Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Bus Accident

ঝুলছে ৭৪টি মামলা, পাত ভেঙে উল্টে যায় মিনি বাস, পুলিশকে ‘মানবিক’ ভাবে বাস সামলাতে নির্দেশ!

১৯ জনকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। সেখানেচিকিৎসকেরা দু’জনকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁদের মধ্যে এক জনের পরিচয় আগে জানা যায়নি।

A Photograph of the minibus

দুর্ঘটনা: এক পাশে সম্পূর্ণ কাত হয়ে উল্টে যায় একটি মিনিবাস। শনিবার, মেয়ো রোডে।  ছবি: রণজিৎ নন্দী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:২১
Share: Save:

যান্ত্রিক গোলযোগের জেরেই ডাফরিন রোড এবং মেয়ো রোডের সংযোগস্থলে, শনিবার উল্টে যায় মিনিবাসটি। বাসের নীচেলাগানো একটি পাত ভেঙে যায়। সেই কারণেই টাল সামলাতে পারেনি বাসের চালক। রবিবার ওই ঘটনার তদন্ত আরও কিছুটা এগোনোর পরে পুলিশ সূত্রে এমনটাই জানাগিয়েছে। এ দিনই বড়তলা থানা এলাকার খন্না মোড় থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে শেখ তৌসিফ নামে বছর ছত্রিশের ওই বাসচালককে। আরও জানা গিয়েছে, মামলার পাহাড় কাঁধে নিয়ে আগামী বছরেই বাসটির কাটাইয়ে যাওয়ার কথা। তা-ই কি বাসের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে মালিক সে ভাবে মাথা ঘামাতেন না— উঠছে সেই প্রশ্নও।

শনিবার বিকেলে ডাফরিন রোড ধরে যাওয়ার সময়ে মেয়ো রোডের কাছে হঠাৎ ডান দিকে ঘুরে উল্টে যায় মেটিয়াবুরুজ থেকে হাওড়াগামী মিনিবাসটি। উল্টে যাওয়ার আগে সেটি প্রথমে কয়েকটি মোটরবাইকে ধাক্কা মারে। তার মধ্যে একটি বাইক সম্পূর্ণ দুমড়ে যায়। ১৯ জনকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। সেখানে চিকিৎসকেরা দু’জনকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁদের মধ্যে এক জনের পরিচয় আগে জানা যায়নি। রবিবার পুলিশ জানায়, ওই বাসযাত্রীর নাম ইন্তাজুল মণ্ডল (৫৭)। তিনি নদিয়ার আড়ংঘাটার বাসিন্দা। এ দিন রাত পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, বছর তিরিশের অমিত কুমার,৩৬ বছর বয়সি কাবিল শেখ এবং ১৬ বছরের আজলান খানকে আহত অবস্থায় ভর্তি রাখা হয়েছে। বাকি ১৪ জনকে চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আহতদের মধ্যে আজ়লানের শারীরিক অবস্থা এখনওসঙ্কটজনক। ক্রিটিক্যাল কেয়ারেই ওই কিশোরকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। এ দিন সকালে তার পায়ের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।

তদন্তে উঠে এসেছে, বাসটির মালিক মহম্মদ ইরফান। তিনি নাদিয়ালের বাসিন্দা। ২০০৯ সালেরজুলাইয়ে বাসটি সরকারি খাতায় নথিভুক্ত হয়। পথে নামার এক বছরের মধ্যেই, ২০১০ সালের জুলাইয়ে একটি দুর্ঘটনায় পড়ে সেটি। ওই বাসের ধাক্কায় কয়েক জনআহত হন। লালবাজার সূত্রের খবর, সে সময়ে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৭৯ ধারায় (বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোয় কেউ আহত হলে ব্যবহৃত হয়) মামলা হয়। কিন্তু তাতেই শেষ নয়। এর পরে অসংখ্য বারআইন ভেঙেছে মিনিবাসটি। পুলিশ সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে বাসটির বিরুদ্ধে আদালতে ৭৪টি মামলা ঝুলে রয়েছে। এর মধ্যে আলিপুর আদালতে ৪১টি এবং ব্যাঙ্কশাল আদালতে রয়েছে ৩৩টি মামলা।পুলিশের কাছেও ঝুলে রয়েছে ২৬টি কেস। কিন্তু মামলার পাহাড় জমলেও বাসের মালিক এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করেননি বলেঅভিযোগ। মেটানো হয়নি জরিমানার টাকাও।

বাসটিকে পরীক্ষা করে তদন্তকারীরা দেখেছেন, বাসের গায়ের কিছু জায়গায় লোহার অংশ ভেঙে বেরিয়ে রয়েছে। বাসটি যে দিকে উল্টে গিয়েছে, সে দিক তো বটেই, এমনকি তার উল্টো দিকেও এই একই রকম হাল। রয়েছে চাকার সমস্যাও। তাপ্পি মারা টায়ার যেমন ব্যবহার হচ্ছিল, তেমনই প্রায় সম্পূর্ণ ক্ষয়ে গিয়েছিল ব্রেক প্যাড। স্টিয়ারিংয়েও একাধিক সমস্যা ছিল বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

অভিযোগ, শহরের রাস্তায় এমন বহু বাস-ই চলছে, যেগুলিকে আর কিছু দিনের মধ্যে রাস্তা থেকে তুলে নিতে হবে। কাটাইয়ের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা এই সব বাস নিয়েমালিকপক্ষ ভাবেনই না বলে অভিযোগ। ফলে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খরচও করা হয় না। কিন্তু এমন বাস ঘিরেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা, বেঘোরে প্রাণ হারান মানুষ। এই ব্যাপারে বাসটির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে পরিচয় জানাতে না চেয়ে এক ব্যক্তি ফোনে বলেন, ‘‘এমনিতেই ভাড়া বাড়ছে না। এত কিছু করব কী করে! তা ছাড়া যা বলার পুলিশকে বলব।’’

পুলিশের নজর এড়িয়েই বা এমন বাস চলে কী করে? লালবাজারের এক কর্তার উত্তর, ‘‘অতীতে এমন বহু গাড়ির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়েছে। ধরপাকড় নিয়েসেই সময়ে পুলিশেরই সমালোচনা করা হয়েছে। আপাতত মানবিক দিক থেকে বিষয়গুলো দেখে বাস সামলানোর নির্দেশ রয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bus Accident Mini Bus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy