আগামী পাঁচ-সাত বছর পরে রাজ্যে কার্ডিয়োথোরাসিকের চিকিৎসক তৈরি হবে তো? প্রতীকী ছবি।
আগামী পাঁচ-সাত বছর পরে রাজ্যে কার্ডিয়োথোরাসিকের চিকিৎসক তৈরি হবে তো? এই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য মহলে। কারণ, রাজ্যের যে চারটি মেডিক্যাল কলেজে কার্ডিয়োথোরাসিক ও ভাস্কুলার সার্জারি (সিটিভিএস) বিভাগের এমসিএইচ স্তরের পঠনপাঠনহয়, সেখানে এই মুহূর্তে এসএসকেএম ছাড়া অন্য কোথাও পড়ুয়া নেই। ফলে, কয়েক বছর পরে হৃদ্রোগের জটিল অস্ত্রোপচারের (কার্ডিয়োথোরাসিক শল্য চিকিৎসা) জন্য রাজ্যের রোগীরা যদি কোনও তরুণ চিকিৎসকের কাছে যেতে চান, তা হলে কার কাছে যাবেন, সেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এসএসকেএম, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ এবং আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে এমসিএইচ কোর্সে মোট আসন রয়েছে ২০টি। কিন্তু ২০১৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ভর্তির পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, কোনও বছরেই ওই চারটি মেডিক্যাল কলেজ মিলিয়ে অর্ধেক আসনও ভর্তি হয়নি। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। প্রতি বছর ২০টি করে আসনের হিসাবে শেষ পাঁচ বছরে মোট আসন ১০০টি। সেখানে ভর্তি হয়েছেন মেরেকেটে ১৯ জন।’’ সমস্যা মেটাতে ওই সমস্ত মেডিক্যাল কলেজে এমসিএইচের বদলে ‘ডক্টরেট অব ন্যাশনাল বোর্ড’ (ডিআরএনবি) পাঠক্রম চালুর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের দাবি, এমবিবিএস পাশ করলেই একটি পরীক্ষার মাধ্যমে সরাসরি ছ’বছরের ওই পাঠক্রমে ভর্তি হওয়া যায়। যে কারণে আমেরিকায় সাফল্যের সঙ্গে ওই কোর্স চালু করা গিয়েছে। কিছু বেসরকারি হাসপাতালে এই পাঠক্রম চালু রয়েছে।
জানা যাচ্ছে, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং আর জি কর কর্তৃপক্ষের তরফে ‘ডিআরএনবি’ কোর্স চালু করার জন্য ন্যাশনাল বোর্ড অব এগ্জ়ামিনেশনের কাছে ইতিমধ্যেই আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু শেষ দু’-তিন বছরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে সিটিভিএস বিভাগে জটিল অস্ত্রোপচারের সংখ্যা কম কেন, তা নিয়ে ন্যাশনাল বোর্ড অব এগ্জ়ামিনেশনের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কলকাতা মেডিক্যালের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাসের কথায়, ‘‘পুরো হাসপাতালে দু’বছর করোনা রোগীদের চিকিৎসা হয়েছে। সেই কারণে অস্ত্রোপচারের সংখ্যা কিছু কম ছিল। বিষয়টি ওদের জানানো হয়েছে। আশা করছি, শীঘ্রই অনুমোদন মিলবে।’’ শহরের ঐতিহ্যবাহী ওই মেডিক্যাল কলেজে এক সময়ে হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন হয়েছে। সেখানেই এখন পড়ুয়া নেই! পিজি ছাড়া বাকি কোথাও নেই পিডিটি (পোস্ট ডক্টরাল ট্রেনি)।
পড়ুয়াদের আগ্রহ কমার পিছনে নিয়মের দীর্ঘ সময় একটা বড় কারণ বলেও দাবি চিকিৎসকদের অধিকাংশের। তাঁরা জানাচ্ছেন, ধরা যাক, ১৮ বছর বয়সে এক জন এমবিবিএস পড়ার সুযোগ পেলেন। পাঁচ বছর পরে পাশ করে তিনিআরও এক বছর ইন্টার্নশিপ করলেন। তার পরে আরও অন্তত এক বছর প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে এমএস পড়ার সুযোগ পেলেন। তিন বছর পরে পাশ করে আবার এক বছর প্রস্তুতি নিয়ে ওই চিকিৎসক এমসিএইচের প্রবেশিকা পরীক্ষা দিলেন। তিন বছর পরে সেই কোর্স পাশ করে বেরোলেন। দেখা যাচ্ছে, এমবিবিএস পড়ার সুযোগ পাওয়া থেকে এমসিএইচ পাশ করে সিটিভিএস-এর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হতেই ১৪ বছর সময় লেগে গেল।
আর, যদি কেউ সরকারি হাসপাতালে পড়াশোনা করেন, তাঁকে বন্ড সার্ভিসে এমএস ও এমসিএইচ পাশ করার পরে তিন বছর করেদু’বার সিনিয়র রেসিডেন্ট থাকতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে মোট ২০ বছর সময় লাগছে। এক অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘প্রথমত, এক বারে এমএসে সুযোগ পাওয়া খুবই মুশকিল। তা-ও যদি সুযোগ পান, তা হলে ৩৮ বছর বয়সে গিয়ে মেধাসম্পন্ন ওই চিকিৎসককে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে সরকারি হাসপাতালে মাসিক ৮০ হাজার টাকা বেতনে এসআর হতে হচ্ছে। সেখানে বেসরকারিতে কয়েক লক্ষ টাকা বেতনের হাতছানি থাকছে। এই সব কারণেই এখনকার প্রজন্ম এড়িয়ে যাচ্ছে।’’
কার্ডিয়োথোরাসিক ও ভাস্কুলার শল্য চিকিৎসক কুণাল সরকার জানাচ্ছেন, হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে সাধারণ কোনও বাধা থাকলে মানুষ এখন অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টির দিকেই বেশি ঝুঁকছেন। ফলে, বাইপাস অস্ত্রোপচারের চাহিদা কমেছে। কিন্তু হৃৎপিণ্ডের ধমনীর জটিল সমস্যা বা হৃৎপিণ্ডের জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মানো শিশুদের অস্ত্রোপচারে প্রয়োজন সিটিভিএস বিশেষজ্ঞদের। তাঁর কথায়, ‘‘মেডিক্যাল শিক্ষার বিষয়টি যাঁদের নজরে রয়েছে, তাঁদের বাস্তব পরিস্থিতির ফলাফল আঁচ করে ব্যবস্থা নিতে হবে। ওই কোর্সের পড়ুয়াদের উৎসাহভাতা দেওয়া যেতে পারে। না-হলে ভবিষ্যতে জটিল সমস্যা ও শিশুদের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করবেন কে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy