হাত প্রতিস্থাপন করা হবে এসএসকেএমে। ফাইল চিত্র।
দেশের পূর্বাঞ্চলে এ বার সরকারি হাসপাতালে হবে হাত প্রতিস্থাপন! মরণোত্তর অঙ্গদানে হৃৎপিণ্ড, কিডনি, যকৃৎ, ফুসফুস প্রতিস্থাপনের কথা শোনা যায়। কিন্তু ব্রেন ডেথ হওয়া রোগীর হাত অন্যের শরীরে প্রতিস্থাপন— সচরাচর শোনা যায় না। বিশেষত, পূর্বাঞ্চলে এখনও পর্যন্ত এমন ঘটনার কথা শোনা যায়নি। এ বিষয়ে জানেন না অধিকাংশ মানুষই। এ বার সেই হাত প্রতিস্থাপন চালু হচ্ছে পূর্বাঞ্চলে চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র এসএসকেএম হাসপাতালে।
কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, দুর্ঘটনায় কেটে যাওয়া হাত বা আঙুল খুব ভাল ভাবে জোড়ার কাজ করছে তাঁদের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ। সেই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েই হাত প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার জন্য পরিকাঠামোও পুরোপুরি প্রস্তুত। জনা তিনেক গ্রহীতার তালিকাও তৈরি। এখন অপেক্ষা ব্রেন ডেথ হওয়া রোগীর পরিজনের সম্মতি। তবে, একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। মরণোত্তর অঙ্গদানে হৃৎপিণ্ড, কিডনি, যকৃৎ, ফুসফুস তুলে নেওয়া হলেও মৃতের শরীরে কোনও বিকৃতি চোখে পড়ে না। কারণ, সেই জায়গাটি ব্যান্ডেজ করা থাকে। কিন্তু হাত কেটে নেওয়া হলে সেই বিকৃতি কী ভাবে ঢাকা হবে?
প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অরিন্দম সরকার বললেন, ‘‘গায়ের রং ও হাতের মাপ অনুযায়ী তৈরি নকল হাত লাগানো হবে ব্রেন ডেথ হওয়া মৃতের শরীরে। বিষয়টি বোঝাতে হবে রোগীর পরিজনকে।’’ তিনি জানান, প্রতিস্থাপনের জন্য কাঁধের নীচ থেকে হাত কাটা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নেওয়া হয় কনুইয়ের নীচ থেকে। সূত্রের খবর, ২০২১-এর জানুয়ারিতে হাত প্রতিস্থাপনের ছাড়পত্র পেয়েছে শহরের এই সরকারি হাসপাতাল। তার পর থেকেই প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে পুরোদমে পরিকঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়।
পিজি-র প্লাস্টিক সার্জারির শিক্ষক-চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ২০১৭ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে হাত প্রতিস্থাপন হয়েছে ১০৭টি। আর এ দেশে এখনও পর্যন্ত ১৩টি। সরকারি স্তরে পুদুচেরির ‘জওহরলাল ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’ (জিপমার) এবং বেসরকারি স্তরে কোচি ও মুম্বইয়ের দুই হাসপাতালে এই প্রতিস্থাপনের অনুমতি রয়েছে। সেই তালিকাতেই এ বার যুক্ত হল এসএসকেএমের নাম। অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হাত প্রতিস্থাপনে কারও প্রাণ বাঁচবে, তেমনটা না হলেও এক জন মানুষ আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন।’’
প্লাস্টিক সার্জারির প্রধান চিকিৎসক জানাচ্ছেন, দুর্ঘটনায় দু’টি হাত হারিয়েছেন, কিংবা কোনও অসুখে হাতের কর্মক্ষমতা নেই, অথবা দুর্ঘটনায় একটি হাত বাদ গিয়েছে ও অন্যটি কর্মক্ষমতা হারিয়েছে, এমন রোগীদের ক্ষেত্রে প্রতিস্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। দাতা ও গ্রহীতার রক্তের গ্রুপ, লিঙ্গ এক হতে হবে। বয়সও কাছাকাছি হওয়া বাঞ্ছনীয়।’’ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই প্রতিস্থাপনের পরবর্তী অধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, গ্রহীতার শরীর কতটা গ্রহণ করবে, সে দিকে খুব সতর্ক ভাবে খেয়াল রাখতে হয়। অরিন্দম বলেন, ‘‘শরীর যাতে ওই অঙ্গকে প্রত্যাখ্যান না করে, তার জন্য গ্রহীতাকে সারা বছর ইমিউনো থেরাপি নিতে হবে। যাতে তাঁর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এর জন্য বছরে প্রায় এক থেকে দুই লক্ষ টাকার ওষুধের প্রয়োজন। সেটি রাজ্য সরকার বিনামূল্যে দেবে।’’
প্রতিস্থাপনের লক্ষ্যে পিজি-র ইমিউনো থেরাপি-র দলও ইতিমধ্যে প্রোটোকল তৈরি করেছে। প্রস্তুত করা হয়েছে বিশেষ আইটিইউ, অপারেশন থিয়েটার। এই প্রতিস্থাপনে অস্থি, মাইক্রোবায়োলজি,প্যাথলজি, ইনফেকশাস ডিজ়িজ়, ইমার্জেন্সি মেডিসিন, ফিজ়িক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগও যুক্ত থাকছে। চিকিৎসকেরা আরও জানাচ্ছেন, মরণোত্তর অঙ্গদানের ক্ষেত্রে প্রথমে মৃত রোগীর হৃৎপিণ্ড আহরণ (রিট্রিভাল) করা হয়। কিন্তু রোগীর পরিজন হাতের ক্ষেত্রেও অনুমতি দিলে প্রথমে সেটি ‘রিট্রিভাল’ করতে হবে। পিজি-র প্লাস্টিক সার্জারিরশিক্ষক-চিকিৎসক সৌম্য গায়েন জানাচ্ছেন, ব্রেন ডেথ ঘোষণার এক থেকে দু’ঘণ্টার মধ্যে হাত আহরণ করতে হয়। তার পরে ছ’ঘণ্টার মধ্যে প্রতিস্থাপন করতে হবে। তবে উন্নত প্রযুক্তিতে এখন ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সংরক্ষণ (হার্ভেস্টিং) করা যাচ্ছে। এ বার রাজ্যে কবে প্রথম হাত প্রতিস্থাপন হবে, তারই অপেক্ষায় রয়েছে এসএসকেএম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy