Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Musical Concert

কালার প্রেমে সুর সায়রে সায়রা বানু

কোভিড-উত্তর কালে সায়রা দিদির সঙ্গে গ্রামের অন্য কয়েক জন মেয়েও হারানো গানের চর্চায় এগিয়ে এসেছেন। স্মৃতি হাতড়ে বিয়ের পুরনো গীত মেলে ধরতে নিজেদের দল লীলাবালিকে ঢেলে সাজা হয়েছে।

করোনার আগে শহরে ‘সুর জাহান’-এর আসর।

করোনার আগে শহরে ‘সুর জাহান’-এর আসর। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:০২
Share: Save:

মিশরের দরবেশ আমির এলটনিকে আগেও দেখেছে এ শহর। সুরে বিভোর সৌম্য প্রবীণের অদ্ভুত সাধনা। ৬০ বছর পেরিয়েও গানবাজনার সঙ্গে নাগাড়ে বন বন করে ঘুরতে পারেন। মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ায় চুঁয়া গ্রামের বধূ সায়রা বানুর সঙ্গে গল্ফ গ্রিন সেন্ট্রাল পার্কে তাঁর দেখা হচ্ছে।

‘সুর জাহান উৎসব’-এ আসার প্রাক্কালে ফোনালাপে সায়রা দু’কলি শোনালেন, ‘কা-লো জল আনতে গিয়ে কালাকে মনে পড়ে রে / কালার মাথার উজন টেরি আমার নয়নে ঘুরে রে!’ বোঝালেন, “উজন মানে উঁচু করে টেনে চুলে টেরি কাটা! আর কালা, কালাচাঁদ হল মনের মানুষ! মেয়েদের স্বামীর কল্পনায় কৃষ্ণের নাম।”

এক সময়ে গ্রামবাংলার মুসলিম ঘরের বিয়ে মানেই মেয়েদের মজাদার সব গানে ভরে থাকত রং-তামাশা। মধ্য পঞ্চাশ-উত্তীর্ণ সায়রা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, “কত অনুষ্ঠান যে উঠে গেল! বিয়ের আগে পানসিন্নি (পাকা কথা), এক দিন আগে গায়ে হলুদ, বর-কন্যাকে মিষ্টি খাইয়ে আশীর্বাদের অনুষ্ঠান থুবড়ো! কিছুই গান, নাচ বাদ দিয়ে হত না! আমাদের মেয়ে, জামাইও অষ্টমঙ্গলা করতে জোড়ায় আসে! তখন নানি, দাদিরাও কত মজা করেন। মেয়েরা ঢোলক বাজিয়ে ছেলে সেজে নাচ-গানও করত।”

কোভিড-উত্তর কালে সায়রা দিদির সঙ্গে গ্রামের অন্য কয়েক জন মেয়েও হারানো গানের চর্চায় এগিয়ে এসেছেন। স্মৃতি হাতড়ে বিয়ের পুরনো গীত মেলে ধরতে নিজেদের দল লীলাবালিকে ঢেলে সাজা হয়েছে। আগামী ৩-৫ ফেব্রুয়ারি সুর জাহান উৎসবে মিশরের মাওলাইয়া-র দরবেশদের মতো সায়রা বানুদের গানও শোনা যাবে। উৎসবের কর্ণধার অমিতাভ ভট্টাচার্যের কথায়, “সারা পৃথিবীর গানবাজনার কিছু ধারা মিলিয়েই কলকাতার মাঠে আমাদের উৎসব হয়। গত এক যুগে পৃথিবীর ৩২টি দেশের গানবাজনার দল এখানে ঘুরে গিয়েছে।” তবে, শহুরে সাজানো জলসার সঙ্গে এই সুর-বিশ্বের ফারাক আছে। নানা ধরনের অধ্যাত্ম জীবনের পরম্পরা, প্রাচীন বাদ্যযন্ত্রের সংস্কৃতি থেকে রংবেরঙের সামাজিক লোকাচারের সঙ্গে জুড়ে থাকা সঙ্গীতই এই উৎসবের প্রাণ। পারিবারিক বা গোষ্ঠীগত ঘরানা-শিল্পী থেকে লোকসঙ্গীত প্রসারে ব্রতী শিল্পীজন, সকলের দেখা মিলবে এই উৎসবে।

অমিতাভ বলছিলেন, “এতশত সাঙ্গীতিক ধারায় দেশ, কাল, ধর্মেরও ভেদ নেই।” যেমন, এ বারই উত্তর আয়ারল্যান্ডের গানবাজনার দল ‘ম্যাডাগান’ নানা ধরনের সাবেক বাজনার মহিমা নিয়ে হাজির হচ্ছে। বিকানিরের কাছে দরগার সুফি-শিল্পী মির সম্প্রদায়ের দলবলও থাকছে এই অনুষ্ঠানে। পর্তুগালের লিসবনে ওমেক্সের মতো মর্যাদার আসরে গত বছর মাত করেছিলেন শান্তিনিকেতনের পারুলডাঙার রীনা দাস বাউল। এ ছাড়াও থাকবেন রাঢ় দরবারি ঝুমুর শিল্পী, বাঁকুড়ার অর্পিতা চক্রবর্তী বা জলঙ্গির বাঙালি কাওয়াল ‘ছোটে গোলাম’। লোকসঙ্গীতের নানা ধারা নিয়ে নিরীক্ষায় ব্যস্ত শুভদীপ গুহ, জয়শঙ্কর, দেবলীনাদের ‘ফোকস অব বেঙ্গল’ও উৎসবের আকর্ষণ। কোভিডের জন্য দু’বছর বন্ধ ছিল এই আসর। সুর-সেতুর মায়ায় গোটা বিশ্বকে ছুঁতে চাইছে কলকাতা।

অন্য বিষয়গুলি:

Musical Concert Sur Jahan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE