Advertisement
E-Paper

শহরের জনসংখ্যা বাড়ে, বাড়ে না জঞ্জালের পরিমাণ!

জঞ্জালের প্রক্রিয়াকরণ যথাযথ হয় না কলকাতায়। কারণ, গোড়াতেই যে গলদ। এমনটাই বক্তব্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৩৪
Share
Save

জনসংখ্যা বাড়ে। অথচ, উৎপাদিত জঞ্জালের মোট পরিমাণ অপরিবর্তিতই থাকে। তাই জঞ্জালের প্রক্রিয়াকরণও যথাযথ হয় না কলকাতায়। কারণ, গোড়াতেই যে গলদ। এমনটাই বক্তব্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের।

পরিবেশবিজ্ঞানীদের মতে, জঞ্জালের পরিমাণ নির্ধারিত করা না পর্যন্ত জঞ্জাল ব্যবস্থাপনাও ঠিকমতো করা সম্ভব নয়। কারণ, দৈনিক জঞ্জালের পরিমাণের উপরেই তো নির্ভর করে কী ভাবে তার প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব। কিন্তু কলকাতায় সেই সাধারণ সূত্রটি অনুসরণ করা হয় কি? না হলে কী ভাবে বছরের পর বছর ধরে শহরের দৈনিক জঞ্জালের পরিমাণ ৪৫০০ টনই থেকে যায়?

পরিবেশ গবেষণাকারী সংস্থা ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’-এর (সিএসই) রিপোর্ট বলছে, ছোট শহরে জঞ্জালের পরিমাণ হল দৈনিক মাথাপিছু ৩০০ গ্রাম। আর কলকাতার মতো বড় শহরের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ দৈনিক প্রায় ৫০০ গ্রাম। এখন ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৪৫ লক্ষ। পুরসভার নথি অনুযায়ী, শহরে দৈনিক জঞ্জালের পরিমাণ ৪৫০০ টন। যা গত কয়েক বছর ধরে একই রয়ে গিয়েছে।

কিন্তু কী ভাবে? পুরসভার জঞ্জাল সাফাই দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদারের কথায়, ‘‘জঞ্জাল প্রথমে কম্প্যাক্টরে তুলে জড়ো করার ফলে তা থেকে জলীয় পদার্থ বেরিয়ে যায়। সেই কারণে জঞ্জালের ওজন কমে যায়। তা ছাড়া, কলকাতার জনসংখ্যা তো বাড়েনি সেই অর্থে। বাড়লে জঞ্জালের পরিমাণও বাড়ত।’’

তবে মেয়র পারিষদ এই দাবি করলে কী হবে, রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘ওয়ার্ল্ড পপুলেশন প্রসপেক্টস’ অনুযায়ী কলকাতার বর্তমান সম্ভাব্য জনসংখ্যা হল ১.৪৯ কোটি। আবার ‘ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ’-র রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালে (শনিবার সন্ধে ৭টা পর্যন্ত) কলকাতার জনসংখ্যা ১ কোটি ৫১ লক্ষ ৩৩ হাজার ৮৮৮। অর্থাৎ, দু’টি ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যে, ২০১১ সালের তুলনায় কলকাতার জনসংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। যদিও পুরসভার ওয়েবসাইটে দৈনিক জঞ্জালের পরিমাণে তার কোনও প্রতিফলন ধরা পড়েনি।

অবশ্য দৈনিক জঞ্জাল উৎপাদন নিয়ে করা কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং বিশ্ব ব্যাঙ্কের পৃথক সমীক্ষা রিপোর্টের বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, শুধু কলকাতাই নয়, সারা দেশের দৈনিক জঞ্জালের পরিমাণের ক্ষেত্রেই এই অসঙ্গতি রয়েছে। কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের দৈনিক জঞ্জালের পরিমাণ প্রায় ১.৫ লক্ষ টন। সেখানে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রকৃত জঞ্জালের পরিমাণ এর প্রায় পাঁচ গুণ বেশি!

যার পরিপ্রেক্ষিতে এক বিশেষজ্ঞ বলছেন, ‘‘শুধু দৈনিক জঞ্জালের পরিমাণে নয়, যে কোনও ক্ষেত্রেই সরকারি তথ্য এবং বেসরকারি অথবা অন্য সমীক্ষক বা গবেষণাকারী সংস্থার তথ্যের মধ্যে ফারাক থাকে।’’ আর এক পরিবেশবিজ্ঞানী জানাচ্ছেন, প্রত্যেক ভারতীয় বছরে গড়ে নিজের ওজনের সাড়ে তিন গুণ জঞ্জাল উৎপন্ন করেন। তার কতটা অংশ ভাগাড়ে ফেলা যাবে, কতটা নয়, সেই হিসেব আগে করা দরকার। তাঁর কথায়, ‘‘এই পার্থক্য ঠিক মতো না করতে পারলে ভাগাড়ের জমি পাওয়াটাই দুষ্কর হয়ে যাবে। যেমনটা কলকাতার ক্ষেত্রে হচ্ছে! ধাপায় জঞ্জাল ফেলার জায়গা পাওয়া না গেলেও বিকল্প ভাগাড় এখনও জোগাড় করে ওঠা যাচ্ছে না।’’

কারণ, তথ্যের গোলকধাঁধাতেই জঞ্জালের প্রক্রিয়াকরণের সমাধান হারিয়ে গিয়েছে, বলছেন বিশেষজ্ঞেরা!

garbage

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}