জনপ্রিয় সাহিত্যের লক্ষণ কী? জনসংস্কৃতিতে তার ছড়িয়ে যাওয়া। যেমন ছড়িয়ে গিয়েছে অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড, বা বাঙালির চিরচেনা ফেলুদা-কাহিনি— তার চরিত্র ও সংলাপ মানুষের মুখে মুখে ফেরে, তেমনই পোশাক খাবার সিনেমা নাটক দোকান এমনকি বিয়ের ‘থিম’-এও ঢুকে পড়ে জানান দেয়, তার ঠাঁই এখন সংস্কৃতির রক্ত সংবহনতন্ত্রে। সুকুমার রায়ের আবোল তাবোল এ ক্ষেত্রে কতটা ওজনদার? প্রকাশের একশো বছর পরেও তার জনপ্রিয়তা নিয়ে সন্দেহ নেই: বইপাড়ায় অবিরল প্রকাশ ও বিক্রি, ইংরেজি অনুবাদ, পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তিই প্রমাণ।
আর জনসংস্কৃতিতে তার উপস্থিতি? গত বছর দুর্গাপুজোতেই উত্তর কলকাতার এক পুজোমণ্ডপে মানুষের ঢল নেমেছিল আবোল তাবোল আর সুকুমার-বিশ্বকে দু’চোখ ভরে দেখার সাধ মেটাতে। এর চেয়ে বড় প্রমাণ কী-ই বা? তবে এর বাইরেও, বাঙালির ঘরোয়া সংস্কৃতির আনাচে-কানাচে, লোকচক্ষুর অগোচরেও পড়ে থাকে অগণিত মণিমুক্তো। সবাই খোঁজ রাখেন না তার, পানও না। সেখানেই ভূমিকা সংগ্রাহকদের।
এ শহরের সংগ্রাহকদের অভিভাবক ও পৃষ্ঠপোষক, ভবানীপুরের পরিমল রায় গত আট দশক ধরেই তেমন মণিমুক্তো খুঁজে চলেছেন। এখন বয়স ৮৮, বছর পনেরো বছর আগে তাঁর বড়দির মৃত্যুর পরে এক দিন হঠাৎ আবিষ্কার করেন, দিদির হাতের সুচ-সুতোয় ‘আঁকা’ দু’টি শিল্পকাজ— কালী ও নাড়ুগোপালের ছবি— অযত্নে পড়ে আছে। ছবি দু’টো নতুন করে বাঁধাতেই, “দেখে যেন চোখ খুলে যায়, কী অসাধারণ শিল্পকর্ম!” সেই থেকে শুরু তাঁর সুচ-সুতোর শিল্পকর্ম সংগ্রহ ও সংরক্ষণের। তারই সূত্র ধরে, নয়-দশ বছর আগে তাঁর হাতে আসে আবোল তাবোল-এর একটি কবিতা, এও সূচিকর্মে শোভিত! অসাধারণ সূচিশিল্পের নিদর্শন হিসাবেই নয় শুধু, বিষয়বস্তুর নির্বাচনের অভিনবত্বও মুগ্ধ করে তাঁকে। শুরু হয় ‘গুপ্তধন’ খোঁজা। এ ভাবেই একের পর এক খুঁজে বার করেন আবোল তাবোল-এর ছড়াগুলির সূচিশিল্পের নিদর্শন। পরিমলবাবুর সঙ্গে এই কাজে সঙ্গী হন আর এক সংগ্রাহক, বৌবাজারের বাসিন্দা জয়ন্তকুমার ঘোষ। পেশায় ব্যবসায়ী, নেশা পুরনো জিনিস সংগ্রহ, তাদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখা। দু’জনের প্রচেষ্টায় শুরু হয় নামহীন শিল্পীর মুনশিয়ানা জনসমক্ষে তুলে ধরার আয়োজন।
সূচিশিল্পগুলির মধ্যে পরিমলবাবুর দৃষ্টি আকর্ষণ করে একটি ফ্রেম, যেখানে সেলাইয়ে ফুটে উঠেছে সুকুমার রায়ের মুখ (ডান দিকের ছবি)। ছবিতে তারিখ ‘১৯ সেপ্টেম্বর ১৯২১’। পরিমলবাবুর কথায়, “আশ্চর্য হয়ে ভাবি এই তারিখটির তাৎপর্য কী, কারণ এ তো সুকুমার রায়ের জন্ম বা মৃত্যুদিন নয়। পরে আবিষ্কার করি, আবোল তাবোল এই দিনেই প্রকাশিত হয়!” তা আরও দু’বছর পরের ঘটনা, স্বয়ং স্রষ্টাও তখন প্রয়াত, তবু কী আশ্চর্য সমাপতন। অশীতিপর ‘গুরু’র সম্মানে ও আবোল তাবোল-এর শতবর্ষ উদ্যাপনে এই সূচিশিল্পগুলি প্রদর্শনের উদ্যোগ করেছেন জয়ন্তবাবু, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে নেহরু চিলড্রেন’স মিউজ়িয়ম। আগামী ২০ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় সেখানেই শুরু হচ্ছে সূচিচিত্রগুলির প্রদর্শনী, উদ্বোধন করবেন সন্দীপ রায়। প্রদর্শনী ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, সোমবার বাদে রোজ সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা। ছবিগুলি দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে নতুন বছরের একটি দেওয়াল-ক্যালেন্ডারও, সেও সুখবর।
জন্মদিনে
কাজের ফাঁকে অবকাশ মিললেই ডুব দিতেন ছবি-আঁকায়। ১৯ জানুয়ারি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে সৌমিত্র ও দীপা চট্টোপাধ্যায় ফাউন্ডেশন-এর তরফে সৌমিত্রর আঁকা ছবির প্রদশর্নী, শুরু ২০ জানুয়ারি যোগেন চৌধুরী সেন্টার ফর আর্টস ‘চারুবাসনা’য়। ওখানেই আর একটি গ্যালারিতে সৌমিত্র-অভিনীত ছবি ও নাটকের স্থিরচিত্র, পোস্টার, লবিকার্ড, বুকলেট, কস্টিউম-এরও প্রদর্শনী, ৩০ জানুয়ারি অবধি। “যোগেনদারই উৎসাহে এ ভাবে প্রদর্শনী করা সম্ভব হচ্ছে,” জানালেন পৌলমী চট্টোপাধ্যায়, শুরুর সন্ধ্যায় তিনি পাঠ করবেন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে সৌমিত্র-রচিত আলেখ্য ‘প্রতিদিন তব গাথা’, সঙ্গে দেবনাথ চট্টোপাধ্যায় মানস মুখোপাধ্যায় রঞ্জিনী মুখোপাধ্যায় অরিজিৎ মৈত্র। সামগ্রিক উদ্যোগে তপন সিংহ ফাউন্ডেশন ও ‘মুখোমুখি’। মুখোমুখি-র প্রযোজনায় ১৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মধুসূদন মঞ্চে অভিনীত হবে নাটক টাইপিস্ট।
সুন্দরবন নিয়ে
বছরভর একটি ক্ষেত্রকেই ঘিরে বিস্তৃত চর্চা বড় সহজ নয়। শুধু সুন্দরবন চর্চা পত্রিকা সে কাজই করে যাচ্ছে নিষ্ঠায়। জল জঙ্গল মানুষ পরিবেশের সঙ্কট ও সম্ভাবনার কথা তারা তুলে ধরে নানা অনুষ্ঠান ও কাজে; প্রতি বছর ‘শুধু সুন্দরবন চর্চা বক্তৃতা’ ও পুরস্কার প্রদানও যার অঙ্গ। ২০২৪-এর সম্মাননা অনুষ্ঠান হয়ে গেল গত ২৩ ডিসেম্বর রোটারি সদনে। ‘বাঘ, মানুষ ও সুন্দরবন’ নিয়ে বললেন অনু জালে; পত্রিকা সম্মানেও ভূষিত হলেন ফরেস্ট অব টাইগারস: পিপল, পলিটিক্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ইন দ্য সুন্দরবনস গ্রন্থের লেখক, লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স-এর এই প্রাক্তনী। সুন্দরবনের বালি দ্বীপে চার দশকব্যাপী সেবাকাজের জন্য সম্মানিত হলেন সুকুমার পয়রা। ছিলেন অনমিত্র অনুরাগ দণ্ড, কল্যাণ রুদ্র প্রমুখ।
স্মরণীয়
বিজ্ঞানের ছাত্র, ইতিহাস ভালবেসে লিখেছিলেন নিজ গ্রামের ইতিবৃত্ত, পড়ে আশীর্বাণী পাঠিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সুধীরকুমার মিত্র পরিণত বয়সে পাঁচশো গ্রাম পায়ে হেঁটে লিখে ফেলেন হুগলী জেলার ইতিহাস। সাময়িকী সম্পাদনা করেছেন, লিখেছেন ইতিহাস, পুরাকীর্তি; রাসবিহারী বসু নেতাজি প্রফুল্ল চাকী বাঘাযতীন কানাইলালের জীবনী। ১৯৪২-এ প্রফুল্লকুমার সরকারের সঙ্গে গড়ে তোলেন বঙ্গ ভাষা সংস্কৃতি সম্মেলন; কলকাতায় স্কুল ও কলেজ স্থাপনাতেও তাঁর অগ্রণী ভূমিকা। ১৯৯৪ থেকে তাঁর স্মরণে স্মারক বক্তৃতা আয়োজন করছে কলকাতা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, সেগুলি একত্রে প্রকাশিত ইতিহাস, সমাজ ও সংস্কৃতি গ্রন্থেও। শতবর্ষে দু’খণ্ডে বেরিয়েছে পরিবর্ধিত হুগলী জেলার ইতিহাস ও বঙ্গসমাজ। ১১৬তম জন্মদিনে গত ৫ জানুয়ারি তাঁকে স্মরণ করলেন বিশিষ্টজন, কালীঘাটের বাড়িতে।
দুই মনীষী
কুসংস্কার-বিরোধিতা ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁদের হাতিয়ার ছিল শিক্ষা, বিজ্ঞান-চর্চা, যুক্তিবাদ, প্রগতিভাবনা। উনিশ শতকের বঙ্গীয় সমাজে অচলায়তন ভেঙেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমার দত্ত। দুই চিন্তানায়ক মনীষীর স্মরণে আগামী কাল, ১৪ জানুয়ারি বিকেল ৫টায় রামমোহন লাইব্রেরির রায়া দেবনাথ হল-এ আয়োজিত হচ্ছে আলোচনাচক্র ‘অক্ষয়কুমার দত্ত ও বিদ্যাসাগরের শিক্ষাভাবনা, প্রয়োগ এবং বর্তমান প্রাসঙ্গিকতা’। ভারতে বিজ্ঞান-চর্চায় অক্ষয়কুমার দত্তের অবদান, বিদ্যাসাগর ও আধুনিকতা, উনিশ শতকের বাংলায় শিক্ষার প্রচার প্রয়াস ও সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করবেন আশীষ লাহিড়ী, অভ্র ঘোষ ও শান্তনু চক্রবর্তী।
মাটির টানে
বাঙালি মানে শুধু হিন্দু বাঙালি, গঙ্গাপাড়ের বাঙালি নয়; তরাইয়ের, সাগর-ছোঁয়া বাঙালিও। যাপনের নানা বয়ান লুকিয়ে বাঙালির অলঙ্কারে, বসনেও, সেই ইতিহাস আর গল্পকে বাস্তব রূপ দিচ্ছে অন্য রকম এক উদ্যোগ, ‘শৈলী’। গ্রামের কারিগরেরা বানিয়েছেন কাজললতা হার, ধানছড়া মালা, ছোট ঢেরি ঝুমকো, পদ্মপাশা, কলকা পাশা, খইয়ের মাড় দেওয়া পাছাপেড়ে শাড়ির সঙ্গে মানানসই শঙ্খলতা হাসুলি: লিখিত পত্রীতে তাঁদের নাম-পরিচয়, শাড়ির গায়ে তাঁতশিল্পীর নাম। তামা পিতল রুপোর মিশেলে থাকছে অভিনব গয়না। কুটিরের শিল্প বাঁচুক, শিকড়হারা বাঙালি ফিরুক শিকড়ে, ভাবনা ও পরিকল্পনা শৈবাল বসুর। কসবার উদয়ন কলাকেন্দ্রে আগামী ১৯ জানুয়ারি সন্ধে ৬.৪৫-এ আনুষ্ঠানিক শুরু, থাকবেন বিবি রাসেল পণ্ডিত তন্ময় বসু মমতাশঙ্কর চন্দ্রোদয় ঘোষ প্রমুখ, কবিতা পড়বেন জয় গোস্বামী।
আশ্চর্য যান
