রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী মানস ভুইঁয়া। —ফাইল চিত্র।
রুটি-রুজির প্রশ্ন জড়িত। তাই পুরোপুরি বন্ধ করার আগে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক তৈরির কারখানার মালিকদের একটা সুযোগ দিতে চাইছে রাজ্য পরিবেশ দফতর। সে কারণে সংশ্লিষ্ট কারখানার মালিকদের ডেকে তাঁদের পরিবেশবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানানো হবে। সেই অনুরোধে কর্ণপাত না করলে তখন তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। নিষিদ্ধ প্লাস্টিক তৈরির কারখানার মালিকদের তলব প্রসঙ্গে সোমবার এমনটাই জানিয়েছেন রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী মানস ভুইঁয়া।
এ দিন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আয়োজিত বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদ্যাপনের অনুষ্ঠানে এসে পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ‘‘ওই কারখানার মালিকদের ডেকে আমরা বলব, নিয়ম মেনে চলুন। যদি আমাদের অনুরোধে তাঁরা সাড়া দেন, তা হলে ঠিক আছে। কিন্তু যদি তাঁরা মনে করেন কোনও নিয়ম মানবেন না, তা হলে আইনানুগ ভাবে যা করার, আমরা করব।’’
প্রসঙ্গত, এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (সিঙ্গল ইউজ), যা ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ, তেমন প্লাস্টিক তৈরির কারখানা পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে ৬০টি। এই তথ্য ধরা পড়েছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সাম্প্রতিক সমীক্ষায়। ওই কারখানাগুলির বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ করতে গত মাসেই কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে মানস বলেন, ‘‘বার বার বলার পরেও নিয়ম লঙ্ঘনকারী কারখানার মালিকেরা যদি না শোনেন, তা হলে উৎপাদন বন্ধের দিকে যেতে হবে। কারণ, প্লাস্টিক-দূষণ বন্ধ করতেই হবে।’’
একই সঙ্গে পরিবেশমন্ত্রী জানিয়েছেন, নিয়ম লঙ্ঘনকারী শিল্পতালুক, শিল্প সংস্থার উপরে ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। কারণ, অনেক শিল্প সংস্থা দিনের বেলায় পরিবেশবিধি মানলেও খরচ বাঁচানোর জন্য রাতে দূষণ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রগুলি খুলে ফেলে দিচ্ছে। এর ফলে রাতের দিকে বায়ুদূষণের মাত্রা আবার হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। ড্রোন উড়িয়ে দূষণের মাত্রা লঙ্ঘনকারী এমন তালুক বা সংস্থাকে চিহ্নিত করা হবে।
মানসের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার শিল্পবান্ধব। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শিল্পবান্ধব পরিস্থিতি তৈরির জন্য সর্বতো ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তার সুযোগ নিয়ে কেউ যদি মনে করেন তাঁরা পরিবেশবিধি মানবেন না, নিয়ম-কানুনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দূষণের মাত্রা বাড়িয়েই যাবেন, সেটা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।’’
চলতি বছরের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের থিম ‘প্লাস্টিক-দূষণ সমস্যার সুরাহা’। প্লাস্টিক-দূষণ কী ভাবে পরিবেশকে বিপন্ন করে তুলেছে, তা অনুষ্ঠানের অন্য বক্তাদের কথাতেও ধরা পড়েছে। পরিবেশ দফতরের প্রধান সচিব রোশনী সেন বলেন, ‘‘১২০ মাইক্রনের কম ঘনত্ববিশিষ্ট প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার আইনত নিষিদ্ধ। কারণ, ওই ধরনের প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ এক বার ব্যবহারের পরেই ফেলে দেওয়া হয়, যা পরিবেশের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক।’’ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘প্লাস্টিক বর্জ্যের ৫০ শতাংশই প্যাকেজিং থেকে আসে। ২০৫০ সালের মধ্যে ১২০ কোটি টন প্লাস্টিক বর্জ্য বাস্তুতন্ত্রে ছড়িয়ে পড়তে চলেছে। এই পরিস্থিতির জন্য শুধু আমাদের অপব্যবহার দায়ী।’’
শহরের বিভিন্ন এলাকায় দূষণের মাত্রা পরিমাপের জন্য একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছে পরিবেশ দফতর। এ দিন সেটিরও উদ্বোধন করা হয়। এই প্রকল্পের অধীনেএকটি বাসের ছাদে বিশেষ যন্ত্র (বাস রুফ মাউন্টেড এয়ার পিউরিফিকেশন সিস্টেম) বসানো আছে। ওই বাসটি শহরের ভিতরে যে সব এলাকায় ঘুরবে, সেখানকার দূষণের মাত্রা ওই যন্ত্রের মাধ্যমে জানা যাবে। আবার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের ভিতরেওবসানো একটি যন্ত্রের মাধ্যমে বাসের অভ্যন্তরীণ বায়ুর মান সম্পর্কে জানা যাবে। পরিবেশমন্ত্রী জানান, আপাতত ২০টি বাসে এই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। এর পরে ধীরে ধীরে সংখ্যা বাড়ানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy