ক্ষণিকের স্বস্তি। তপ্ত দুপুরে শহরের এক ট্যাক্সিচালক। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ।
গরমের প্রভাব এ বার পড়তে পারে শহরের ট্যাক্সি পরিষেবায়!
শুক্রবার রিচি রোডের পরে শনিবার সুকান্ত সেতু। ফের মৃত্যু হল শহরের এক ট্যাক্সিচালকের। ট্যাক্সিচালক সংগঠন ও মৃতদের পরিবারের দাবি, গরমের জেরেই মৃত্যু হয়েছে ওই দুই চালকের। শনিবার ট্যাক্সিচালক শত্রুঘ্ন পোদ্দারের (৫২) মৃত্যুর পরেই গরমের দিনে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত ট্যাক্সি না চালানোর আবেদন করেছে সিটু-র ট্যাক্সিচালক ইউনিয়ন। অধিকাংশ চালক সংগঠনই সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে সমর্থনও জানিয়েছে। ট্যাক্সিমালিক সংগঠন ‘বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন’ আবার ওই আবেদনকে সমর্থন করা ছাড়া আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে। সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে, ওই সময়ে যাত্রী প্রত্যাখানের অভিযোগে কোনও চালককে যাতে জরিমানা করা না হয়, সেই দাবিতে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী ও পরিবহণসচিবের কাছে লিখিত আবেদন পাঠানো হবে।
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার সকাল পৌনে আটটা নাগাদ সুকান্ত সেতুর কাছে একটি ট্যাক্সিতে চালককে স্টিয়ারিংয়ে মাথা দিয়ে উপুড় হয়ে বসে থাকতে দেখেন কয়েক জন যুবক। ডাকাডাকিতেও সাড়া না মেলায় স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় শত্রুঘ্নবাবুকে। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। শত্রুঘ্নবাবুর পরিবারের দাবি, গরমের জেরেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। তবে পুলিশের দাবি, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
সিটু-র ট্যাক্সিচালক ইউনিয়নের নেতা প্রমোদ ঝা-র দাবি, শুক্রবার রিচি রোডে সুরিন্দর পাসোয়ানের মতোই এ দিন শত্রুঘ্ন পোদ্দারের মৃত্যু হয় গরমের জেরে। তাই সমস্ত ইউনিয়নের কাছে আবেদন করা হয়েছে, সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত চালকেরা যেন ট্যাক্সি না চালান। প্রমোদবাবু বলেন, ‘‘এটা নেহাতই আবেদন। যে চালকেরা ট্যাক্সি চালাতে চাইবেন, তাঁদের বাধা দেব না।’’ গরমের সঙ্গে অস্বস্তি যে ভাবে বাড়ছে, তাতে বেশির ভাগ চালক অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। যাঁরা তা সহ্য করতে পারেননি, তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
একই কথা সিটু নেতা সুভাষ মুখোপাধ্যায়েরও। তিনিও বলেন, ‘‘এটা বন্ধ বা ধর্মধট নয়। নেহাতই মানবিক আবেদন। চালকদের জীবনের কথা ভেবেই আবেদন করা হয়েছে।’’ ট্যাক্সিমালিক সংগঠন ‘বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক বিমল গুহ অবশ্য এই অবস্থার জন্য সরকারকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘শহরে কোনও সরকারি ট্যাক্সি স্ট্যান্ড নেই। চালকেরা যে কোথাও একটু জিরিয়ে নেবেন, সে উপায় নেই। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ১১টা থেকে ৪টে পর্যন্ত আমাদের সংগঠনের কোনও চালক ট্যাক্সি চালাবেন না। আমি অন্য সংগঠনকেও আবেদন করেছি। তবে কেউ যদি স্বেচ্ছায় ট্যাক্সি চালাতে চান, আমরা তাঁকে বাধা দেব না।’’
শাসক দল প্রভাবিত ট্যাক্সিচালক সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সিমেনস ইউনিয়ন’-এর নেতা শম্ভুনাথ দে অবশ্য উল্টে যাত্রীদেরই সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘চালকদের ট্যাক্সি চালাতে নিষেধ করতে পারি না। কিন্তু দুপুরে যদি কোনও চালক যেতে না চান, তবে যাত্রীরা সহযোগিতা করলে ভাল হয়।’’
বেসরকারি বাসমালিকেরাও এ বিষয়ে কিছুটা সহমত। মিনিবাস অপারেটার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা অবশেষ দাঁ বলেন, ‘‘প্রচণ্ড গরমে যে চালক বা কন্ডাক্টরেরা অসুস্থ হয়ে পড়বেন, তাঁদের যেমন বাস চালাতে নিষেধ করেছি, তেমনই যাঁরা চালাতে পারবেন তাঁদের নিষেধ করছি না।’’ ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেট্স’-এর নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা বাস বন্ধ রাখতে বলিনি। তবে ১২টা থেকে ৪টে রাস্তায় এমনিতেই যাত্রী কম থাকে। বাসও কম চলে। তাই চালক ও কন্ডাক্টরকে গরমের হাত থেকে বাঁচতে যথেষ্ট সাবধান থাকতে বলা হয়েছে।’’ শুধু বাস-ট্যাক্সি নয়, বিভিন্ন অটো ইউনিয়নের তরফেও একবাক্যে জানানো হয়েছে, অসুস্থ হয়ে পড়লে চালক যেন অটো না চালান।
এর পরেই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে শহরবাসীর মনে। ট্যাক্সি কলকাতার অপরিহার্য পরিবহণ মাধ্যমের মধ্যে অন্যতম। ১১টা থেকে ৪টে পর্যন্ত রাস্তা থেকে ট্যাক্সি উধাও হয়ে গেলে অসুবিধায় পড়তে হবে বলে আশঙ্কা তাঁদের। এ বিষয়ে এক পরিবহণকর্তা বলেন, ‘‘অসহ্য গরম পড়েছে। তাই যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন বা ট্যাক্সি চালাতে না চান, তা হলে মানবিকতার খাতিরেই কিছু বলার নেই।’’
কিন্তু যাত্রীদের ভোগান্তির বিষয়ে কি সরকারের কিছু করার নেই?
উত্তরে ওই কর্তা বলেন, ‘‘শহরে গাড়ি হয়তো কম থাকবে। কিন্তু একেবারেই থাকবে না, তেমনটা নয়। এমনিতেই দুপুরে যাত্রী কম থাকে। ফলে অসুবিধা হবে বলে মনে হয় না। যদি সে রকম অসুবিধা হয়, তবে সরকার সেইমতো পদক্ষেপ করবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy