Advertisement
E-Paper

গর্তে চাকা পড়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রেলারের নীচে পিষ্ট বাইকচালক

শনিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে হেস্টিংস থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। মৃত যুবকের নাম রাহুল রায় (২৮)। তাঁর সঙ্গেই ছিলেন শেখ সেলিম ওরফে করণ মল্লিক নামে আর এক জন।

An image of Death

বিপদ-পথ: খানাখন্দে ভরা এই পথেই এক বাইকচালককে পিষে দেয় একটি ট্রেলার। শনিবার, হেস্টিংস থানা এলাকায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২৩ ০৬:৪৬
Share
Save

রাস্তার এক দিকে বড় গর্ত। অন্য দিক দিয়ে ছুটে আসছে বিরাট ট্রেলার। সেই পথেই ট্রেলারটিকে কোনও মতে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময়ে গর্তে পড়ে যায় মোটরবাইকের চাকা। আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি সেটির চালক। ট্রেলারের পিছনের চাকার সামনে পড়ে যায় তাঁর মাথা। নিমেষে থেঁতলে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বাইকচালকের। বাইকের অপর আরোহীর গাল কেটে গিয়েছে। হাতের একটি আঙুলও ভেঙেছে। প্রাণে বাঁচলেও গভীর আতঙ্কে রয়েছেন ওই যুবক। তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।

শনিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে হেস্টিংস থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। মৃত যুবকের নাম রাহুল রায় (২৮)। তাঁর সঙ্গেই ছিলেন শেখ সেলিম ওরফে করণ মল্লিক নামে আর এক জন। তাঁরও বয়স ছাব্বিশের আশপাশে। বাইকটি সেলিমেরই। সেটি চালাচ্ছিলেন রাহুল। বন্দরের দিক থেকে এসে ক্লাইড রো ধরে যাচ্ছিলেন তাঁরা। সেন্ট জর্জেস গেট রোডের কাছে পৌঁছে ক্লাইড রো থেকে ডান দিকে ঘোরেন ওই দু’জন। বাঁক ঘোরার কয়েক মিটারের মধ্যেই রাস্তায় রয়েছে একটি বড়সড় গর্ত। জর্জেস গেট রোড ধরেই সেই সময়ে বন্দরের দিকে যাচ্ছিল ট্রেলারটি। সেটির বাঁ দিক দিয়ে কোনও মতে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন রাহুলেরা। কিন্তু গর্তে চাকা পড়ায় আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি চালক। সেখানে হাজির এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলে এক জনের মৃত্যু হলেও আহত যুবককে দেখে বোঝা যাচ্ছে, বাইকটির গতি খুব বেশি ছিল না। হেলমেট সঙ্গে থাকলেও সেটি ঠিক মতো পরা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। লালবাজারের ফেটাল স্কোয়াড তদন্তভার নিয়েছে।’’ তবে, ঘটনার পরেই ট্রেলার ফেলে পালিয়েছেন সেটির চালক। ময়না তদন্তের জন্য দেহটি এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।

পুলিশ জানায়, রাহুলের বাবা রেলে চাকরি করতেন। সেই সূত্রেই বন্দরের রেল কলোনিতে তাঁর বাড়ি। বাবা-মা ছাড়াও রাহুলের দিদি রয়েছেন। রাহুল রেলের এক অফিসারের গাড়ি চালাতেন। এ দিন ছুটি থাকায় বন্ধুর সঙ্গে বাইক নিয়ে বেরিয়েছিলেন। আহত সেলিম একটি জমি জরিপ সংস্থার কর্মী। এ দিন এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে গেলে দেখা যায়, বন্ধুর খবর শুনে সেখানে পৌঁছেছেন বেশ কয়েক জন যুবক। তাঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘এ ভাবে গর্তে পড়ে এমনটা ঘটে যাবে, ভাবা যায় না! রাহুলই ছিল পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। কী করে ওদের সংসার চলবে, জানি না।’’ আর এক যুবক বলেন, ‘‘সেলিমকে দেখে বেরোলাম। হাতের একটা আঙুল বেঁকে অন্য দিকে ঘুরে গিয়েছে। প্রচণ্ড আতঙ্কে রয়েছে। শুধু ‘রাহুলের এ কী হল রে’ বলে চিৎকার করে কাঁদছে।’’

বন্দরের রাস্তার হাল নিয়ে অতীতেও অভিযোগ উঠেছে একাধিক বার। লরি গর্তে পড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ছোট গাড়ির উপরে পড়ায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু দিনকয়েক আলোচনা হলেও প্রতি বারই পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরে যায় বলে অভিযোগ। গর্তের উপর দিয়েই রীতিমতো ঝুঁকির যাতায়াত চলতে থাকে। পুলিশ-প্রশাসনের তরফে এ ব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া না মিললেও মৃতের পরিবারের এক সদস্য বললেন, ‘‘পুজো আসছে। আবার রাস্তা সারানো হবে। কিন্তু শীতকাল যেতে না যেতেই সেই রাস্তার কঙ্কাল আবার বেরিয়ে আসবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Road Accident Death poor condition

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}