Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Christmas Carnival

দিনভর ঘেমে শহর ঘোরা ভিড়ই শীতপোশাকে রাতে পার্ক স্ট্রিটে

পার্ক স্ট্রিট, ময়দান জুড়ে এই সব আয়োজনেরও কমতি নেই। জওহরলাল নেহরু রোড থেকে পার্ক স্ট্রিটের ফুটপাত আলো দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। মাথার উপরে লাগানো হয়েছে আলোর চেন।

জনজোয়ার: বড়দিনের আগের সন্ধ্যায় পার্ক স্ট্রিটে মানুষের ঢল।

জনজোয়ার: বড়দিনের আগের সন্ধ্যায় পার্ক স্ট্রিটে মানুষের ঢল। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:১৭
Share: Save:

কোথাও দর্শকের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল, কোথাও ১৫ হাজারের আশপাশে। ভিড়ের চাপে আবার কিছু ক্ষণ টিকিট দেওয়াই বন্ধ রাখতে হয়েছিল কোনও কোনও জায়গায়। ঠান্ডা তেমন না থাকায় দিনভর ঘামতে ঘামতে চিড়িয়াখানা, জাদুঘর ও মিলেনিয়াম পার্কে ঘুরে বেড়ানো উৎসাহী জনতার এই ভিড়ই পার্ক স্ট্রিটে আছড়ে পড়ল শনিবার সন্ধ্যায়। রাতে ঠান্ডার সঙ্গে বাড়ল ভিড়ও। যার জেরে পার্ক স্ট্রিটে ‘পরিস্থিতি বুঝে’ যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে ঠিক করে রাখা পুলিশকেও এক সময়ে দ্রুত তৎপর হতে হয়। অনেকেরই প্রশ্ন, এ দিনই যদি এই অবস্থা হয়, আজ, রবিবার বড়দিনে তা হলে কী হবে?

এর মধ্যেই আশঙ্কা বাড়াল উৎসবমুখী জনতার বেপরোয়া মনোভাব। গত দু’বছরে করোনার কিছু বিধিনিষেধ থাকলেও এ বছর তা নেই। প্রশাসনের তরফেও নতুন কোনও নির্দেশিকা জারি করা হয়নি। দেখা গেল, পথে নামা প্রায় কারও মুখেই মাস্কের বালাই নেই। দূরত্ব-বিধি মানা বা সাফসুতরো হয়ে খাওয়ার চেষ্টাও চোখে পড়েনি। বরং করোনা যে আবার চোখ রাঙাচ্ছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন করায় মিলেছে নানা বেপরোয়া উত্তর। কেউ বলেছেন, ‘‘শীত পড়লেই করোনা করোনা রব ওঠে! নতুন কিছু নয়।’’ কারও মন্তব্য, ‘‘আসলে করোনার খবর রটিয়ে উৎসবে সংযম আনার চেষ্টা হচ্ছে।’’ এক জনের আবার মন্তব্য, ‘‘এক সময়ে ছিল, ‘চিনের নেতা আমারও নেতা’। এখন হয়েছে, ‘চিনের ভয়, আমারও ভয়’! করোনা নিয়ে ভাবতে হলে জিশুর জন্মদিনের পরে দেখা যাবে।’’

২৫ ডিসেম্বর জিশুর জন্মদিন কি না, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, এই দিনটি খ্রিস্টান-অখ্রিস্টান নির্বিশেষে সকলেরই উৎসবের দিন। এই দিন থেকেই খ্রিস্টধর্মের ১২ দিন ব্যাপী ‘ক্রিসমাসটাইড’ অনুষ্ঠানের শুভারম্ভ। উপহার দেওয়া-নেওয়া, রকমারি ভোজের আয়োজন, ক্রিসমাস ক্যারলের ঝঙ্কার, গির্জায় গির্জায় বিশেষ উপাসনা, গ্রিটিংস কার্ড বিনিময়, ক্রিসমাস ট্রি সাজানো, আলোকসজ্জায় জিশুর জন্মদৃশ্য দেখানো— চলে সবই। পার্ক স্ট্রিট, ময়দান জুড়ে এই সব আয়োজনেরও কমতি নেই। জওহরলাল নেহরু রোড থেকে পার্ক স্ট্রিটের ফুটপাত আলো দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। মাথার উপরে লাগানো হয়েছে আলোর চেন। পার্ক স্ট্রিট উড়ালপুল জুড়েও আলোর সাজ। অ্যালেন পার্কের কাছে বসানো হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি। উল্টো দিকের ফুটপাতেই তৈরি করা হয়েছে নানা খাবারের স্টল। যার জেরে মানুষের হাঁটার উপায় নেই। লম্বা লাইন পার্ক স্ট্রিটের একের পর এক রেস্তরাঁর সামনে। রাস্তার ফুটপাত সংলগ্ন অংশ দিয়ে পথচারীদের যাতায়াতের জায়গা করে দিতে রাখা হয়েছে প্রচুর গার্ডরেল। কিন্তু তাতেও ভিড়ের চাপে হাঁসফাঁস অবস্থা। রাতের দিকে সেই ভিড়ই নেমে আসে রাস্তায়।

সেখানেই এক লজেন্স বিক্রেতা বলছিলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের এক কালের চিফ জাস্টিস স্যর এলাইজ়া ইম্পে এই পার্ক স্ট্রিটেই তৈরি করিয়েছিলেন একটা ‘ডিয়ার পার্ক’। যাতে বল্গা হরিণে টানা স্লেজ গাড়ি চড়ে সান্টা ক্লজ় সোজা এই পার্কেই আসতে পারেন। এখন সেই পার্ক নেই, হরিণও নেই। কিন্তু অনেকের বিশ্বাস, মাঝরাতে সান্টা পার্ক স্ট্রিটে অবশ্যই আসবেন!’’ জওহরলাল নেহরু রোডে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্তা বললেন, ‘‘২০১১ সাল থেকে ‘কলকাতা ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যাল’ নামে চিহ্নিত এই উৎসব জনসমাগমের দিক থেকে সমগ্র পূর্ব ভারতে সব চেয়ে বড়। ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার হাজার হাজার মানুষও এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসেন। রাতভর এই উন্মাদনা না দেখলে বিশ্বাস হয় না।’’

একই চিত্র বিধাননগর কমিশনারেট এলাকার ইকো পার্ক, নিক্কো পার্ক কিংবা সিটি সেন্টারের মতো এলাকায়। ভিআইপি রোডের ধারে দক্ষিণদাঁড়িতে চলা কার্নিভালেও প্রচুর মানুষের ভিড়। কার্নিভালের কারণে যে হেতু সার্ভিস রোড বন্ধ থাকছে, তাই যানজট আটকাতে ভিআইপি রোডের উপরে দুর্গাপুজোর সময়ের মতো একটি আলাদা লেন গাড়ি চলাচলের জন্য করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, ইকো পার্ক চত্বরে নজরদারি চালাতে দু’টি ব্যাটারিচালিত গাড়ি রাখা হয়েছে। প্রতিটি গাড়িতে চেপে সাত জন করে পুলিশকর্মী ইকো পার্কে নজরদারি চালাচ্ছেন। ভিড়ের মধ্যে সাদা পোশাকে ঘুরছেন মহিলা ও পুরুষ পুলিশকর্মীরা। যৌন হেনস্থা এবং মহিলাদের বিরুদ্ধে ঘটা অপরাধ আটকাতেই এই পদক্ষেপ বলে পুলিশের দাবি। নিক্কো পার্ক যে হেতু বেসরকারি সংস্থার জায়গা, তাই সেখানকার কর্তৃপক্ষকে যথেষ্ট সংখ্যক নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন রাখার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। সেই সঙ্গে বিধাননগর দক্ষিণ থানার পুলিশকর্মীরাও বাইরে এবং ভিতরে পাহারায়থাকছেন। সেখানকার এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘শিরশিরে বাতাস পাঁজরে কাঁপুনি ধরিয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। শেষ রাতে শহর ভিজে যাচ্ছে শিশিরে। বাজারে ফুলকপি, মুলো, কমলালেবু, নতুন গুড় আর প্রাতর্ভ্রমণকারীদের কান ঢাকা টুপি মনে করিয়ে দিচ্ছে, করোনা থাক আর যাক, আবার এসে গেল বড়দিন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy