Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Jadavpur University Student Death

ক্রমেই বাড়ছে গ্রেফতারির সংখ্যা, র‌্যাগিং-জটে জড়াবেন না তো নির্দোষ কেউ, শঙ্কা যাদবপুরে

প্রাক্তন, বর্তমান মিলিয়ে ইতিমধ্যেই মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একাধিক পড়ুয়াকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। বাদ যায়নি প্রথম বর্ষের পড়ুয়া থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য ছাত্রেরাও।

An image of Jadavpur University Hostel

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেল। —ফাইল চিত্র।

চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৩ ০৬:১৯
Share: Save:

যাদবপুরে ছাত্রের মৃত্যুতে গ্রেফতারির সংখ্যা পর পর বাড়ছে। এখনও বেশ কয়েক জনের উপরে নজর রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। হেফাজতে থাকা ধৃতদের জেরায় একের পর এক দাবি তদন্তকারীদের কাজকে আরও কঠিন করে তুলছে বলেও খবর। তাই জেরায় ধৃতদের দাবির জেরে কোনও ‘নিরীহ’ পড়ুয়া যাতে আইনি জটে জড়িয়ে না পড়েন, তা নিশ্চিত করাই এখন চ্যালেঞ্জ তদন্তকারীদের কাছে। পুলিশের তরফে ‘ছাঁকনি’র মতো করে গোটা তদন্ত প্রক্রিয়া এগোনোর আশ্বাস দেওয়া হলেও আতঙ্ক যাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশের।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের নীচ থেকে দিন দশেক আগে প্রথম বর্ষের এক পড়ুয়ার রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনার পরেই বিভিন্ন মহল থেকে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ সামনে এসেছে। হস্টেলের আবাসিক থেকে শুরু করে সিনিয়র দাদাদের ‘পরিচয় পর্ব’-এর নামে মানসিক চাপ দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। যার জেরে ওই পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। তদন্তে নেমে প্রাক্তন, বর্তমান মিলিয়ে ইতিমধ্যেই মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একাধিক পড়ুয়াকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। বাদ যায়নি প্রথম বর্ষের পড়ুয়া থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য ছাত্রেরাও।

তদন্তে নেমে পুলিশকর্তারা ইতিমধ্যেই হস্টেলে সিনিয়রদের দাপটের একাধিক প্রমাণ পেয়েছেন। এই ‘দাদারা’ই ছিলেন হস্টেলের শেষ কথা— তদন্তে উঠে এসেছে এমনই তথ্য। আকারে-ইঙ্গিতে এমনই জানাচ্ছেন পড়ুয়াদের একাংশও। তাঁদের দাবি, ঝামেলা এড়াতে তাঁদের অনেকেই দাদাদের ‘পথ’ ধরতে বাধ্য হতেন। পড়ুয়াদের একাংশের এই দাবিই আশঙ্কাকে আরও জোরালো করছে। চাপে পড়ে দাদাদের ‘সঙ্গ’ দিতে কেউ বাধ্য হয়েছিলেন কি না, তা ভেবে আতঙ্কে আছেন পড়ুয়াদের অনেকেই। এমনকি, ভয় দেখিয়ে কাউকে ওই অপরাধে জড়িয়ে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে, এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না পড়ুয়ারা। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র বললেন, ‘‘সবটাই তো নিজের ইচ্ছেয় সব সময়ে হয় না। ওই হস্টেলের আবাসিক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা সকলেই জড়িত, তা হতে পারে না। কেউ যদি চাপ দিয়ে, ভয় দেখিয়ে কাউকে সঙ্গ দিতে বাধ্য করে, সে ক্ষেত্রে কী হবে?’’ একই প্রশ্ন বাংলার দ্বিতীয় বর্ষের এক পড়ুয়ারও। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আর এক পড়ুয়ার দাবি, ‘‘কে দোষী, কে নির্দোষ, তা প্রমাণ করার দায় পুলিশের। কিন্তু গোটা ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পড়ুয়াকে কার্যত কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে। এটা ঠিক নয়।’’

পুলিশ যদিও দাবি করেছে, বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রথম থেকে গোটা তদন্ত প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। এমনকি, ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগের একাধিক প্রমাণ হাতে পেলে তবেই কাউকে পুলিশি স্ক্যানারে আনা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা। এক পুলিশ আধিকারিক জানান, একাধিক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে মানেই যে সকলে অপরাধী, এমনটা নয়। তদন্তের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, তথ্যপ্রমাণ জোগাড়েও অনেক সময়ে একাধিক জনের সঙ্গে কথা বলা হয়। ঠিক কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে ধারণা পেতেও অনেকের সঙ্গে কথা বলতে হয়। ছাত্র-মৃত্যুর তদন্ত তার ব্যতিক্রম নয় বলে জানান তিনি। লালবাজারের এক আধিকারিক যদিও বললেন, ‘‘সকলেই অপরাধী হতে পারেন না। ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে যাতে কোনও নির্দোষ পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তার উপরে নজর রাখতে হচ্ছে বার বার। সব দিক খেয়াল রেখেই তদন্ত প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Jadavpur University Student Death police investigation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE