সাজসজ্জা: মণ্ডপে যাওয়ার আগে সরস্বতী প্রতিমায় শেষ তুলির টান। মঙ্গলবার, কুমোরটুলিতে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
ছৌ নৃত্যশিল্পীর আদলে সরস্বতী প্রতিমা। দেবীর মুকুট থেকে শুরু করে সাজসজ্জা, সবই সেই আঙ্গিকে। নৃত্যের ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছেন দেবী। থিমের সঙ্গে সাযুজ্য রাখতে প্রতিমার হাতে নেই কোনও বাদ্যযন্ত্র। মঙ্গলবার কুমোরটুলিতে প্রতিমায় তুলির শেষ টান দিতে দিতেই এক শিল্পী জানালেন, সালকিয়ায় যাবে ওই সরস্বতী। মাস দুয়েক আগে বরাত দিয়ে গিয়েছিলেন পুজোর উদ্যোক্তারা। শিল্পীর কথায়, ‘‘বায়নার সঙ্গে উদ্যোক্তারা মণ্ডপের নকশার ছবিও দিয়ে গিয়েছিলেন। থিমের সঙ্গে মিল রেখেই প্রতিমা গড়া হয়েছে।’’
দুর্গা এবং কালীর মতো সরস্বতী পুজোতেও আজকাল থিম-নির্ভর প্রতিমার চাহিদা বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন কুমোরটুলির শিল্পীরা। গত কয়েক বছরে হাতে গোনা গোটা কয়েক থিমের প্রতিমার বায়না এলেও এ বছর সংখ্যাটা লাফিয়ে বেড়েছে বলেই দাবি করছেন তাঁরা। সেই চাহিদার কথা ভেবে বেশ কয়েক জন শিল্পী কোনও রকম বায়না ছাড়াই নিজেদের ভাবনা মতো কয়েকটি থিমের প্রতিমা বানিয়ে রেখেছেন বলে জানা গেল। কুমোরটুলির এক শিল্পী প্রদ্যোত পাল বললেন, ‘‘মূলত বাড়ির পুজো হলেও দুর্গা, কালীর মতো সরস্বতী পুজোতেও এখন অনেকে একটু অন্য রকম প্রতিমা খোঁজেন। বেশ কিছু বারোয়ারি ও স্কুলের পুজোয় এ বার থিম দেখা যাবে। সকলে তো আর আগেভাগে প্রতিমার বরাত দিয়ে যান না। পুজোর আগের দিন এসে পছন্দ মতো প্রতিমা নিয়ে যান। তাই কয়েকটা বানিয়ে রেখেছিলাম। প্রায় সবই বিক্রি হয়ে গিয়েছে।’’
এ দিন দুপুরে কুমোরটুলিতে গিয়ে দেখা গেল, কার্যত তিল ধারণেরও জায়গা নেই। স্কুল, কলেজের পড়ুয়া থেকে পাড়ার ক্লাবের উদ্যোক্তাদের ভিড়ে জমজমাট গোটা চত্বর। শিল্পীদের অনেকে তখনও ব্যস্ত প্রতিমায় তুলির শেষ টান দিতে। তাঁরা জানাচ্ছেন, গত বছর জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও প্রতিমার দাম সেই তুলনায় বাড়েনি। এ বার তাই খানিকটা লাভের মুখ দেখতে থিমের প্রতিমাতেই জোর দিয়েছেন অনেকে। এক শিল্পী বললেন,
‘‘সাধারণ প্রতিমা তৈরি করে যে দামে বিক্রি করতে হয়, তাতে লাভ বেশি থাকে না। কিন্তু থিমের প্রতিমা হলে চাহিদা বেশি থাকে, আর দামটাও ভাল মেলে।’’
উত্তর কলকাতার একটি বেসরকারি স্কুল থেকে কুমোরটুলিতে প্রতিমা কিনতে এসেছিল একাদশের কয়েক জন পড়ুয়া। তাদের মধ্যে এক জন নীলেশ পাত্র বলল, ‘‘পুজো মানেই তো উৎসব। অন্য সব পুজো থিম-নির্ভর হলে সরস্বতীই বা বাদ যাবে কেন! আশপাশের অন্যান্য স্কুল থেকে অনেকে আমাদের স্কুলে আসে। প্রতিমায় এ বার আমরা সবাইকে টেক্কা দেব।’’ এ বছর প্রায় গোটা পনেরো থিমের প্রতিমা গড়েছেন কুমোরটুলির শিল্পী দীপঙ্কর পাল। অধিকাংশই পৌঁছে গিয়েছে মণ্ডপে। তাঁর কথায়, ‘‘এখন তো সমস্ত উৎসবেই উদ্যোক্তাদের নিত্যনতুন ভাবনা থাকে। সরস্বতী পুজোতেও তা চলে এসেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যদি সব কিছুর বদল ঘটে, তা হলে সরস্বতীই বা বদলাবেন না কেন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy