Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
SSKM

SSKM: কাটাছেঁড়া ছাড়াই ফুসফুসের ধমনীর অস্ত্রোপচারে জীবন দান

সম্প্রতি সঙ্কটজনক অবস্থায় সেখানকার মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হন আজহারউদ্দিন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২১ ০৫:৪১
Share: Save:

চার বছর আগে হওয়া পায়ের একটি টিউমার যে বুকে ছড়াতে পারে, তা কস্মিনকালেও ভাবতে পারেননি চব্বিশ বছরের যুবক। কিন্তু হয়েছিল তা-ই। টিউমার বুকের বিভিন্ন শিরা ও ধমনীর মধ্যে শাখা বিস্তার করে ফেলেছিল। ফলে প্রবল শ্বাসকষ্ট আর কাশির সঙ্গে রক্ত উঠতে শুরু করেছিল মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা আজহারউদ্দিনের। অবশেষে শরীরে কাটাছেঁড়া না করে ছোট একটি ফুটোর মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করে ওই যুবককে নতুন জীবন ফিরিয়ে দিল এসএসকেএম হাসপাতাল।

সম্প্রতি সঙ্কটজনক অবস্থায় সেখানকার মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হন আজহারউদ্দিন। তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত পুরনো রেকর্ড ঘেঁটে চিকিৎসকেরা জানতে পারেন, চার বছর আগে ডান হাঁটুর সংযোগস্থলে টিউমার হয়েছিল। অস্ত্রোপচার করে সেটি বাদও দেওয়া হয়েছিল। শুনেই সন্দেহ হয় মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সৌমিত্র ঘোষ ও অন্যদের। ওই টিউমারের সঙ্গে ফুসফুসের যোগ থাকতে পারে আশঙ্কা করে রোগীর বুকের সিটি স্ক্যান করান চিকিৎসকেরা। দেখা যায়, বাঁ দিকের পালমোনারি ধমনীর একটি অংশ মারাত্মক ভাবে ফুলে (ক্যাম্বিস বলের মতো) গিয়েছে। যেটিকে চিকিৎসাশাস্ত্রের পরিভাষায় বলা হয়, ‘লেফট পালমোনারি আর্টারি অ্যানিউরিজ়ম’।

আর সেই ফোলা অংশ ক্রমাগত শ্বাসনালিতে চাপ দেওয়ায় ওই যুবকের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ধমনীর কোনও প্রাচীর দুর্বল হয়ে গেলে এ ভাবেই সেটি ফুলে ওঠে। সৌমিত্রবাবু বলেন, ‘‘পায়ের ওই টিউমার বুকের শিরা-ধমনীর মধ্যে ছড়িয়ে গিয়েছিল। ফলে বাঁ দিকের ফুসফুসের ধমনীর একটি জায়গা থেকে দু’টি ফিডার নালি হয়ে ওই ফোলা অংশটি তৈরি হয়েছিল। সেখান দিয়েই রক্ত যাচ্ছিল ফোলা অংশে। অর্থাৎ, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার খাদ্য পাচ্ছিল।’’ তিনি জানান, বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার পরে রোগীকে কার্ডিয়োলজি বিভাগে স্থানান্তরিত করা হয়।

সেখানে হৃদ‌্‌রোগ চিকিৎসক সরোজ মণ্ডল অস্ত্রোপচারটি করেন। তিনি জানাচ্ছেন, ক্যাথ ল্যাবে নিয়ে গিয়ে রোগীর কোমরের শিরা দিয়ে একটি তার ঢোকানো হয়। সেটি ডান অলিন্দ ও ডান নিলয় হয়ে পৌঁছয় ফুসফুসের সেই ধমনীতে, যেখানে দু’টি ফিডার নালির মাধ্যমে ফোলা অংশটি ছিল। সরোজবাবু বলেন, ‘‘ওই ফিডার নালি দু’টির মুখ বন্ধ করাই ছিল আসল লক্ষ্য। কারণ, সেখান দিয়ে রক্ত সরবরাহ না হলেই ওই ফোলা অংশটি চুপসে যাবে। সেই মতো বিশেষ আঠার সাহায্যে ছাতার মতো যন্ত্র দিয়ে মুখ দু’টি বন্ধ করে দেওয়া হয়। অস্ত্রোপচারটি যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের ছিল। কারণ, তারের মাধ্যমে যন্ত্র ঠিক জায়গায় পৌঁছতে বেগ পেতে হচ্ছিল।’’ প্রায় তিন ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে সেটি সম্ভব হয়। অস্ত্রোপচারের কয়েক দিন পরে ফের সিটি স্ক্যানে দেখা যায়, ফোলা অংশটি চুপসে গিয়েছে।

সরোজবাবু ও অন্য চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বেসরকারি পরিকাঠামোয় এই ধরনের অস্ত্রোপচার করাতে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়। সরকারি হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় বিনা খরচে অস্ত্রোপচারটি হয়েছে। তড়িঘড়ি ওই অস্ত্রোপচার করা না হলে আজহারউদ্দিনের মৃত্যুও হতে পারত বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। সৌমিত্রবাবুর কথায়, ‘‘যে কোনও সময়ে ধমনীর ওই ফোলা অংশ ফেটে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে বড় বিপদ ঘটে যেতে পারত। দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে সামলানো গিয়েছে।”

এক বেসরকারি হাসপাতালের হৃদ‌্‌রোগ চিকিৎসক বিশ্বকেশ মজুমদার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলছেন, “এসএসকেএমে এমন অনেক অস্ত্রোপচার হচ্ছে। শিশুদেরও হার্টের ফুটো ওই ছাতার মতো ডিভাইস দিয়ে বন্ধ করা হচ্ছে। তবে ওই যুবকের তড়িঘড়ি অস্ত্রোপচার করা না হলে যে কোনও সময়ে বুকে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়ে ভিতরেই ফোলা অংশ ফেটে মৃত্যু হতে পারত। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে এই পরিষেবা দেওয়াটা খুবই ভাল পদক্ষেপ।’’

অন্য বিষয়গুলি:

SSKM Tumor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy