প্রতীকী ছবি
বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসা দেওয়াকে কেন্দ্র করে স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরে সমন্বয়ের অভাব প্রকট হল বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল বলে ঘোষণা করার পরেও তাই পিছু হঠতে হচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরকে। গত ১১ জুলাই বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতাল সংলগ্ন পরিত্যক্ত একটি তেতলা ভবনে কোভিড হাসপাতাল খোলার প্রস্তাব দিয়ে স্বাস্থ্য ভবনে চিঠি পাঠিয়েছিলেন সেখানকার কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানিয়েছিলেন, সরকার কিছু অর্থ সাহায্য করলে তাঁরা ১৫ দিনের মধ্যে বাড়িটি সংস্কার করে ১০০ শয্যার কোভিড হাসপাতাল চালু করে দিতে পারবেন।
এর পরে অগস্টের প্রথম সপ্তাহে নবান্ন থেকে নির্দেশিকা জারি করা হয়, মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল হিসেবে চালু থাকা বেলুড় শ্রমজীবীকেই কোভিড হাসপাতাল করা হবে। এ সম্পর্কে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কিছু জানানো হয়নি বা আলোচনাও করা হয়নি বলে অভিযোগ। বিষয়টি তাঁরা সংবাদমাধ্যম থেকে জানতে পেরে বিপাকে পড়েন।
নবান্ন, মুখ্যমন্ত্রীর দফতর, স্বাস্থ্য সচিব, জেলাশাসক— হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রত্যেকের কাছে বিষয়টি নিয়ে চিঠি দেন। সম্প্রতি হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাসের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল হাসপাতালটি ঘুরে দেখেন এবং বৈঠক করেন। তার পরে সিদ্ধান্ত হয়, আপাতত বেলুড় শ্রমজীবী কোভিড হাসপাতাল হচ্ছে না। কোনও ভাবে বোঝাপড়ার অভাবে নবান্ন থেকে ওই নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। তা শুধরে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ভবানী দাস বলেন, ‘‘আমরা পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছিলাম। ওদের দু’রাউন্ডে ওপিডি চলে। প্রচুর ইন্ডোর রোগী। প্রায় সব ধরনের অস্ত্রোপচার হয়। তিনটি ডায়ালিসিস বেড এবং ফার্মাসি রয়েছে। এক্স-রে, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি সবই হয়। এটি কোভিড হাসপাতাল হলে সত্যিই বহু মানুষ, বিশেষত দরিদ্ররা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবেন। তা ছাড়া, এখানকার পরিকাঠামোও কোভিড হাসপাতালের উপযুক্ত নয়।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে আমরা রিপোর্ট পাঠিয়েছি যে আপাতত এটি কোভিড হাসপাতাল করা যাবে না। তার বদলে হাওড়ার আর একটি হাসপাতাল নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। তার নাম পরে জানানো হবে।’’ তা হলে ওই ঘোষণা করা হল কেন? ভবানীদেবীর ব্যাখ্যা, ‘‘শ্রমজীবীর সংলগ্ন পরিত্যক্ত বাড়িটি নিয়ে আইনি জটিলতা রয়েছে। তাই হয়তো তার বদলে চালু হাসপাতালটিকে কোভিড হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়ে গিয়েছিল।’’
গোটা ঘটনায় বিভ্রান্ত এবং ক্ষুব্ধ শ্রমজীবী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের সহকারি সচিব বাসুদেব ঘটক জানান, গত ৪ এপ্রিল সরকার তাঁদের শ্রীরামপুরের ১০০ শয্যার হাসপাতালটি কোভিড হাসপাতাল ঘোষণা করেছিল। তাঁরা পরিস্থিতির কথা ভেবে আপত্তি করেননি। গত কয়েক মাসে ৮০০ জন করোনা রোগী সেখান থেকে সুস্থ হয়েছেন। যদিও সেখানে হৃদ্্যন্ত্রের অস্ত্রোপচার-সহ অন্য যাবতীয় পরিষেবা বন্ধ করে দিতে হয়। মাত্র ৬০ হাজার টাকায় সেখানে বাইপাস অপারেশনের সুবিধা পেতেন বহু দরিদ্র মানুষ। বাসুদেববাবু বলেন, ‘‘এর পরেও মানুষের কথা ভেবে সরকারকে চিঠি দিয়েছিলাম যে বেলুড়ের হাসপাতাল সংলগ্ন পড়ে থাকা বাড়িতে আমরা কোভিড হাসপাতাল চালু করতে পারি। কিন্তু সরকার আলোচনা না করে বেলুড়ের হাসপাতালটি কোভিড হাসপাতাল বলে ঘোষণা করে দিল!’’
শ্রমজীবী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যুক্তি, অতিমারি আইনে সরকার যে কোনও হাসপাতাল অধিগ্রহণ করতে পারে কিন্তু সাধারণ মানুষের কথাও ভাবতে হবে। বেলুড়ের হাসপাতালে লকডাউনের সময়ে ১২০০টি অস্ত্রোপচার হয়েছে। বহির্বিভাগে পরিষেবা পেয়েছেন ১৬৫০০ জন, ৪২ জনের ডায়ালিসিস হয়েছে। এই মুহূর্তে বিভিন্ন অস্ত্রোপচারের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন প্রায় ১২৫ জন। সেটি কোভিড হাসপাতাল হলে অসংখ্য মানুষ অথৈ জলে পড়বেন বুঝতে পেরে শেষে স্বাস্থ্য দফতরকেও তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হচ্ছে বলেই মনে করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy