থমকে: বৃষ্টিতে বন্ধ কাজ। ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে মণ্ডপের একাংশ। বুধবার, ত্রিধারা সম্মিলনীতে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
কেউ মণ্ডপ তৈরি করাবেন কি, লোক লাগিয়ে পার্কের মাঠের কাদা-জল পরিষ্কার করাতেই ব্যস্ত। কেউ গোটা মণ্ডপ ঢেকে ফেললেও কাজ উতরোতে পারছেন না, কিছুই শুকোচ্ছে না বলে! অনেকে মণ্ডপসজ্জার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, আলোর কাজ এখনও শুরুই করতে পারেননি, জলের মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কায়। বেশির ভাগ জায়গাতেই মণ্ডপের বাইরের অংশের কাজ শুরুই করা যায়নি। স্টুডিয়োয় বসে কাজ করে নিয়ে এসে মণ্ডপে জুড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন যাঁরা, মাথায় হাত তাঁদেরও! সকলেই জানতে চান, বৃষ্টি ধরবে কবে!
টানা বৃষ্টিতে কলকাতার অধিকাংশ পুজোর উদ্যোক্তাদের এমনই অবস্থা বলে খবর। মঙ্গলবার রাত থেকে চলতে থাকা বৃষ্টির জেরে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। সব চেয়ে বেশি চিন্তায় পড়েছেন কলকাতার সেই সমস্ত পুজোর উদ্যোক্তারা, যেগুলিতে ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের যাওয়ার কথা। কারণ, ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১১ থেকে ১৪ তারিখের মধ্যে শহরের ২৬টি পুজো দেখার কথা ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের। এর জন্য যে সমস্ত পুজোকে বাছা হয়েছে, তাদের ১০ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। যে সংস্থার সাহায্যে ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের পুজো ঘুরে দেখার কথা, তারা ১১ তারিখ থেকে সংশ্লিষ্ট ওই সমস্ত পুজো মণ্ডপে নিজেরা তদারকি করবে। কিন্তু যে হারে বৃষ্টি চলছে, তাতে অন্য পুজোগুলি তো বটেই, তালিকায় থাকা বহু মণ্ডপও কূলকিনারা পাচ্ছে না।
ওই তালিকায় থাকা এমনই একটি পুজো ত্রিধারা সম্মিলনী। সেখানকার পুজোকর্তা দেবাশিস কুমার বললেন, ‘‘কী যে হবে, ভেবে পাচ্ছি না। চিন্তায় ঘুম হচ্ছে না। একে আমাদের পুজো হয় রাস্তায়, তার মধ্যে বৃষ্টি কমার নাম নেই! বিশ্বের দরবারে এ বার বৃষ্টির জন্য না মাথা নিচু হয়ে যায়!’’ ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সাধারণ সম্পাদক তথা হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজোকর্তা শাশ্বত বসু বললেন, ‘‘কিছুতেই কিছু করে উঠতে পারছি না। সকালে যে কাজ হচ্ছে, সন্ধ্যা আর রাতের বৃষ্টিতে তা ধুয়ে যাচ্ছে। আলোর পরীক্ষাই করিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। করোনাসুরকে বধ করে ঘুরে দাঁড়ানো গেলেও বৃষ্টির সঙ্গে পেরে ওঠা যাচ্ছে না।’’
জোরকদমে প্রস্তুতি চালানো বালিগঞ্জ কালচারালের পুজোকর্তা অঞ্জন উকিলের আবার দাবি, ‘‘সমস্তটা ঢেকে রেখেও সুরাহা হচ্ছে না। বৃষ্টির মধ্যে শ্রমিকদের বাঁশে উঠিয়ে কাজ করানো যাচ্ছে না। কেউ পড়ে গেলে হবে অন্য বিপদ।’’ পাশেই সমাজসেবী সঙ্ঘের উদ্যোক্তা অরিজিৎ মিত্রের দাবি, ‘‘পুজোর কাজে যুক্ত শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ভয়েই অনেকে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করতে চাইছেন না।’’ একই রকম দাবি উত্তর কলকাতার পুজো কাশী বোস লেনের উদ্যোক্তা সোমেন দত্তেরও। তিনি বললেন, ‘‘পার্কের চত্বরে আমাদের পুজো হয়। আলোর কাজ তো ছেড়েই দিচ্ছি, মাঠের কাদা-জল সাফ করাতে করাতেই ফুরসত পাওয়া যাচ্ছে না। শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে যেতে হচ্ছে। তবু যা হোক করে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে পুজোটাকে দাঁড় করিয়ে ফেলতেই হবে। ইউনেস্কো আসবে বলে কথা!’’
তবে, চেতলা অগ্রণীর পুজোকর্তা সমীর ঘোষ এক রকম ধরেই নিয়েছেন যে, এই পরিস্থিতিতে ১১ অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, ‘‘একটা দেওয়ালে কাজ করে ওঠার পরেই বৃষ্টিতে সব ধুয়ে যাচ্ছে। কোনও ভাবেই এত দ্রুত কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। তেমন হলে ইউনেস্কোর প্রতিনিধিরা নির্মীয়মাণ মণ্ডপই ঘুরে দেখবেন। নিজেকে বোঝাচ্ছি, লুচি খাওয়ানোর চেয়ে লুচি ভাজা হচ্ছে দেখানো কিন্তু বেশি আনন্দের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy