বিকল্প: টালা সেতুর উদ্বোধন হলেও এখনই বন্ধ হচ্ছে না চিৎপুর লেভেল ক্রসিংয়ের এই রাস্তা। নিজস্ব চিত্র
যেন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি! ঝাঁটা হাতে কেউ ছুটছেন সেতুর এ দিক-ও দিক, ঝাঁটা দিয়ে একাই সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন সেতুর রাস্তার ম্যাস্টিকের ছাঁট। কেউ আবার সেতুতে পথচারীদের জন্য নির্দিষ্ট অংশের কাজ শেষ করতে ব্যস্ত। কেউ সেতুর গায়ে লেপে চলেছেন নীল-সাদা রং। প্রবল উদ্যমে চলছে সেতুর রাস্তায় পিচ ফেলার কাজও।
শ্যামবাজারের দিকে সেতুর সামনে মঞ্চ তৈরির তোড়জোড়ও পিছিয়ে নেই। বিরাট মাপের রকমারি আলো থেকে পুজোর ব্যানারের জন্য বাঁশের কাঠামোর গায়ে ঝোলানো মাইক— রয়েছে সব ব্যবস্থাই। রয়েছে দোতলা সমান উচ্চতায় উঠে সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই বাঁশ বাঁধার তৎপরতা। চলছে সেতু ‘উপহার’ দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ এবং স্বাগত জানিয়ে ব্যানার, পোস্টার লাগানোর প্রতিযোগিতাও।
নবনির্মিত টালা সেতুর উদ্বোধন ঘিরে বুধবার সন্ধ্যায় এমনই তৎপরতা টালা চত্বরে। জায়গাটি যেন স্থানীয়দের কাছে শারদোৎসবের নতুন আকর্ষণ। আজ, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টেয় সেখানে পৌঁছনোর কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সূত্রের খবর, লেক টাউন ও সল্টলেকের পরে ওই দিন টালা চত্বরের একটি পুজো উদ্বোধন করার কথা রয়েছে মমতার। সেটা করার পরেই সরাসরি টালা সেতুর উদ্বোধনে যেতে পারেন তিনি।
এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, শ্যামবাজার থেকে টালা সেতুতে ওঠার মুখেই তৈরি হয়েছে বিশাল মঞ্চ। মঞ্চের বাঁ দিকের রাস্তায় এবং মঞ্চের সামনের অংশে থাকছে দর্শকদের বসার ব্যবস্থা। গোটা সেতুটি বিকেল সাড়ে ৪টের পরে খুলে দেওয়া হতে পারে সাধারণের জন্য। সেতু নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কর্মীদের ছুটিও থাকতে পারে উদ্বোধন উপলক্ষে।
তবে উদ্বোধন হলেও এখনও সেতুটির কিছু কাজ বাকি রয়েছে বলে জানাচ্ছেন সেতু নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার আধিকারিকেরা। যেমন, শ্যামবাজার থেকে ডানলপের দিকে যাওয়ার বাঁ দিকের ফ্ল্যাঙ্কের কিছু জায়গায় ম্যাস্টিকের কাজ বাকি রয়েছে। সেতুর ওই দিকের ফ্ল্যাঙ্কের রাস্তা সমান করার কাজও বাকি। ফলে উদ্বোধন হলেও সঙ্গে সঙ্গেই সেতু দিয়ে যান চলাচল করতে দেওয়া না-ও হতে পারে বলে খবর। তাই সেতুর মুখ আটকে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে বলেও দাবি নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত অনেকের। সেতু তৈরির কাজে যুক্ত এক আধিকারিক যেমন বললেন, ‘‘অনুষ্ঠান চলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত। ফলে উদ্বোধনের পরেই মঞ্চ হয়তো খুলে নেওয়া যাবে না। তাই সেতুতে গাড়ি উঠলেও শুক্রবারের আগে নয়। তবে তা করা হলেও ডানলপের দিক থেকে শ্যামবাজারগামী ফ্ল্যাঙ্কটিই ব্যবহার হবে ছোট গাড়ির জন্য।’’ তাঁর দাবি, এর পরে পাশের ফ্ল্যাঙ্কটি তৈরি হয়ে গেলে রাতে যান চলাচল বন্ধ রেখে সেরে ফেলা হবে সেতুর অবশিষ্ট কাজ।
সেতুর নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আধিকারিক আবার বললেন, ‘‘সেতুর নীচে লাগানো লোহার কাঠামোগুলি খোলাই সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেটা ঠিকঠাক না করা পর্যন্ত নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না। আবেদন জানিয়েছি, পুজোর পরে অন্তত রাতে সেতুতে যান চলাচল বন্ধ রেখে কাঠামো খুলতে দিতে হবে।’’ এ ছাড়াও, সেতুতে ওঠা-নামার মুখে ট্র্যাফিক সিগন্যালের কাজ, সেতুর এক দিকে পথচারীদের হাঁটার জায়গা তৈরির কাজ বাকি। তার পরেও সার্ভিস রোড ও চিৎপুরের দিকে সেতুর অংশের কাজ অনেকটাই বাকি থাকবে। ওই আধিকারিকের আক্ষেপ, ‘‘দু’মাস ধরে রাত-দিন কাজ করেও সব শেষ করা যায়নি। অন্তত চতুর্থী পর্যন্ত সময় পেলে কাজ পুরো শেষ করে দারুণ সেতু উপহার দেওয়া যেত।’’
এই সব দাবি অবশ্য মানতে নারাজ প্রশাসনের সকলেই। পূর্ত দফতরের এক কর্তা সন্ধ্যায় সেতুর কাজ দেখতে এসে বললেন, ‘‘প্রচুর সময় দেওয়া হয়েছে। জোর করে আদায় না করলে অনন্তকাল ধরে সেতুর কাজ চলবে। মুখ্যমন্ত্রীর হাতে উদ্বোধনটা হয়ে যাক, অল্পস্বল্প যা কাজ বাকি আছে, তা বুঝে নেওয়া যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy