেরিতে জানানোর কারণে পরে ৪০ জন ডাক্তার, নার্স এবং কর্মীকে কোয়রান্টিনে যেতে হয়।
ওই হাসপাতালের অধ্যক্ষ অশোককুমার ভদ্র বলছেন, “পুরনো বিষয় নিয়ে কিছু বলব না। এখনকার সমস্যা নিয়ে উত্তর দিতে পারব। যে হেতু এটি সরকারি নয়, ফলে ছাত্র এবং রোগী-ভর্তির উপরেই আয় নির্ভর করছে। বিভাগ বন্ধ থাকলে হাসপাতালের ক্ষতি। তাই যে অভাব রয়েছে, সেই ঘাটতি মিটিয়ে দ্রুত পরিষেবা শুরুর চেষ্টা করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy