Advertisement
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
COVID 19

‘স্যর ছাড়া কী ভাবে কলেজ চলবে, জানি না’

কলেজঅন্ত প্রাণ, ডিরোজিয়ো কলেজের অধ্যক্ষ দিব্যেন্দু তলাপাত্র (৬৪) দেখে যেতে পারলেন না সেই অনুষ্ঠান। তার আগেই তাঁর প্রাণ কেড়ে নিল করোনা।

দিব্যেন্দু তলাপাত্র

দিব্যেন্দু তলাপাত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২১ ০৫:৫৫
Share: Save:

করোনা সংক্রমণের জন্য বন্ধ ছিল কলেজ। তাও রোজ কলেজে এসে নানা কাজ নিজের হাতে করতেন। নিজের তত্ত্বাবধানে তৈরি করছিলেন কলেজের তৃতীয় তল। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে কলেজের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে সেই তলের উদ্বোধনও হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কলেজঅন্ত প্রাণ, ডিরোজিয়ো কলেজের অধ্যক্ষ দিব্যেন্দু তলাপাত্র (৬৪) দেখে যেতে পারলেন না সেই অনুষ্ঠান। তার আগেই তাঁর প্রাণ কেড়ে নিল করোনা।

কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা চৈতালি মুখোপাধ্যায় জানান, দিব্যেন্দুবাবু ছিলেন কলেজের প্রাণপুরুষ। ২০১২ সালে এই কলেজে অধ্যক্ষের পদে যোগ দেওয়ার পরে কলেজের শিক্ষা থেকে শুরু করে নানা দিকে উন্নতি হয়। তিনি কলেজে চালু করেন ইউজিসির অধীনস্থ বেশ কয়েকটি বৃত্তিমূলক পাঠক্রম। আদতে পদার্থবিদ্যার শিক্ষক ছিলেন দিব্যেন্দুবাবু। কিন্তু তাঁর সমস্ত বিষয়ে নজর ছিল। তিনি শুধু কলেজের অধ্যক্ষই ছিলেন না, ছিলেন শিক্ষক থেকে শুরু করে শিক্ষাকর্মী ও পড়ুয়াদের অভিভাবকও। চৈতালিদেবী বলেন, “কারও কোনও কাজ বাকি থাকলে তিনি নিজের হাতে করে দিতেন। ২০১৭ সালে দিব্যেন্দুবাবু শিক্ষারত্ন সন্মানে ভূষিত হন।”

ওই কলেজের মাস কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজ়ম বিভাগের প্রধান অনির্বাণ বসু রায়চৌধুরী জানান, শুধু কলেজের মধ্যেই নিজের কাজ সীমাবদ্ধ রাখেননি দিব্যেন্দুবাবু। রাজারহাটের বারপোল নামে একটি গ্রাম তাঁর উদ্যোগেই দত্তক নিয়েছিল ডিরোজিয়ো কলেজ। অনির্বাণবাবু বলেন, “ওই গ্রামের একটি আদিবাসী স্কুলের ৬০-৭০ জন পড়ুয়ার বই, জামা, জুতো থেকে নানা ধরনের উপহার দিতেন উনি। এক বার ওই গ্রামে খুব ম্যালেরিয়া হচ্ছিল। নিজের হাতে মশারি বিলি করতে গিয়েছিলেন উনি।” অনির্বাণবাবু জানান, করোনার সময়েও দিব্যেন্দুবাবু প্রায় প্রতিদিনই কলেজে আসতেন। তাঁর উদ্যোগেই কলেজের রসায়ন বিভাগে তৈরি করা হয়েছিল স্যানিটাইজ়ার। সেগুলি বিলি করা হয়েছিল রাজারহাটের আর্থিক ভাবে দুর্বল মানুষদের মধ্যে। অনির্বাণবাবু বলেন, “ওঁর ৬০-এর উপরে বয়স হয়েছে বলে আমরা সাবধানে থাকতে বলতাম। উনি উল্টে মৃদু হেসে বলতেন, ‘তোমরা সাবধানে থেকো। খুব খারাপ সময়। তবে এই সময় কেটে যাবে।’”

কিন্তু খারাপ সময় কেটে যাওয়ার আগেই দিব্যেন্দুবাবুর চলে যাওয়া কেউ মানতে পারছেন না। কলেজের শিক্ষকদের সূত্রে জানা গিয়েছে, দিব্যেন্দুবাবুর বাড়ি লেক টাউনে। ছেলের সঙ্গে থাকতেন তিনি। তাঁর স্ত্রী আগেই মারা গিয়েছেন। গত ২৪ তারিখ থেকে তাঁর শরীর খারাপ হতে শুরু করে। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। করোনা পরীক্ষা করালে পজ়িটিভ ধরা পড়ে। ২৬ তারিখে তিনি চিনার পার্ক সংলগ্ন একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হন। সোমবার বিকেল থেকে তাঁর অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তথা ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, “যে কোনও সমস্যা নিয়ে স্যরের কাছে যাওয়া যেত। স্যর ছাড়া কী ভাবে কলেজ চলবে, জানি না। আমরা কেউ কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

COVID 19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE