আড়ালে: পরিত্যক্ত লালকুঠি। বিপজ্জনক সিঁড়ি (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র
লাল ইট আর চুন-সুরকির দোতলা বাড়ি। এক-একটি দরজার উচ্চতা ১০-১২ ফুট প্রায়। ঘরের আয়তনও তেমনই পেল্লায়। দোতলা থেকে একটি লোহার মই উঠে গিয়েছে উপরে। সে পথে এক জন কোনও ক্রমে উঠলেই বিশাল ছাদ। সেই ছাদ ছেয়ে গিয়েছে বট, অশ্বত্থ গাছে। ফাঁকা বাড়িটি এখনও দখলদারের হাতে অবশ্য যায়নি।
কার বাড়ি এটি? বাড়িটির ইতিহাস বলতে পারেন এমন কারও সন্ধান মেলেনি। তবে বর্তমানে সেচ দফতরের অধীন বাড়িটি। বাইরে থেকে ভাল করে নজর করলে দেখা যায়, দোতলা বাড়িটির বাইরে অস্পষ্ট হয়ে যাওয়া খোদাই—লালকুঠি। কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার অন্তর্গত বানতলায় ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের এই লালকুঠি বাড়িটিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি ছোটখাটো বস্তি। বাড়ির নাম থেকেই বস্তিও পরিচিত লালকুঠি নামেই। তবে বাড়িটি যে ব্রিটিশ সময়ের সে বিষয়ে নিশ্চিত এলাকার বয়স্কেরা। তাঁদের থেকে শোনার পরেই ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য হেরিটেজ কমিশনকে চিঠি লিখে এর প্রকৃত ইতিহাস জানতে চান। তাঁর মতে, এর ঐতিহাসিক মূল্য উদ্ঘাটন করে দ্রুত সংস্কার করুক কমিশন। যদিও বছর খানেক আগের লেখা সে চিঠির কোনও উত্তর এখনও হেরিটেজ কমিশন থেকে পাননি বলেই জানিয়েছেন তিনি কিন্তু লালকুঠিকে হেরিটেজ ভাবার কারণ কী?
শ্যামলবাবু জানান, এলাকায় এখনও কয়েক জন রয়েছেন, যাঁরা জন্ম থেকে এলাকায় বাস করছেন। তাঁরাই জানিয়েছেন, এক সময়ে ভারতীয় সেনারা এ বাড়িতে ঘাঁটি গেড়ে ছিল। পাশেই ছিল বিদ্যাধরী নদী। যা এখন মজে খালে পরিণত হয়েছে। অনেক জায়গায় সেই খালের উপরে মাটি ফেলে লোকে বাড়ি-ঘর করে নিয়েছেন। কিন্তু বিদ্যাধরী যে ওই জায়গাতেই ছিল তার প্রমাণ বহন করে চলেছে বিশাল আকারের লকগেট। কোনওটি পাঁচ গেট, কোনওটি সাত আবার কোনওটি বারো গেটের লকগেট। যার কাঠামো এবং লোহার গেট প্রাচীনত্বের চিহ্ন বয়ে চলেছে। তবে কালের প্রবাহে সে সবে মরচে পড়েছে।
স্থানীয় বিশ্বনাথ মণ্ডল এবং গোবিন্দ হালদার জানালেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তাঁরা ভারতীয় সেনাদের থাকতে দেখেছেন। যুদ্ধ শেষে সেনা চলে যাওয়ার পর থেকে অবশ্য এই লালকুঠিতে কেউ আস্তানা গাড়েনি। ধীরে ধীরে আগাছা আর জঙ্গলে ভরে গিয়েছে বাড়িটি ও তার আশপাশের এলাকা। স্থানীয় দুই বৃদ্ধের কথায়, বাড়িটি ব্রিটিশ আমলে তৈরি। এক সময়ে এ বাড়িতে ব্রিটিশ সৈন্যেরা থাকত। আর সে জন্যই শহর থেকে খানিক দূরে বানতলার মতো জায়গায় নদীর তীরে বাড়িটি তৈরি করে তারা। প্রায় দেড় বিঘা জমির উপরে তৈরি এই লালকুঠি। চারপাশে রয়েছে আরও পাঁচ বিঘা। কিন্তু প্রশাসন বা সরকারের নজরে না থাকায় ক্রমেই খালি জায়গা বেদখল হয়ে গিয়েছে।
বাড়িটির প্রাচীনত্ব নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে স্থানীয়দের দাবির সত্যতা যাচাই করতে ভরসা ইতিহাসবিদেরা। আপাতত তাই রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের দিকেই তাকিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর। রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সচিব উমাপদ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য চিঠি প্রসঙ্গে কোনও কথা বলেননি। তবে তাঁর কথায়, ‘‘এই লালকুঠি তাঁদের হেরিটেজ বাড়ির তালিকায় নেই। ফলে এই বাড়ির ইতিহাস অজানা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy