রাজ্য জুড়ে দমকলের গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দফতরের নিজস্ব কারখানা ছিল পাঁচটি। শিলিগুড়ি, দুর্গাপুর, হাওড়া ও ব্যারাকপুরের কারখানাগুলি আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ বার ধর্মতলার ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে দমকলের সদর দফতরে থাকা কেন্দ্রীয় কারখানাটিও কর্মীর অভাবে বন্ধ হয়ে গেল। অথচ ব্রিটিশ আমলে চালু হওয়া এই কারখানায় লোকবল একদা ভাল ছিল। মেকানিক, অটো ইলেকট্রিশিয়ান, মেট (হেল্পার) ইত্যাদি পদ মিলিয়ে প্রায় ১৩০ জন কর্মী ছিলেন। ২০১০ সালের পরে কর্মীরা অবসর নিলেও নিয়োগ না হওয়ায় প্রাচীন প্রতিষ্ঠানটি শেষ হওয়ার মুখে।
২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে কয়েক হাজার দমকলের গাড়ি কেনা হয়। আগুন নেভাতে সরু রাস্তা দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছতে কেনা হয়েছে একাধিক মোটরবাইক, বেড়েছে দমকল কেন্দ্র। বর্তমানে রাজ্যে দমকল কেন্দ্র রয়েছে ১৭০টি। কিন্তু গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দমকলের সদর দফতরের একমাত্র কারখানাটি বন্ধ। কোনও মতে কাজ চালাতে বিভিন্ন দমকল কেন্দ্র থেকে চার জনকে এনে সেখানে রাখা হয়েছে। কারখানা দেখাশোনার জন্য এক পদস্থ আধিকারিকও রয়েছেন। তবে পরিস্থিতি এমনই যে, কোনও গাড়ি মেরামতির জন্য অনুমতি নিতে হলে তিনি কোনও বেসরকারি সংস্থা থেকে গাড়ি সারাই করে আনতে বলছেন।
দমকলের আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এখন গাড়ির সংখ্যা বাড়লেও নিয়মিত পরীক্ষার বালাই নেই। দমকল সূত্রের খবর, বছর কয়েক আগে গঙ্গাসাগর মেলায় আপৎকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলায় কলকাতা থেকে প্রায় ১৫টি গাড়ি পাঠানো হয়েছিল। পরীক্ষামূলক ভাবে চালাতে গিয়ে তার অনেকগুলিই বিকল হয়ে পড়ে। একটির গিয়ারে সমস্যা দেখা যায়, একটির ব্যাটারি চার্জার খারাপ হয়ে গিয়েছিল। একটির ডিজ়েল ফিল্টার কাজ না করায় ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। অপর একটি গাড়ির চাকার ব্রেকে গোলমাল ধরা পড়ে। দমকল সূত্রের খবর, সদর দফতরের কারখানা থেকে তিন জন কর্মীকে গাড়িগুলি সারাতে সে বার গঙ্গাসাগরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
দমকল আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, আগুন নেভাতে গিয়ে গাড়ির ইঞ্জিন বিকল হওয়া নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ নিয়মিত না হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। এক দমকল আধিকারিকের পর্যবেক্ষণ, ‘‘সেন্ট্রাল ওয়ার্কশপ চালু থাকলে গাড়িগুলি পরীক্ষা করাতে সুবিধা হত। কিন্তু কর্মীর অভাবে দমকলের কোনও গাড়ির পরীক্ষা হয় না। ফলে গাড়ি খারাপ হলে তবেই টনক নড়ে।’’ দমকল সূত্রের খবর, বর্তমানে বিকল গাড়ি সারাতে বাইরের ঠিকাদার সংস্থা নিয়োগ করা হয়েছে। এক দমকলকর্মীর দাবি, ‘‘বাইরের মিস্ত্রিদের কাজে খামতি থেকে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সারাতে দেরি হচ্ছে।’’
সমস্যার কথা স্বীকার করে দমকলের ডিজি সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওয়ার্কশপটির ঐতিহ্য অবশ্যই রয়েছে। এখনও দমকলের কিছু গাড়ি রয়েছে, যেগুলি সাধারণ মানের। লোক নিয়োগের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেব।’’ যদিও ডিজি-র দাবি, ‘‘বর্তমানে বেশির ভাগ দমকলের গাড়ি আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন। ইঞ্জিন মেরামতি ও রক্ষণাবেক্ষণের চুক্তি হয় সেই সংস্থার সঙ্গেই। ফলে নতুন গাড়ির জন্য কেন্দ্রীয় কারখানার প্রয়োজন পড়ে না।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)