একই ফ্রেমে কল্লোলিনী কলকাতার তিন প্রাচীন— ওয়েলিংটন স্কোয়ার, হলদে ট্যাক্সি আর ট্রাম। কিংবা ময়দানের সবুজ ছুঁয়ে ট্রামের মৃদুমন্থর গতি, আশির দশকে হাওড়া ব্রিজের উপরে তার ঘর্ঘর, ডালহৌসিতে চার্চের সামনে তার রাজকীয় চলন, রফি আহমেদ কিদওয়াই রোডে টানা-রিকশার সঙ্গে একই ফ্রেমে সহাবস্থান (ছবি)। প্রিয় শহরকে নানা সময় নানা বিষয়-চুম্বকে ক্যামেরায় ধরেছেন বিজয় চৌধুরী; এ বছর বেছেছেন এমন কিছু ছবি যাদের প্রাণভ্রমরা কলকাতার ট্রাম। ছবিগুলি দিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন ইংরেজি বছরের ক্যালেন্ডার। দেখে চোখ জুড়োয় যত, মন খারাপও হয় তেমনই। ট্রামের রুট ধরেই গোটা শহর একদা বেঁধে বেঁধে থাকত: কেন বিরল, প্রায়-অদৃশ্য হল সেই আশ্চর্য যান? এখনও কলকাতার অভিজ্ঞান বলতে ট্রাম বোঝেন মানুষ; সেই ঐতিহ্য সুরক্ষিত রাখলে ভাল হত।
পুনঃপ্রতিষ্ঠা
‘গর্বের সৌধ’। জওহরলাল নেহরু রোডের সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয় ভারতের সংস্কৃতিচর্চার তীর্থভূমি। কবেই দেড়শো পেরিয়ে যাওয়া এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও প্রাক্তনী-তালিকাও রত্নখচিত। শিল্পগুরু অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যাঁর সঙ্গে আজন্ম এর আত্মার যোগ, তিনিই এর মধ্যমণি। মহাবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তাঁর আবক্ষমূর্তিটিও ভারতশিল্পের স্মরণাঞ্জলি। মূর্তিকার ছিলেন প্রাক্তন শিক্ষক, ভাস্কর সুনীলকুমার পাল। স্বয়ং অবনীন্দ্রনাথ এই মূর্তির জন্য ‘সিটিং’ দিয়েছিলেন বেশ কিছু দিন ধরে, বরাহনগর গুপ্তনিবাসে। ছাঁচ থেকে সিমেন্টে ঢালাই করা মূর্তিটি মহাবিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত ছিল তিন স্তম্ভের ঘেরাটোপে। কালপ্রবাহে জরাজীর্ণ সেই সৌধের সংস্কার ও পুনঃপ্রতিষ্ঠা হল প্রাক্তনী সঙ্ঘের প্রচেষ্টায়, শিক্ষকদের সমবেত উদ্যোগে। যুগন্ধর অবনীন্দ্রনাথের মূর্তিই শুধু নয়, আর এক শিল্পগুণী সুনীল পালের স্মৃতিও যেন পুনঃপ্রতিষ্ঠা পেল গত ৮ জানুয়ারি: প্রাক্তনী, বর্তমান শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিতে।
রামমোহন-চর্চা
সংস্কৃতি চর্চার পরিসরে যত বেশি সমষ্টি-অস্তিত্ব জেগে উঠবে, তত উন্নত হবে শহরের মন। এই ভাবনা থেকেই যাত্রা শুরু ‘আলিয়া সংস্কৃতি সংসদ’-এর। গ্রন্থপ্রকাশ, বিতর্ক, কথালাপ-সহ নানা চর্চায় নিয়োজিত এর সদস্যেরা, অনেকেই পড়ান বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে, সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণায় ব্রতী সকলেই। রাজা রামমোহন রায়ের জন্মসার্ধদ্বিশতবর্ষ উদ্যাপনে ওঁরা আলোচনা অনুষ্ঠানের উদ্যোগ করেছেন আগামী কাল ১৪ জানুয়ারি বিকেল ৩টেয়, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক সার্কাস প্রাঙ্গণের সভাঘরে। ‘রামমোহন রায় ও আমাদের আধুনিকতা’ নিয়ে বলবেন আমজাদ হোসেন পবিত্র সরকার পঙ্কজ দত্ত। দু’টি বইয়ের আনুষ্ঠানিক প্রকাশও হবে এ দিন: অভিজিৎ কুমার ঘোষ ও প্রকাশ সরকারের সম্পাদনায় একুশ শতকের চোখে রামমোহন, আর স্বপন বসুর সংবাদ-সাময়িকপত্রে উনিশ শতকের বাঙালি নারী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy