দৌড়: চলছে ক্রিকেট প্রতিযোগিতা। শুক্রবার, ঠাকুরপুকুরের কলাগাছিয়া কৈলাস কামিনী হাইস্কুলে। নিজস্ব চিত্র।
দোতলা স্কুলবাড়ির পড়ুয়াদের মধ্যে ছাত্রেরা যেমন আছে, ছাত্রীরাও আছে। যথেষ্ট কড়া অনুশাসনও রয়েছে। তা সত্ত্বেও শুক্রবার যেন সব শ্রেণিকক্ষের ব্ল্যাকবোর্ড ঘুরে গিয়েছিল বারান্দার সামনের মাঠের দিকে। সেই বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়ানো ছেলেমেয়েরাও লুকিয়ে-চুরিয়ে নয়, বরং গর্বিত চোখেই তারিয়ে তারিয়ে দেখছিল সহপাঠিনীদের ক্রিকেট খেলা। বাউন্ডারি লাইনের বাইরে বল গেলেই হাততালির ঝড়। আর এ সবের জন্য তাদের মোটেও তিরস্কার জোটেনি।
বরং ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গলাতেও উচ্ছ্বাস টের পাওয়া যাচ্ছিল। তাঁদের অনেকে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না, এক পাতলা হিলহিলে মেয়ে এত জোরে ব্যাটটা ঘোরাতে পারে! আর মেয়েদের খেলা দেখে ছাত্রেরা তো প্রায় ঠিকই করে ফেলল, এ বার মেয়েদের সঙ্গে এক দিন ক্রিকেট ম্যাচ না খেললেই নয়।
ঠাকুরপুকুরের মহেশতলা ব্লকের অন্তর্গত কলাগাছিয়া কৈলাস কামিনী হাইস্কুলে (উচ্চ মাধ্যমিক) গত কয়েক মাস ধরেই মেয়েদের ক্রিকেটের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছিল। শিক্ষিকারা অনুধাবন করেছিলেন, অনেক মেয়েরই ক্রিকেটে উৎসাহ আছে। তাদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করায় দেখা যায়, অনেকেই ভাল খেলছে। প্রধান শিক্ষিকা চিত্রিতা মজুমদার জানান, স্কুলের বেশির ভাগ পড়ুয়াই নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে এসেছে। ছাত্রদের অনেকে স্কুলে না খেললেও পাড়ায় ক্রিকেট খেলার সুযোগ পায়। কিন্তু সামাজিক বৈষম্যের কারণেই ছাত্রীদের সেই ইচ্ছে থাকলেও সুযোগ হয় না।
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কথায়, এমন অনেক মেয়ে আছে, যারা পড়াশোনায় তেমন ভাল নয়, কিন্তু খেলাধুলোয় ভাল। তাই পড়াশোনার বাইরেও মেয়েদের বিকল্প পেশার খোঁজ দিতে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ ভাল ভাবে শুরু করার কথা ভাবে স্কুল। কয়েক মাস ধরে প্রশিক্ষণ চলেছে। কার, কতটুকু কী শেখা হল, তা দেখতেই শুক্রবার আয়োজন হয়েছিল দিনভর টুর্নামেন্টের। অনূর্ধ্ব ১৫ বছর এবং অনূর্ধ্ব ১৭ বছরের মেয়েদের দু’টি করে দল ছিল। অনূর্ধ্ব ১৫ বছরের জয়ী দলের সঙ্গে অনূর্ধ্ব ১৭ বছরের জয়ী দলের ফাইনাল পর্ব হল।
ক্রিকেট টুর্নামেন্ট মেয়েদের হলেও সাহায্য করতে পিছপা হয়নি সহপাঠীরা। বাইরে থেকে যেমন তারা উৎসাহ দিয়েছে, তেমনই মাঠে নেমে পিচ তৈরি করতেও সাহায্য করেছে ছাত্রেরা। স্কোরবোর্ডের দ্রুত পরিবর্তন তারাই হাতে লিখে দিয়েছে। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীরা অনূর্ধ্ব পনেরোর দলে ছিল। অনূর্ধ্ব সতেরোর দলে নবম, দশম ও একাদশের ছাত্রীরা ছিল।
প্রথম দু’টি খেলা আট ওভারের হলেও ফাইনাল ছিল ছয় ওভারের। শেষমেশ জয়ী হল অনূর্ধ্ব সতেরো। শিক্ষিকাদের মতে, সপ্তম শ্রেণির স্নেহা কুমারী, নবম শ্রেণির পাপিয়া মণ্ডল এবং অষ্টম শ্রেণির দিয়া হাম্বিরের খেলায় দক্ষতা সকলের নজর কেড়েছে। ফাইনালে হাড্ডাহাড্ডি খেলা দেখতে দেখতে চিত্রিতা বলে ওঠেন, ‘‘এদের কারও কারও খেলা দেখে মনে হচ্ছিল, এক-এক জন না-কাটা হিরে। এদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে পারলে হয়তো অনেক উন্নতি করবে।
এই মেয়েরা ক্রিকেট খেলে কতটা সাড়া ফেলবে, তা ভবিষ্যৎ বলবে। তবে এ দিন থেকেই সেই লক্ষ্য ছুঁতে স্বপ্ন দেখা শুরু করল হয়তো কেউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy