প্রতীকী ছবি।
অতিমারির চতুর্থ ঢেউয়ের আশঙ্কার মধ্যেই এ বার মাথাচাড়া দিচ্ছে ডেঙ্গি। মশাবাহিত সেই রোগের মরসুম শুরু হওয়ার আগেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষিপ্ত ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। গত জানুয়ারি থেকে চলতি জুন মাসের প্রতি সপ্তাহের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করে স্বাস্থ্য দফতরের আশঙ্কা, আগামী দিনে বঙ্গে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এ বছর রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১১৩৮ জন।
সূত্রের খবর, বিগত কয়েক বছরের এই সময়কালের (জানুয়ারি থেকে জুনের প্রথম কিছু দিন) সঙ্গে এ বছরের পরিসংখ্যানের তুলনা করেই উদ্বেগ বাড়ছে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। তাই আগামী জুলাই-অগস্ট-সেপ্টেম্বরের ভরা বর্ষায় ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়লে পরিস্থিতি যাতে সামাল দেওয়া যায়, তার জন্য আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে পর্যাপ্ত প্লেটলেট মজুত রাখার নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান বলছে, জানুয়ারি থেকে জুন মাসের গোড়ার দিক, অর্থাৎ, বছরের ২২তম সপ্তাহ পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল ১০১২। ২০২০-’২১ সালে করোনার সময়ে সেই সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল ২২৩। যদিও ওই দু’টি বছরে করোনার জেরে নজরদারিতে কিছুটা খামতি ছিল বলে মানছেন স্বাস্থ্যকর্তারাও।
গত পাঁচ বছরে ২২তম সপ্তাহ পর্যন্ত রাজ্যে যত জনের ডেঙ্গি হয়েছিল, তার তুলনায় এ বছর এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। স্বাস্থ্য শিবিরের একাংশ জানাচ্ছেন, এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যাচ্ছে, রাজ্যে এ বার ডেঙ্গির লেখচিত্র খানিকটা ঊর্ধ্বগামী। চলতি বছরের ২২তম সপ্তাহ পর্যন্ত সব থেকে বেশি রোগীর সন্ধান মিলেছে জলপাইগুড়িতে (৩১১ জন)। অন্য দিকে, কলকাতায় ১০৩ জন এবং উত্তর ২৪ পরগনায় ১৩৯ জন এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর। অথচ, গত পাঁচ বছরে এই সময়কালে কলকাতায় আক্রান্তের সর্বাধিক সংখ্যা ছিল ৯২। সেই তুলনায় এ বছর সংখ্যাটা অল্প হলেও বেড়েছে। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানাচ্ছেন, কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনা-সহ বিভিন্ন জেলার কিছু এলাকায় প্রতি বছরই নির্দিষ্ট সময়ে ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ে। সেই বিষয়টি খেয়াল রেখে আগাম সতর্কতার প্রয়োজন। তাঁর কথায়, ‘‘পতঙ্গবিদদের নিয়োগ করার পাশাপাশি পুরসভাগুলিকে আরও সক্রিয় হয়ে মশা নিধনের কাজ করতে হবে। ডেঙ্গি পুরনো ও পরিচিত রোগ হলেও উদাসীনতার কারণে তা যে কতটা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে, সেটা সকলেই জানি। তাই জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত রক্ত পরীক্ষা করানো প্রয়োজন।’’
স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, বর্ষায় মশাবাহিত রোগের প্রকোপ এমনিতেই বৃদ্ধি পায়। তাই বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির জেরে ডেঙ্গির লেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় পরিস্থিতি সামলাতে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে। রাজ্য থেকে জেলা, এমনকি ব্লক স্তরেও মেডিক্যাল অফিসার ও নার্সদের ‘ডেঙ্গি কেস ম্যানেজমেন্ট’ এবং ‘কেস মনিটরিং’— দু’টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সতর্ক করা হয়েছে পুরসভাগুলিকেও। প্রতিটি হাসপাতালকেই বলা হয়েছে, এলাইজ়া পদ্ধতিতে রক্ত পরীক্ষা করা হলে প্লেটলেটের সংখ্যাও যেন দেখা হয়।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, হেমারেজিক ডেঙ্গির চিকিৎসায় প্লেটলেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যে ডেঙ্গির প্রকোপ লক্ষ করে স্বাস্থ্য দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ৮৭টি সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের মধ্যে ৪৫টিতে পর্যাপ্ত প্লেটলেট মজুত রাখা হবে। যদিও ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম’-এর সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব ঘোষের কথায়, ‘‘এখন রোজ আনি, রোজ খাই অবস্থা। বাড়তি বা পর্যাপ্ত প্লেটলেট মজুত রাখা হবে কী ভাবে? তা রাখতে গেলে রক্ত সংগ্রহ বাড়াতে হবে।’’
সরকারি স্তরে রক্তের পৃথকীকরণের সুবিধাযুক্ত ব্লাড ব্যাঙ্কে কর্মীর সংখ্যাও কম। অভাব রয়েছে সমন্বয়েরও। সেখানে কী ভাবে পর্যাপ্ত প্লেটলেট মজুত করা হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন রক্তদান আন্দোলনে যুক্ত দীপঙ্কর মিত্রও।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy