অঘটন: এই নথটিই আটকে ছিল রুহানের খাদ্যনালিতে। নিজস্ব চিত্র
মামার বাড়ির লোকজনের মানত ছিল, নাতি বা নাতনি যা-ই হোক, জন্মের পরেই তার নাক বিঁধিয়ে পরানো হবে নথ। আর তা করতে গিয়েই প্রাণ সংশয় হয়ে গিয়েছিল শিশুটির। হাত ফস্কে নাকের নথ মুখে ঢুকে তা খাদ্যনালিতে গিয়ে আটকে ছিল। শুক্রবার এক মাস এক দিন বয়সি ওই শিশুর বুকের কাছে খাদ্যনালিতে আটকে থাকা সোনার নথ বার করে তাকে বাঁচাল এসএসকেএম হাসপাতাল।
মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের বাসিন্দা, পেশায় রাজমিস্ত্রি নাসিফ শেখ ও খাদিজা খাতুনের দ্বিতীয় সন্তান রুহান শেখ। জন্মের পরে ছেলেকে নিয়ে মা-বাবার কাছেই ছিলেন খাদিজা। মানত মতো গত ২৫ জুন ১৭ দিন বয়সি শিশুটির নাকে নথ পরানোর চেষ্টা হয়েছিল। এ দিন খাদিজা বলেন, “নথ পরানোর সময়ে খুব কাঁদছিল ছেলেটা। যিনি নথ পরাচ্ছিলেন, সেই সময়ে তাঁর হাত ফস্কে সেটি ছেলের মুখের ভিতরে পড়ে যায়।’’ একরত্তিকে নিয়ে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে ছোটেন পরিজনেরা। চিকিৎসক বলেছিলেন, মলের সঙ্গে নথটি বেরোয় কি না খেয়াল রাখতে।
কিন্তু কয়েক দিন কেটে গেলেও তা না হওয়ায়, রুহানকে ফের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে এক্স রে-তে দেখা যায়, খাদ্যনালিতে নথটি আটক আছে। এর পরেই গত ৬ জুলাই শিশুটিকে পিজি-তে আনলে সেখানকার নবজাতক শল্য- চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে দেখেন, নথটি তখনও খাদ্যনালিতে একই জায়গায় রয়েছে। নবজাতক শল্য-চিকিৎসক শুভঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, “এক্স-রে দেখে বুঝতে পারি, নথটি খাদ্যনালির গায়ে কোথাও গেঁথে রয়েছে। যে কারণে সেটি পেটে চলে যায়নি। এর পরেই সেটি বার করার প্রক্রিয়া শুরু হয়।’’
করোনা-সহ অন্যান্য পরীক্ষার পাশাপাশি নিওনেটাল ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট (নিকু)-এ শিশুটিকে রেখে স্থিতিশীল করার পরে এ দিন সকালে ‘জিআই এন্ডোস্কোপি’-র মাধ্যমে রুহানের খাদ্যনালি থেকে নথ বার করা হয়। বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক-চিকিৎসক সুচন্দ্রা মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে পুরো প্রক্রিয়াটির দায়িত্বে ছিলেন নবজাতক শল্য-চিকিৎসক দীপঙ্কর রায়, শুভঙ্কর চক্রবর্তী, সুমন দাস ও অ্যানাস্থেটিস্ট প্রবীর দাস। শিশুটির অবস্থা এখন স্থিতিশীল।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, গোটা প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ঝুঁকির ছিল। কারণ, এত ছোট শিশুর খাদ্যনালি এমনিতেই সরু। সেখান দিয়ে নল ঢুকিয়ে অতি সাবধানে নথটি বার করতে হয়েছে। সব সময়ে খেয়াল রাখতে হয়েছে, কোনও ভাবে যাতে খাদ্যনালি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। শুভঙ্করবাবু জানাচ্ছেন, নথটি বেশি দিন গেঁথে থাকলে খাদ্যনালি ফুটো হয়ে ‘অ্যাকিউট মিডিয়াস্টিনাইটিস’ হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাতে শিশুর প্রাণ সংশয় ঘটত। আবার নথ বার করার সময়ে খাদ্যনালি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও একই বিপদ ঘটতে পারত। আর সব কিছুর পরে নাসিফ বলছেন, “এইটুকু বাচ্চাকে কেউ নথ পরায়, বলুন তো?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy