কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগের বাইরে চিকিৎসার অপেক্ষায় জগদ্বন্ধু দাস। মঙ্গলবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় শহরের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা পুনরায় স্বাভাবিক করতে মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে কর্মবিরতি তুলে নিতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু ‘বিচার’ না মেলায় অনড় জুনিয়র চিকিৎসকেরা তাঁদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেননি। ঘটনার এক মাস পরেও কর্মবিরতি চলতে থাকায় শহরের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে।
এ দিন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উত্তর ২৪ পরগনার ন্যাজাটের বাসিন্দা তপোব্রত দাস (২৪) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের বাবা মানবেন্দ্র দাসের অভিযোগ, ‘‘শনিবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে আমার একমাত্র ছেলে পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়। সেই রাতেই কলকাতার তিনটি হাসপাতাল (এম আর বাঙুর, এসএসকেএম ও ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ) ঘুরে রবিবার সকালে নীলরতন সরকারে ছেলেকে ভর্তি করি। ছেলের মাথায় জরুরি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু রবিবার কোনও নিউরো-সার্জন ছিলেন না। চিকিৎসকদের সে ভাবে দেখাই মেলেনি। সোমবার দুপুরে এক জন নিউরো-সার্জন কেবল দেখে চলে যান। চিকিৎসকেরা দ্রুত অস্ত্রোপচার করলে আমার ছেলেটা হয়তো বেঁচে যেত।’’ যদিও হাসপাতালের তরফে এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে, ভর্তির সময়েই ওই রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক ছিল। সব রকম চেষ্টা করেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি।
ঢাকুরিয়ার বাসিন্দা, প্রৌঢ়া মীনা দাস ১৮ দিন ধরে এন আর এসে ভর্তি। বাড়িতে পড়ে গিয়ে তাঁর মাথায় রক্ত জমাট বাঁধে। মীনার মেয়ে লক্ষ্মী দাসের কথায়, ‘‘মায়ের মাথায় জরুরি অস্ত্রোপচার করতে হবে। কিন্তু হাসপাতালের কর্মীরা বলছেন, ডাক্তার নেই। এখন মায়ের ছুটি করিয়ে বাড়ি নিয়ে যেতে বলা হচ্ছে। পুজোর পরের কোনও তারিখ নিয়ে ভর্তি করিয়ে অস্ত্রোপচারের কথা বলা হচ্ছে। মায়ের মাথায় এখন খুব যন্ত্রণা। এখনই অস্ত্রোপচার করাটা জরুরি। মাকে বাড়িতে রাখব কী ভাবে?’’ উত্তর ২৪ পরগনার তেঁতুলিয়ার বাসিন্দা তাপস মাইতি প্রস্রাবের সমস্যা নিয়ে রবিবার নীলরতনে ভর্তি হন। তাঁর স্ত্রী শিবা দাসের কথায়, ‘‘রবিবার ভর্তি হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। এরই মধ্যে আজ ছুটি করে দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, ডাক্তার নেই। এখন কী করব?’’
বাঁকুড়ার বড়জোড়ার বাসিন্দা জগদ্বন্ধু দাস রবিবার পানাগড়ের কোটা মোড়ে পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। তাঁর সঙ্গী দেবু বাউড়ির অভিযোগ, ‘‘রবিবার রাতে পানাগড়ের স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে সোমবার গভীর রাতে ওঁকে এসএসকেএমে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সেখানে শয্যা খালি না থাকায় মঙ্গলবার সকালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসি।’’ এ দিন দুপুর ৩টে নাগাদ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে দেখা যায়, জগদ্বন্ধুকে নিয়ে জরুরি বিভাগের বাইরে বাড়ির লোকেরা অপেক্ষা করছেন। পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, ‘‘হাসপাতালের তরফে বলা হচ্ছে, রোগীকে বাইরে নিয়ে গিয়ে কোথাও ভর্তি করাতে। এখানে চিকিৎসক নেই। কিন্তু আমরা গরিব মানুষ। কোথায় যাব?’’ বারাসতের বাসিন্দা সুধীরকুমার দেউড়ি বুকে ব্যথা নিয়ে এ দিন সকালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে আসেন। তাঁর ছেলে সুখেন দেউড়ির কথায়, ‘‘সোমবার রাত থেকে বাবার বুকে ব্যথা শুরু হয়েছে। বারাসতের হাসপাতালে নিয়ে গেলে দ্রুত কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়। আজ সকালে বাবাকে ভর্তি করলেও দুপুরে চিকিৎসক আসেন।’’
মুর্শিদাবাদের ইসলামপুরের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম কিডনির জটিল সমস্যা নিয়ে সোমবার সকালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এলেও রাত পর্যন্ত ভর্তি হতে পারেননি। মঙ্গলবার বিকেলে ট্রমা কেয়ার সেন্টারের সামনে মেঝেতে শুয়ে ছিলেন তিনি। শরিফুলের দাদা মামুদ হোসেনের অভিযোগ, ‘‘সোমবার থেকে ভাইকে ভর্তি করাতে ছোটাছুটি করলেও লাভ হয়নি। আমাদের বলা হচ্ছে, এখন ডাক্তার নেই। অন্য কোথাও ভর্তি করালে ভাল হয়। সরকারি হাসপাতাল ছেড়ে কোথায় যাব? সেই ক্ষমতা নেই।’’
গঙ্গাসাগরের বাসিন্দা, চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মাইমুনা খাতুন পায়ের চিকিৎসায় এ দিন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে বাবা-মায়ের সঙ্গে এসেছিল। দুপুরে সেখান থেকে মেয়েকে নিয়ে সোজা আর জি করে চলে আসেন মাইমুনার বাবা-মা। বাবা গঙ্গাসাগরের একটি মসজিদের ইমাম আবদুল মামুদ বলেন, ‘‘আর জি কর নিয়ে মেয়ের খুব কৌতূহল। আর জি কর দেখবে বলে বায়না ধরেছিল। তাই ওকে নিয়ে চলে এলাম। যেখানে চিকিৎসকেরা বসে আন্দোলন করছেন, সেই জায়গাটা ঘুরে দেখেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy