প্রতীকী ছবি
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে এ-ও যেন এক ‘নির্বাচন’ প্রক্রিয়া। তবে সেটা দলমত নির্বিশেষে করোনার বিরুদ্ধে ‘নির্বাচন’।
শনিবার সকাল থেকে বিকেল— একেবারে নির্বাচনের কায়দাতেই রাজ্যের প্রতিটি জেলার মতো কলকাতাতেও চলল ‘কোভিশিল্ড’ প্রতিষেধক নেওয়ার প্রক্রিয়া। নির্দিষ্ট কেন্দ্র, সেখানে গিয়ে পরিচয়পত্র দেখানো, ঘেরা জায়গা, লাইন— সবই ছিল গোটা প্রক্রিয়ায়। সকাল সকাল সচিত্র পরিচয়পত্র নিয়ে নির্দিষ্ট হাসপাতালের ভ্যাকসিন কেন্দ্রের সামনে পৌঁছে গিয়েছিলেন তালিকাভুক্ত গ্রহীতারা। নিরাপত্তারক্ষী বা পুলিশের কাছে তা দেখানোর পরেই ভ্যাকসিন কেন্দ্রের সামনের লাইনে দাঁড়িয়েছেন সকলে। একটি হাসপাতালের এক আধিকারিকের মন্তব্য, ‘‘এ তো ‘মিনি ভোট’! একেবারে সেই কায়দাতেই সব হল। শুধু এখানে ইভিএমের বোতাম টিপতে হয়নি। বদলে হাতে সুচ ফোটানো হয়েছে।’’
ভোট কেন্দ্রে সচিত্র পরিচয়পত্র দেখে, ভোটার তালিকার নাম মিলিয়ে, আঙুলে কালির দাগ দেওয়ার পরেই যেতে দেওয়া হয় পর্দা ঘেরা ভোটদানের জায়গায়। ঠিক সে ভাবেই ভ্যাকসিন কেন্দ্রের লাইন থেকে ভিতরে ঢোকার সময়ে গ্রহীতাদের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে, তালিকার নাম মিলিয়ে তবেই দেওয়া হচ্ছিল রেজিস্ট্রেশন স্লিপ। তা নিয়ে প্রতীক্ষা কক্ষে অপেক্ষা করার পরে ভ্যাকসিন নেওয়ার ঘরে যাওয়ার ডাক আসছিল। সেখানে ফের নথি পরীক্ষা করিয়ে তবেই গ্রহীতারা যেতে পেরেছেন সবুজ কাপড়ে আড়াল করা জায়গায়। যেখানে হাতে দেওয়া ‘কোভিশিল্ড’-এর প্রথম ডোজ়। তার পরে ওই রেজিস্ট্রেশন স্লিপে স্ট্যাম্প মেরে, সময় লিখে গ্রহীতাকে পাঠানো হয়েছে পর্যবেক্ষণ ঘরে। আধ ঘণ্টা সেখানে কাটানোর পরে মিলেছে ছুটি।
আরও খবর: বউবাজারে বৃদ্ধ খুন, মাথায় বাড়ি প্রেসার কুকারের, গলায় ধারালো ছুরির কোপ
আরও খবর: পলাতক অভিযুক্তদের তালিকা চাইল নির্বাচন কমিশন
এ দিন সকালে এসএসকেএমের দ্বিতীয় গ্রাহক অমৃত পয়রা বললেন, ‘‘খুব আনন্দ হচ্ছে। এমন ঐতিহাসিক দিনের সাক্ষী থাকলাম।’’ আবার পিয়ারলেস হাসপাতালের রান্নাঘরের কর্মী রাজকুমার ঘরামি বললেন, ‘‘ভয় কিসের! করোনাকে জয় করতে প্রতিষেধক তো নিতেই হবে।’’ পিয়ারলেস হাসপাতালের তরফে সুদীপ্ত মিত্র বলেন, ‘‘কোনও ধাপেই যাতে কোনও খুঁত না থাকে, সে দিকে নজর রাখা হয়েছে। প্রত্যেককে বিষয়টি বোঝানো হয়েছে। তার পরেও ব্যক্তিগত মতামত তো রয়েইছে।’’ ঢাকুরিয়া আমরিতে প্রতিষেধক নিয়ে বেরোনোর সময়ে গ্রহীতাদের হাততালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্য কর্মীরা। গোটা পর্বটি দাঁড়িয়ে থেকে দেখভাল করেছেন সেখানকার কর্তা রূপক বড়ুয়া।
এ দিন শহরে মেডিক্যাল কলেজ, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, আর্বান প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র মিলিয়ে ২০টি কেন্দ্র ছিল। ১০০ জন করে মোট দু’হাজার গ্রাহক ছিলেন। রাতে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এ দিন শহরে মোট ১৮৪০ জন (৯২ শতাংশ) প্রতিষেধক নিয়েছেন। সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলা ওই প্রদান পর্বে কত জন প্রতিষেধক নিলেন, কতগুলি ভায়াল রয়েছে, নির্দিষ্ট সময় অন্তর করা সেই হিসেব স্বাস্থ্য ভবনে পাঠিয়েছেন প্রতিষেধক কেন্দ্রের আধিকারিকেরা। যেমন, দুপুর ১টায় পিজিতে সংখ্যাটি ছিল ৩০। ২টোর সময়ে পিয়ারলেস হাসপাতালে সেই সংখ্যা ছিল ৪০, ৪টে নাগাদ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ৭০। আর বিকেল ৫টায় প্রতিষেধক প্রদান পর্ব শেষ হওয়ার পরে জানা যায়, এনআরএসে মোট ৭০ জন, উত্তর ২৪ পরগনার দত্তাবাদ প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং বিধাননগর মহকুমা হাসপাতাল মিলিয়ে ১২৫ জন এবং হাওড়া জেলার আটটি কেন্দ্র মিলিয়ে ৮৬ শতাংশ গ্রাহক প্রতিষেধক নিয়েছেন।
শহরের প্রতিটি কেন্দ্রেই ছিল পুলিশি পাহারা। সকালেই পিজিতে হাজির হন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের রাজ্য-অধিকর্তা সৌমিত্র মোহন, কলকাতা পুরসভার কমিশনার বিনোদ কুমার ও স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। প্রত্যেকেই বাইরে এসে বলেছেন, ‘‘মসৃণ ভাবে সব কিছু চলছে।’’ আবার প্রতিষেধকের প্রথম গ্রহীতা রাজা চক্রবর্তীকে উৎসাহ দিয়ে ফিরহাদের মন্তব্য ছিল, ‘‘ট্রায়ালের দু’টি ডোজ় নিয়েই নিজেকে চাঙ্গা লাগছে। আমার মতো বুড়ো নিতে পারলে তুমিও পারবে।’’ এ দিন পিজি এবং এনআরএসে প্রতিষেধক নিতে পৌঁছে গিয়েছিলেন রাজ্যের বাছাই করা মোট সাত বিশিষ্ট চিকিৎসকও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy