প্রতিবাদ: পুরনো বাড়িতে আঁকতে ব্যস্ত আনাবেল। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
পুরনো বাড়িটির সামনে কিছু করছিলেন এক বিদেশিনি। আশপাশে খেলছে বছর চারেকের এক শিশু। শুটিং হচ্ছে নাকি? ঘুরছিল প্রশ্নটা।
উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুর স্ট্রিটের আপাত শান্ত পাড়া। উৎসাহী লোকের হঠাৎ আনাগোনা ৭৩/১ নম্বর বাড়িটির সামনে। শীতের বেলায় কয়েক জন গায়ে রোদ মাখতে বেরিয়েছিলেন। কেউ চলে এসেছেন মোড়ের আড্ডা ছেড়ে। মন্তব্য ভেসে এল, ‘‘বিদেশি যখন, নিশ্চয়ই শুটিং। কয়েক দিনেই তো বাড়িটা ভাঙার কথা।’’
ব্যাপারটা কী, খতিয়ে দেখতে শুক্রবার বেলায় হাজির হন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় কয়েক জনও। জানা গেল, কলকাতার বুক থেকে হারিয়ে যাওয়া পুরনো বাড়ি নিয়ে তৈরি নিজের শিল্পকর্ম তুলে ধরতে এসেছেন এক শিল্পী। সে ভাবেই বেছে নেওয়া ৭৩/১ নম্বর বাড়িটিতে নিজের তৈরি ছাপ তোলা চিত্র লাগাতে চান তিনি। যে শিল্পকর্ম ভাবাচ্ছে, পুরনো বাড়ি ভাঙার সঙ্গে সঙ্গেই ধ্বংস হচ্ছে না তো নিজেদের সংস্কৃতি?
শিল্পীর নাম আনাবেল শেঙ্ক। বছর চোদ্দো আগে প্রথম বার কলকাতায় আসেন। পরে শান্তিনিকেতনে পড়াশোনার সময়ে তাঁর কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ে। শিল্পী সৌরভ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। ছ’বছর ধরে সৌরভ আর আনাবেল ফ্রান্সেই থাকেন। ছেলে আছে তাঁদের। নাম অন্তনা। শিল্পকর্ম চালিয়ে যাওয়ার বিষয় হিসাবে ছাপ তোলা চিত্রকে বেছে নেন আনাবেল। সৌরভ বলেন, ‘‘ফ্রান্সের বাসিন্দারা নিজেদের সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে নতুন কিছু করেন না। এ দেশে তার উল্টো ছবি। পুরনো সব ভেঙে ফেলার মধ্যেই আমাদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতিও ভাঙা পড়ছে কি না, সেই প্রশ্নটা শিল্পকর্মের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন আনাবেল।’’
এ জন্য সৌরভ এবং আনাবেল খুঁজে নেন ভেঙে নতুন করে তৈরি হতে চলেছে, এমন পুরনো বাড়ি। তারই একটি ৭৩/১ নম্বরে বেলা সাড়ে বারোটায় পৌঁছেই দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ পড়ে থাকা ওই বাড়ির দোকানের শাটার বেছে নেন তাঁরা। ঘষে ঘষে সেই শাটারের মরচে তোলেন আনাবেল। শুরু হয় সেখানে ছাপ তোলা চিত্র লাগানো। শ্যামপুকুর স্ট্রিটে নির্মাণকাজ শুরু হয়ে গিয়েছে, এমন আর একটি পুরনো বাড়ির দেওয়ালেও নিজের শিল্পকর্ম লাগান আনাবেল। তিনি বলেন, ‘‘এর মাধ্যমে মানুষকে ভাবানোর চেষ্টা করছি। পুরনোকে সংস্কার করে নতুনের পথে কি হাঁটা যায় না?’’
নিজের ছবি বানাতে শহরের এমন বাড়ি ব্যবহার করেছেন চিত্র পরিচালক অনীক দত্ত। তিনি বললেন, ‘‘যে কোনও শহরের সহজাত বিষয় থাকে, নিজস্ব রং থাকে। সেটা হঠাৎ করেই বদলে যাচ্ছে। এখন শহর পরিকল্পনায় নন্দনবোধের বড় অভাব। পুরনোকে গুঁড়িয়ে ফেললেই যেন সুন্দর কিছু গড়ে তোলা হচ্ছে! এই শিল্পীকে তাঁর ভাবনার জন্য কুর্নিশ।’’
তবে শ্যামপুকুর স্ট্রিটের যাঁদের বাড়ি ঘিরে এমন শিল্পকর্ম, তাঁদের কারও এ সবে মন নেই। বাড়ির বাসিন্দাদের এক জন প্রবীর দে বললেন, ‘‘প্রোমোটারের সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে। মাস তিনেকের মধ্যেই নতুন বাড়ি উঠবে। তার আগে সমস্যায় পড়তে হবে না তো? সবাই বলছে, ভাঙা পড়ার আগে নাকি বাড়িটা বিখ্যাত হয়ে গেল!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy