Advertisement
E-Paper

খুদের শ্বাসনালির বাদাম বার করতে ভরসা এসএসকেএম

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শিশুদের শ্বাসনালিতে খাবার আটকানোর ঘটনা প্রায়ই ঘটে। কিন্তু এমন দুর্ঘটনার চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই প্রায় গোটা রাজ্যে, তা-ও মানছেন তাঁরা।

অস্ত্রোপচারের পরে হাসপাতালে আশিক সর্দার। (পাশে) তার শ্বাসনালি থেকে বেরোনো চিনেবাদামের টুকরো। বুধবার। নিজস্ব চিত্র।

অস্ত্রোপচারের পরে হাসপাতালে আশিক সর্দার। (পাশে) তার শ্বাসনালি থেকে বেরোনো চিনেবাদামের টুকরো। বুধবার। নিজস্ব চিত্র।

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২০ ০২:৩৩
Share
Save

একটি চিনেবাদামের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পেরোতে হল ২৫০ কিলোমিটার পথ। শ্বাসনালিতে আটকে থাকা ওই বাদামের জেরে মৃত্যুর মুখে চলে গিয়েছিল এক বছর তিন মাসের শিশুটি। অবশেষে মুর্শিদাবাদের বাগডাঙার বাসিন্দা সেই শিশুর শ্বাসনালি থেকে বাদাম বার করল এসএসকেএমের ‘ইনস্টিটিউট অব ওটোরাইনোল্যারিঙ্গোলজি’। বর্তমানে শিশুটিকে হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিকু) রাখা হয়েছে। দিন কয়েক পর্যবেক্ষণ করে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

এসএসকেএম হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যখন আশিক সর্দার নামের ওই শিশুকে নিয়ে আসা হয়েছিল, তত ক্ষণে নীল হয়ে গিয়েছিল তার ছোট্ট শরীর। দ্রুত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। এক্স-রে করে চিনেবাদামের অবস্থান বুঝে নিতে যেটুকু সময় লেগেছিল, ততটুকুই অপেক্ষা করেছিলেন তাঁরা। ব্রঙ্কোস্কোপি করে ফরসেপের সাহায্যে শিশুর শ্বাসনালির ডান ও বাঁ ব্রঙ্কাস থেকে বার করে আনা হয়েছিল সেটি। মিনিট পঁচিশের ওই অস্ত্রোপচারের নেতৃত্বে ছিলেন প্রফেসর-চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্ত। চিকিৎসক দলে ছিলেন সায়ন হাজরা ও দেবাশিস ঘোষ। অরুণাভবাবুর কথায়, “গলা দিয়ে টিউবের মাধ্যমে ব্রঙ্কোস্কোপ যন্ত্র ঢুকিয়ে ফরসেপের সাহায্যে ডান ও বাঁ দিকের ব্রঙ্কাস থেকে দু’টুকরো হয়ে যাওয়া বাদামটি বার করা হয়েছে। দু’টি ব্রঙ্কাসেই বাধা তৈরি হওয়ায় শিশুর শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা হু হু করে নামছিল। সেটি মারাত্মক ঝুঁকির। ওই একই পথে দেওয়া হয় অ্যানাস্থেশিয়া। এ ক্ষেত্রে সামান্য অসাবধানতায় বা অস্ত্রোপচারের নির্দিষ্ট সময় পেরোলে মৃত্যু হতে পারে রোগীর।” চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যাহত হয়ে নিউমোনিয়া হয়ে যাওয়ায় আশিককে পিকু-তে রাখা হয়েছে।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শিশুদের শ্বাসনালিতে খাবার আটকানোর ঘটনা প্রায়ই ঘটে। কিন্তু এমন দুর্ঘটনার চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই প্রায় গোটা রাজ্যে, তা-ও মানছেন তাঁরা। ফলে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন এসএসকেএমে রেফার করা রোগী নিয়ে ছুটে আসেন পরিজনেরা। দিনে দু’টি এমন অস্ত্রোপচার সেখানে হয়েই থাকে বলে জানাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।

জরুরি পরিষেবার প্রয়োজনে এত দূরত্ব পেরিয়ে আসতে হয়রান হচ্ছে গ্রাম বা মফসস্‌লের বাসিন্দা পরিবারগুলি। যেমন হয়েছেন আশিকের বাবা, পেশায় রাজমিস্ত্রি মহবুল সর্দার। তাঁকে ডোমকল থেকে কলকাতায় আসতে ধার করে অ্যাম্বুল্যান্সের আট হাজার টাকা ভাড়া মেটাতে হয়েছে।

কেন এই পরিষেবা অন্য সরকারি হাসপাতালে নেই? চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বড়দের শ্বাসনালিতে আটকে যাওয়া জিনিস বার করার পরিকাঠামো প্রায় সর্বত্রই রয়েছে। কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে যন্ত্র বলতে প্রয়োজন, মূলত পেডিয়াট্রিক ব্রঙ্কোস্কোপ ও ফরসেপ। যা দুর্লভও নয়। তবে ঝুঁকি বেশি থাকায় সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে। তাই প্রশাসনের কাছে এই যন্ত্রের আবেদন সে ভাবে করা হয় না বলেই জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা। তাঁর কথায়, “যন্ত্রের সঙ্গে অভিজ্ঞ চিকিৎসক থাকতে হবে। কোনও হাসপাতাল পেডিয়াট্রিক ব্রঙ্কোস্কোপির জন্য প্রশিক্ষণ নিতে চাইলে চিকিৎসকদের তা দিতেও রাজি এসএসকেএম।” তবু পরিকাঠামো বাড়াতে অনীহা হাসপাতালগুলির। যে কারণে এত দূরত্ব পেরিয়ে কলকাতায় আসার পথেই মৃত্যু হয় অনেক শিশুর।

trachea SSKM Peanut

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।