Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

খারাপ হাতের লেখা, আজকের নোবেলজয়ীর গার্জেন কল হয়েছিল স্কুলে

দীপালিদেবী জানান, ক্লাসে সবার আগে অঙ্কের সমাধান করলেও না বললে খাতা দেখাতে যেতেন না অভিজিৎ।

স্মৃতিমেদুর: প্রাক্তন ছাত্রের নোবেল জয়ের খবর টিভিতে দেখছেন দীপালিদেবী। ছবি: সুমন বল্লভ

স্মৃতিমেদুর: প্রাক্তন ছাত্রের নোবেল জয়ের খবর টিভিতে দেখছেন দীপালিদেবী। ছবি: সুমন বল্লভ

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৯ ০২:০০
Share: Save:

নোবেলজয়ী। কিন্তু ছেলেবেলায় তাঁরও ‘গার্জেন কল’ হয়েছিল স্কুল থেকে। হাতের লেখা ভাল ছিল না। তাই অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাকে স্কুলে ডেকে পাঠিয়েছিলেন ক্লাস টিচার। সোমবার প্রিয় ছাত্রের নোবেল জয়ের খবরে আপ্লুত সাউথ পয়েন্ট স্কুলের প্রাক্তন অঙ্কের শিক্ষিকা দীপালি সেনগুপ্ত। আবার অভিজিতের মাকে ডেকে পাঠানোর স্মৃতি রোমন্থন করে কিঞ্চিৎ লজ্জাও প্রকাশ করলেন সদ্য নোবেলজয়ীর সেই ক্লাস টিচার।

দীপালিদেবী জানান, ক্লাসে সবার আগে অঙ্কের সমাধান করলেও না বললে খাতা দেখাতে যেতেন না অভিজিৎ। উচ্ছ্বাসহীন মুখে একটি অঙ্কের সমাধান করে অন্য অঙ্কের দিকে মন দিতেন লাজুক স্বভাবের ছাত্রটি।

ছাত্র অভিজিৎ বিনায়ককে দীর্ঘদিন পড়িয়েছিলেন দীপালিদেবী। ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণিতে অভিজিতের ক্লাস টিচার ছিলেন তিনি। নিউ টাউনে ছেলে বিক্রম সেনগুপ্তের বাড়িতে বসে সোমবার দীপালিদেবী বলেন, ‘‘ভাল ছাত্র ছিল। তবে হাতের লেখা ভাল ছিল না। হাতের লেখার জন্য ওর মাকে ডেকে পাঠাই। বলেছিলাম, লেখাটা ভাল করলে ওর রেজাল্ট আরও ভাল হবে। তবে সে দিন ওর মাকে ডেকে পাঠানোর কথা মনে পড়ে গেলে এখন কিছুটা লজ্জা পাই।’’

গর্বিত সাউথ পয়েন্ট স্কুলের প্রিন্সিপাল রূপা সান্যাল ভট্টাচার্য (বাঁ দিকে) ও শিক্ষিকা শর্মিলা দে সরকার। ছবি: সুমন বল্লভ

১৯৬৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সাউথ পয়েন্ট স্কুলে অঙ্কের শিক্ষিকা ছিলেন দীপালিদেবী। ভাইস প্রিন্সিপাল পদে ওই স্কুল থেকেই অবসর নিয়েছিলেন। বললেন, ‘‘কত ভাল ছেলেকেই তো এত বছর ধরে পড়িয়েছি। অভিজিৎ ভাল ছেলে ছিল। সব ভাল ছেলের কথা তো মনে নেই। কিন্তু অভিজিতের কথা কেন জানি না আলাদা করে মনে থেকে গিয়েছে।’’

দীপালিদেবী জানান, অভিজিতের মতোই চিত্র পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষও তাঁর ছাত্র ছিলেন। বহু ভাল ছাত্রের ভিড়ে ঋতুপর্ণের কথাও ভোলেননি তিনি। দীপালিদেবীর কথায়, ‘‘অভিজিৎ, ঋতুপর্ণদের মতো ছেলেদের মধ্যে হয়তো আলাদা এমন কিছু থাকে, যা অন্য ভাল ছেলেদের থেকে অনেকটাই আলাদা। ওরা অজান্তেই মনে ছাপ

রেখে যায়।’’

কড়া শিক্ষিকা হিসেবে যে তাঁর বেশ নামডাক ছিল দীপালিদেবী নিজেই তা জানান। ক্লাসে পড়ুয়ারা দুষ্টুমি করলে ঘা কতক দিতেনও। কিন্তু অভিজিৎকে কোনও দিন মারধর করতে হয়নি বলেই জানালেন। এমনকি, বকুনিও দিতে হয়নি। এতটাই শান্ত স্বভাবের ছিলেন অভিজিৎ বিনায়ক। দীপালিদেবী বলেন, ‘‘স্কুলজীবন থেকেই খুব রোগা ছিল অভিজিৎ। পুরু লেন্সের চশমা ছিল সেই ছোট থেকেই। এত ভাল ছাত্র, কিন্তু কোনও অহংকার ছিল না। খুবই বিনয়ী ছিল বরাবর।’’

সোমবার দুপুরে এক সহকর্মীর কাছে তাঁর প্রাক্তন ছাত্রের নোবেল পুরস্কার জয়ের খবর পান দীপালিদেবী। তিনি জানান, বেশ কয়েক বছর ধরেই অভিজিৎ নোবেল পেতে পারেন বলে চর্চা হচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ দিন বিকেলে সুখবরটা পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই টিভি খুলে বসে পড়েন প্রিয় ছাত্রের নোবেল জয়ের খবর দেখতে। টিভিতে অভিজিৎকে দেখে তিনি বলেন, ‘‘সেই ছোটবেলার মুখের আদলটা এখনও রয়েছে। একবার দেখলেই মনে পড়ে যায় ওর ছোটবেলার মুখটা। আমাকে হয়তো ওর মনে নেই। কিন্তু এমন ছাত্রের কথা কি আমি ভুলতে পারি?’’

অভিজিতের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার খবর শুনে উচ্ছ্বসিত সাউথ পয়েন্ট স্কুলের প্রিন্সিপাল রূপা সান্যাল ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘সাউথ পয়েন্ট স্কুলের সঙ্গে নোবেল পুরস্কার নামটা জুড়ে যাওয়ায় সবাই গর্বিত। মঙ্গলবার পুজোর ছুটির পরে স্কুল খুলবে। স্কুলের শিক্ষিকা ও পড়ুয়ারা সবাই ওঁকে অভিনন্দন বার্তা পাঠাব। ওই বার্তায় সব পড়ুয়া সই করবে। উনি কলকাতায় এলে এক বার যদি আমাদের স্কুলে আসেন এবং কিছু বলেন, তবে পড়ুয়ারা খুবই প্রেরণা পাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Abhijit Vinayak Banerjee Nobel Prize
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy