দুশ্চিন্তা: ঝড়ে তছনছ হয়ে গিয়েছে আনন্দপুরের পোড়া বস্তির বাসিন্দাদের অস্থায়ী ছাউনি। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
ফাঁকা মাঠের ধার ঘেঁষে বাঁধা বাঁশের কাঠামোর উপরে ত্রিপলের ছাউনির কিছুই প্রায় আর নেই। কোনওটি ছিঁড়ে পড়ে রয়েছে, কোনওটি উড়ে গিয়ে পড়েছে কিছু দূরে। ঝড়ের তাণ্ডবে উড়ে গিয়েছে অস্থায়ী ছাউনির সামনের অংশ ঘিরে রাখা কালো ত্রিপলও। ছাউনির ভিতরের অবস্থা আরও ভয়াবহ। জল-কাদায় পরিস্থিতি এমন যে, পা ফেলার মতো অবস্থাও নেই। তার মধ্যে থেকেই ভিজে জিনিসপত্র কোনও মতে সরানোর চেষ্টা করছেন কয়েক জন।
ই এম বাইপাস সংলগ্ন শ্রমিকপল্লিতে আগুন লাগার পরে কেটে গিয়েছে প্রায় আড়াই মাস। সর্বস্ব হারানো বসিন্দাদের তার পর থেকে ভরসা ছিল এই অস্থায়ী ছাউনিটুকুই। তাপপ্রবাহের মধ্যে পাঁচিল ঘেরা মাঠে কোনও রকমে কাটালেও সোমবারের ঝড়বৃষ্টিতে সেটুকুও লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে। শিশু-মহিলাদের নিয়ে কার্যত খোলা আকাশের নীচেই কাটছে রাত।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আনন্দপুর থানা এলাকার বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে শ্রমিকপল্লিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে একের পর এক ঘরে। এক কাপড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন অধিকাংশ বাসিন্দা। দমকলকর্মীদের ঘণ্টা পাঁচেকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে পুড়ে যায় বস্তির ৩৮টি ঘর। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, ঘটনার পরে স্থানীয় দাদারা মাঠে জায়গা করে দিয়েছিলেন। প্রতিটি পরিবারের জন্য ত্রিপলও দেওয়া হয়। বাঁশের ছাউনি করে, ত্রিপল দিয়ে ঘিরে ছেলেমেয়েদের নিয়ে সেখানেই থাকছিলেন তাঁরা। কিন্তু এক দিনের ঝড়ে সেই ছাউনিও আর অবশিষ্ট নেই। ত্রিপল উড়ে ভিজে গিয়েছে গেরস্থালির যৎসামান্য সরঞ্জামও। ছাউনির বাসিন্দা কমলা দলুই বলেন, ‘‘সারা রাত বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ভিজে কাপড়ে থাকতে হয়েছে। জিনিসপত্র বাঁচাব নাকি নিজেরা বাঁচব, সেটাই বুঝতে পারছিলাম না। এখানে আর থাকার মতো অবস্থা নেই। আবার বৃষ্টি হলে কোথায় রাত কাটাব, জানি না।’’ অস্থায়ী ছাউনির ত্রিপল ঠিক করতে করতে কিছুটা ক্ষোভের সুরে আর এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘আগুন লাগার পরে সব নেতারা এসেছিলেন। সবাই পাশে থাকবেন বলেছিলেন। কিন্তু কাল রাতের এত ঝড়বৃষ্টির পরে আমরা কী ভাবে রয়েছি, কোনও নেতা-দাদা এক বারের জন্য দেখতে এলেন না।’’
অগ্নিকাণ্ডের পরে প্রশাসনের তরফে নতুন করে ঘর তৈরির জন্য ৩৫ হাজার টাকা করে সাহায্যও দেওয়া হয়। পোড়া বস্তিতে নতুন করে ঘর তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। তবে সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি। কাজ কবে শেষ হবে, নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না বাসিন্দারা। ফলে আগামী কয়েক দিন টানা বৃষ্টি হলে পরিবার নিয়ে কোথায় যাবেন, সেই চিন্তাই আপাতত রাতের ঘুম কেড়েছে। এক বাসিন্দা সুবল বেজ বলেন, ‘‘গরমে কষ্ট হলেও ত্রিপলের ছাউনির ভিতরেই কাটিয়েছিলাম। কিন্তু বৃষ্টি হলে তো মাঠে হাঁটুজল জমে যাচ্ছে। কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব?’’
স্থানীয় ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি সুশান্ত ঘোষ যদিও অগ্নিকাণ্ডের পরে সব রকম ভাবে পাশে থেকেছেন বলে দাবি করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘নিয়ম মেনে আর্থিক সাহায্য করা হয়েছে। পাশাপাশি নানা ভাবে অন্যান্য সাহায্যও করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy