Advertisement
০৭ অক্টোবর ২০২৪
Jadavpur University

‌যাদবপুরের হস্টেল থেকে ‘অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, কুকথাও চলত’! অভিযোগ পাশের পুলিশ আবাসনের মেয়েদের

মেন হস্টেলের ডি ব্লক সংলগ্ন মাঠ পেরিয়ে সীমানা প্রাচীরের ঠিক পাশেই ওই পুলিশ আবাসন। সেখানকার মহিলাদের অভিযোগ, দিন হোক বা রাত, বারান্দায় জটলা করে তাঁদের উদ্দেশে অশ্লীল কথা বলেন হস্টেলের ছেলেরা।

মেন হস্টেলের ডি ব্লকের এই বারান্দা থেকে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করা হত বলে অভিযোগ।

মেন হস্টেলের ডি ব্লকের এই বারান্দা থেকে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করা হত বলে অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২৩ ১৯:০১
Share: Save:

ছাদে উঠলেই অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি। ধেয়ে আসে কু-কথা! দিনের পর দিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেল থেকে উল্টো দিকের পুলিশ আবাসনের মহিলাদের এ ভাবেই উত্ত্যক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল এ বার। নবাগত পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে ‘র‌্যাগিং সংস্কৃতি’ নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। সেই আবহে পুলিশ আবাসনের মহিলা বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, হস্টেলের আবাসিকদের কারণে তাঁদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ জানিয়েও তার সুরাহা হয়নি।

মেন হস্টেলের ডি ব্লক সংলগ্ন মাঠ পেরিয়ে সীমানা প্রাচীরের ঠিক পাশেই ওই পুলিশ আবাসন। সেখানকার মহিলাদের অভিযোগ, দিন হোক বা রাত, বারান্দায় জটলা করে তাঁদের উদ্দেশে অশ্লীল কথা বলেন হস্টেলের ছেলেরা। পুলিশ আবাসনের কোনও মহিলা বাসিন্দা ছাদে উঠলেই তাঁর উদ্দেশে চিৎকার করে নিজেদের যৌন চাহিদার কথাও বলা হয়। করা হয় আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি। আবাসনের এক মহিলা আবাসিক বলেন, ‘‘দিনের পর দিন এটা চলছে। সব সময় ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ করে রাখতে হয়। পর্দা টেনে রাখতে হয়। ওদের জ্বালায় এখন ছাদে উঠতে পারি না। উঠলেই ‘ও বৌদি, ও বৌদি’ বলে টিটকিরি দেয়। এত নোংরা নোংরা কথা বলে ওরা, ভাবা যায় না! বাথরুমে গেলে আলো জ্বালাতে পারি না ওদের উৎপাতে। বাইরের আলো জ্বালিয়ে বাথরুমে যেতে হয়।’’

পুলিশ আবাসনের বাসিন্দাদের থেকে অডিয়ো ক্লিপও আনন্দবাজার অনলাইনের হাতে এসেছে। সেই অডিয়ো ক্লিপে লাগাতার ‘ও বৌদি, ও বৌদি’ বলে চিৎকার করতে শোনা গিয়েছে। আবাসনের মহিলাদের অভিযোগ, এই ভাবে তাঁদের উত্ত্যক্ত করেন হস্টেলের ছেলেরা। শুধু তা-ই নয়, কালীপুজোর সময় হস্টেল থেকে পুলিশ আবাসনের দিকে চকোলেট বোমাও ছোড়া হয়েছিল বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ওই মহিলা আবাসিক বলেন, ‘‘হস্টেলের বারান্দা থেকে বোম ছুড়েছিল কালীপুজোর সময়। পর্দায় লেগে আগুন ধরে গিয়েছিল। পাশেই রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার ছিল। বড় কিছু ঘটে যেতে পারত ওই দিন।’’

পুলিশ আবাসন থেকে উল্টো দিকের ডি ব্লকের ছবি, ভিডিয়ো তুলতে গিয়ে হস্টেল আবাসিকদের নিশানায় পড়ে আনন্দবাজার অনলাইনও। ভিডিয়ো করার সময় দুই পড়ুয়াকে বারান্দায় চেয়ার টেনে বসে কিছু একটা বলতে শোনা যায়। তার পরেই কটাক্ষসিক্ত উক্তি, ‘‘ভিডিয়ো করছেন কেন!’’

শুধু ডি ব্লকই নয়, মেন হস্টেলের এ১ এবং এ২ ব্লক থেকেও পুলিশ আবাসন দেখা যায়। গত ৯ অগস্ট এ২ ব্লকের তিন তলার বারান্দা থেকে পড়ে গিয়ে এক পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে। সেই ঘটনায় ইতিমধ্যেই হস্টেলের বেশ কয়েক জন আবাসিক গ্রেফতার হয়েছেন। পড়ুয়ামৃত্যুর ঘটনায় হস্টেলের ‘র‌্যাগিং সংস্কৃতি’, ‘মদ-মোচ্ছব’ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। পুলিশ আবাসনের মহিলারা জানান, হস্টেলে ওই মর্মান্তিক ঘটনার পর থেকে উৎপাত কিছুটা কমেছে। আর এক মহিলা আবাসিকের কথায়, ‘‘ওই ঘটনাটার পর এখন কিছুটা কমেছে। আগে এলে আপনারাও দেখতে পেতেন, ওরা কী করে! হস্টেলে মদের আসর বসলেই এই ধরনের উৎপাত বেড়ে যায়। রাতে দল বেঁধে ছাদে উঠে যা খুশি তা-ই করে। এত খারাপ কথা যে, মুখেও আনা যায় না!’’

পুলিশ আবাসনের বাসিন্দারা জানান, তাঁরা বেশ কয়েক বার বিষয়টি হস্টেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। কিন্তু কেউ কোনও পদক্ষেপ করেননি। এ বিষয়ে অবশ্য হস্টেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jadavpur University police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE