প্রতীকী ছবি।
মেয়ে দেরি করে বাড়ি ফেরায় আন্দামান থেকে ফোনে বকুনি দিয়েছিলেন মা। যা নিয়ে দু’জনের কথা-কাটাকাটিও হয়েছিল। তখনই আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে ফোন কেটে দিয়েছিল বছর চোদ্দোর ওই কিশোরী। এর কিছু ক্ষণ পরেই ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল তার। সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে পর্ণশ্রী থানা এলাকার উপেন ব্যানার্জি লেনে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই দিন রাত পৌনে ১২টা নাগাদ শ্যামলী সিংহ নামে এক মহিলা থানায় এসে জানান, তাঁদের ভাড়াটের ১৪ বছরের মেয়েকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মেয়েটিকে। পুলিশ সেখানে গিয়ে জানতে পারে, হাসপাতালে আনার পরেই চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তদন্তে জানা যায়, পর্ণশ্রীর ভাড়াবাড়িতে বাবার সঙ্গে থাকত ওই কিশোরী। বাবা পার্ক সার্কাসের একটি রেস্তরাঁয় কাজ করেন। মা বিউটিশিয়ান। মাস দুই আগে আন্দামানে কাজ নিয়ে চলে গিয়েছেন তিনি। মোমিনপুরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়ত ওই কিশোরী।
পুলিশ জানিয়েছে, সে দিন সকাল ৯টা নাগাদ কাজে বেরিয়ে যান কিশোরীর বাবা। বিকেলে বাবাকে ফোন করে মেয়ে জানায়, সাড়ে ৫টা নাগাদ তার টিউশন ক্লাস রয়েছে। ভূকৈলাস রোডে সেই শিক্ষকের কাছে পড়তেও যায় মেয়েটি। যাওয়ার আগে মায়ের সঙ্গে ফোনে তার কথা হয়। ক্লাস শেষ হলে মেয়েকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে বলেছিলেন মা। কিন্তু মেয়ে দেরি করে ফেরায় ফোনে তাকে বকুনি দেন তিনি। দু’জনের বচসাও হয়। মা জানিয়েছেন, তখনই আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে ফোন কেটে দেয় মেয়ে। মা ভয় পেয়ে নিজের দুই বোনকে ফোন করে বিষয়টি দেখতে বলেন। দুই মাসি রাত সওয়া ১১টা নাগাদ মোমিনপুরের বাড়িতে এসে জানলা দিয়ে দেখেন, ওই কিশোরী গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছে। তাঁদের চিৎকারে পড়শিরা ছুটে এসে দরজা ভেঙে কিশোরীকে উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে বাবাও ফিরে আসেন এবং মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যান। পুলিশ জানিয়েছে, ঘরে কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি। দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে।
সোমবারই আনন্দপুর থানা এলাকার একটি আবাসনের পঁচিশতলা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিল এক কিশোর। সেখানে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ওই কিশোর কলকাতায় এসে মানিয়ে নিতে পারছিল না। মুম্বইয়ে মায়ের কাছে বড় হয়েছিল সে। বছর দুই আগে বাবার কাছে কলকাতায় চলে আসতে হয় তাকে। বাবা সকালে বেরিয়ে যেতেন। করোনা আবহে সে একাই বাড়িতে থাকত। একাকিত্ব এবং পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে উদ্বেগে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল সে।
দু’টি ঘটনাই ঘটেছে অবসাদ থেকে এবং মৃত দু’জনেই বয়ঃসন্ধিতে দাঁড়িয়ে থাকা দুই কিশোর-কিশোরী। মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেবের কথায়, ‘‘শুধু একা থাকা বা বকুনি নয়, আসলে কোভিডের কারণে গত মার্চ থেকে সমাজের সংজ্ঞাটাই হঠাৎ করে বদলে গিয়েছে। স্কুল বন্ধ, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ বন্ধ, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চার দেওয়ালের ঘেরাটোপ আর একই মুখগুলো দেখে যাওয়া— সব মিলিয়ে জীবন থমকে গিয়েছে। তাই একটা একাকিত্ব কম-বেশি সকলের মনেই তৈরি হয়েছে। হয়তো সেটাই অনেককে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy