মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার খাতা দেখা সংক্রান্ত কাজের জন্য অনেক শিক্ষক ‘অন ডিউটি’ থাকায় পরে ছুটি পাচ্ছেন। স্কুলের শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, এর জেরে অনেক স্কুলেই পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মতো পরীক্ষার খাতা দেখার দায়িত্ব যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই তার জন্য ওই শিক্ষকদের অন ডিউটির ছুটিও প্রাপ্য হয়। শিক্ষকদের মতে, এই জোড়া ফলায় আসলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্কুলের পঠনপাঠন।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, মাধ্যমিক পরীক্ষার খাতা দেখা সংক্রান্ত কাজে এক জন পরীক্ষক সর্বোচ্চ তিন দিন ‘অন ডিউটি’ ছুটি পাবেন। এক
জন প্রধান পরীক্ষক এই ছুটি পাবেন সর্বাধিক ১৩ দিন। স্ক্রুটিনিয়রেরা ছুটি পাবেন সর্বাধিক পাঁচ দিন। এই ছুটির তালিকা উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষকদের জন্যও দিয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ।
‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘এই ছুটিকে কেন্দ্র করে অনেক স্কুলেই পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাচ্ছি। যেমন মনে করা যাক, কোনও স্কুলে ১৫
জন শিক্ষক রয়েছেন। সেই স্কুলে হয়তো একসঙ্গে ১০ জন শিক্ষক পরীক্ষার খাতা দেখছেন। প্রধান পরীক্ষকদের থেকে খাতা আনা বা খাতা দেখার পরে ফেরত দেওয়ার জন্য তাঁরা অন ডিউটি ছুটি পাচ্ছেন।
একটি স্কুলে যত জন শিক্ষক খাতা দেখছেন, তাঁরা সবাই যদি একই দিনে এই ছুটি নিয়ে নেন, তা হলে সেই দিন স্কুল চলবে কী করে? একসঙ্গে অনেক শিক্ষক এই ছুটি নেওয়ার ঘটনা বহু স্কুলেই হচ্ছে।’’ চন্দন জানান, একই সময়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের খাতা দেখা চলে। বহু স্কুলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের একই বিষয়ে একাধিক শিক্ষক খাতা দেখার কাজ করছেন এবং অন ডিউটি ছুটি নিচ্ছেন। ফলে এমনও দিন যাচ্ছে, যে দিন স্কুলে ক্লাস নেওয়ার মতো শিক্ষক থাকছেন হাতেগোনা। এ দিকে, দীর্ঘ দিন ধরে নিয়োগ না হওয়ায় সব স্কুলেই শিক্ষকের অভাব রয়েছে। ফলে দৈনন্দিন কাজ চালানোই দুষ্কর হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ।
শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, অনেক সময়ে শিক্ষকেরা প্রধান পরীক্ষকের কাছ থেকে
পরীক্ষার খাতা আনতে যাচ্ছেন স্কুল করার পরে। তার জন্য প্রধান পরীক্ষকদের কাছ থেকে ‘অন ডিউটি’ ছুটির স্লিপ আনছেন কোনও একটি কাজের দিনে। যে দিন তাঁর সুবিধা, সেই অনুযায়ী তিনি পাওনা ছুটি নিচ্ছেন। অন ডিউটি ছুটির স্লিপ দেখিয়ে সপ্তাহের শেষে বেড়াতে চলে যাচ্ছেন কেউ কেউ, এমন অভিযোগও উঠছে। ‘কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস’-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাসের অভিযোগ, ‘‘অন ডিউটি স্লিপের অপব্যবহারের ফলে স্কুলের পঠনপাঠন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদকে চিঠি দিয়েছি। আমাদের দাবি, প্রধান পরীক্ষকেরা ‘অন ডিউটি’ ছুটি দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখুন।’’
শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রতি বছরই এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। স্কুলে শিক্ষা দিবস নষ্ট না করে নিয়মিত ক্লাস হওয়া জরুরি। তবে এই সমস্যার নেপথ্যে রয়েছে দীর্ঘ দিন শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ার বিষয়টিও। স্কুলে পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক থাকলে সমস্যাটি এত গভীর হত না বলেও মত শিক্ষকদের।
যদিও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা বলেছি, স্কুল চলাকালীন প্রধান পরীক্ষকের কাছ থেকে খাতা আনা বা খাতা দেওয়ার কাজ না করতে। এই কাজ ছুটির দিনে বা ক্লাস কামাই না করে করতে হবে। অন ডিউটি ছুটি ওই শিক্ষক অন্য এক দিন পাবেন। যে দিন তিনি স্কুলে আসবেন না, সে দিন অন্য শিক্ষকদের তাঁর ক্লাস নিয়ে নিতে হবে। কোনও ভাবেই ক্লাস ব্যাহত করা যাবে না।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)