Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
SSKM

SSKM: অম্বলের ভ্রমে ক্ষতিগ্রস্ত মহাধমনী, সুস্থ করল পিজি

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই দু’টি সমস্যা একসঙ্গে থাকাটা বিরল। সম্প্রতি অস্ত্রোপচার করে ওই বধূকে বাঁচিয়েছে এসএসকেএম হাসপাতাল।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শান্তনু ঘোষ
শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২২ ০৮:২৭
Share: Save:

মাঝেমধ্যে পেটে-পিঠে ব্যথা হত। গ্যাস-অম্বলের সমস্যা ভেবে হজমের ওষুধ খেয়ে কাটাচ্ছিলেন বছর চল্লিশের গৃহবধূ। কিন্তু সমস্যা বাড়তেই থাকে। পরীক্ষায় দেখা যায়, ওই বধূর হৃৎপিণ্ডের মহাধমনী মারাত্মক ফুলে গিয়েছে। মহাধমনীর দেওয়ালের অনেকটা অংশ চিরেও গিয়েছে। যা প্রাণসংশয় কিংবা পক্ষাঘাতের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই দু’টি সমস্যা একসঙ্গে থাকাটা বিরল। সম্প্রতি অস্ত্রোপচার করে ওই বধূকে বাঁচিয়েছে এসএসকেএম হাসপাতাল। হৃদ্‌রোগ চিকিৎসকেরা ফের মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গ্যাস-অম্বলের সমস্যা ভেবে হৃদ্‌রোগকে উপেক্ষা করার যে প্রবণতা, তা কতটা মারাত্মক হতে পারে। পিজি-তে ওই অস্ত্রোপচার করেছেন হৃদ্‌রোগ চিকিৎসক সরোজ মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘অধিকাংশ মানুষ বুক, পেট বা পিঠের ব্যথাকে অবহেলা করেন। এই রোগীওপ্রথমে তেমনই ভেবেছিলেন। বাড়াবাড়ি হতে পরীক্ষা করিয়ে বোঝা গেল, কত বড় বিপদ লুকিয়ে ছিল। ওই ফোলা অংশ ফেটে গেলে মৃত্যু হত।’’ হাসপাতাল সূত্রের খবর, বিনামূল্যে কয়েক লক্ষ টাকা দামের দু’টি স্টেন্ট গ্রাফ্ট করা হয়েছে রোগিণীর মহাধমনীতে। সুস্থ রয়েছেনকাশীপুরের বাসিন্দা সেই মহিলা তারান্নুম বেগম।

তারান্নুম জানাচ্ছেন, কয়েক বছর ধরেই পেটে-পিঠে ব্যথা হত। সমস্যা যে হৃদ্‌যন্ত্রের, তা জানতে পেরে বেসরকারি হাসপাতালে গেলে চিকিৎসার খরচ জানানো হয় কয়েক লক্ষ টাকা। তিনি বলেন, ‘‘এত টাকা কোথায় পাব? তাই পুরো চিকিৎসা করাতে পিজিতে চলে আসি।’’ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মহাধমনীসাধারণত ২০-২৫ মিলিমিটার মোটা হয়। তারান্নুমের সেটি ফুলে গিয়ে ৪২ থেকে ৪৫ মিলিমিটার হয়েছিল। সরোজবাবু বলেন, ‘‘প্রতি এক লক্ষে পাঁচ থেকে সাতটা ঘটনায় মহাধমনী এত ফোলা পাওয়া যায়। আবার মহাধমনীর দেওয়াল চিরে যাওয়া আরও বিরল। প্রতি ১০ লক্ষের মধ্যে পাঁচ থেকে সাতটা কেস পাওয়া যায়। সেখানে দু’টি সমস্যা একসঙ্গে থাকা খুবই বিরল ও ঝুঁকির।’’ তিনি জানাচ্ছেন, গোড়া থেকে মহাধমনী ফুলে উঠেছিল। যে অংশে সেই সমস্যা দেখা দিয়েছিল, সেখান থেকে মস্তিষ্ক এবং বাঁ হাতে রক্ত সঞ্চালিত হয়।

দু’ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এই অস্ত্রোপচার করেন সরোজবাবু এবং হৃদ্‌রোগ চিকিৎসক অসিত দাস, কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়, মৃণালকান্তি মান্না, ভিগনেশ রাজেন্দ্র, কার্ডিয়োথোরাসিক চিকিৎসক শুভেন্দুশেখর মহাপাত্র, সঞ্জিত মণ্ডল এবং অ্যানাস্থেটিস্ট অভিনন্দন মণ্ডল। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মহাধমনীর যে অংশ থেকে ‘লেফ্‌ট কমন ক্যারোটিড’ (যার মাধ্যমে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালিত হয়) এবং ‘লেফ্‌ট সাবক্লেভিয়ান’ (বাঁ হাতে রক্ত সঞ্চালিত হয়) শুরু হয়েছে, তা মূল অস্ত্রোপচারের আগে আটকানো হয়। পাশাপাশি ‘লেফ্‌ট কমন ক্যারোটিড’ এবং ‘লেফ্‌ট সাবক্লেভিয়ান’-এর সঙ্গে ‘রাইট কমন ক্যারোটিড’-এর সংযোগ স্থাপন করা হয় ‘ড্যাক্রন গ্রাফ্ট’-এর (কৃত্রিম তন্তু) মাধ্যমে। যাতে ডান দিক থেকে বাঁ দিকের অংশে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে। পায়ের অংশের মহাধমনীকেটে সেখান দিয়ে একটি স্টেন্টগ্রাফ্ট প্রবেশ করানো হয় ফুলে ওঠা অংশে। দ্বিতীয় স্টেন্ট গ্রাফ্ট করা হয় মহাধমনীর চিরে যাওয়া অংশে।

হৃদ্‌রোগ চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘গ্যাস-অম্বলের কথা ভেবে আরও কয়েক দিন ধরে যদি ওই রোগী হজমের ওষুধ খেয়ে যেতেন, তা হলে বড় বিপদ ঘটার আশঙ্কা ছিল। দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের জন্যই সমস্যা হচ্ছে, এমন ভাবনা বদলাতে হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

SSKM PG Hospital Artery blockage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy