Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Kolkata East-West Metro

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কি বেসরকারিকরণ হবে? দিল্লি মেট্রোর মতো বিক্রি হবে পরিষেবা? চলছে জল্পনা

কলকাতা মেট্রোয় অপরিকল্পিত কর্মীসংখ্যা ছাড়াও পরিচালন ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতির সমস্যা রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে নিয়োগ না হওয়ায় মেট্রোয় ট্র্যাফিক ও অপারেশন্‌স বিভাগে কর্মীর অভাব রয়েছে।

কলকাতা মেট্রো।

কলকাতা মেট্রো। —ফাইল চিত্র।

ফিরোজ ইসলাম 
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৪ ০৭:২৫
Share: Save:

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর বেসরকারিকরণ নিয়ে মেট্রোর অভ্যন্তরেই ফের চড়ছে জল্পনার পারদ। আগামী বুধ এবং বৃহস্পতিবার রেল বোর্ডের অপারেশন এবং বিজ়নেস ডেভেলপমেন্ট (পরিচালনা এবং ব্যবসায়িক উন্নয়ন) বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এসপ্ল্যানেড-হাওড়া অংশের পরিদর্শনে আসতে পারেন বলে খবর। আর সেই খবরেই ইস্ট-ওয়েস্টের বেসরকারিকরণের জল্পনা আরও তীব্র হয়েছে।

রেলের অধীনে পৃথক জ়োন হলেও রেল বোর্ড চায়, কলকাতা মেট্রোও দিল্লি মেট্রোর মতো স্বয়ংসম্পূর্ণ সংস্থা হয়ে উঠুক। দিল্লি মেট্রো বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিষেবা বিক্রি করে যে ভাবে আয়ের রাস্তা খুলেছে, সেই পথে চলুক কলকাতা মেট্রোও। যদিও মেট্রোকর্তারা দক্ষতা অর্জনের পথে না হেঁটে সরাসরি ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো পরিচালনার ভার দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশনের হাতে তুলে দিতে চাইছেন বলে অভিযোগ তুলেছে মেট্রোর কর্মী ইউনিয়ন। গত ৮ এপ্রিল মেট্রোর সাপ্তাহিক বৈঠকে একতরফা ভাবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোকে দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশনের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে রেল বোর্ডের সঙ্গে পার্মানেন্ট নেগোশিয়েটিং মেশিনারি (পিএনএম) বৈঠকে অভিযোগ জানিয়েছে পূর্ব রেলের মেন্‌স ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল।

মেট্রোর কর্মী সংগঠন সূত্রের খবর, জ়োন পর্যায়ের বৈঠকে মেট্রো রেলের জেনারেল ম্যানেজার কলকাতা মেট্রোকে কর্পোরেশনে পরিণত করার কথা জানান। তার পরে বিভিন্ন পর্যায়ে এ নিয়ে আলোচনায় বিষয়টি গতি পেয়েছে। তবে ওই সিদ্ধান্তে মেট্রোকর্মীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা ও আতঙ্কের আবহ তৈরি হয়েছে।

একসময় কলকাতা মেট্রো নির্মাণের দায়িত্ব সামলে যাওয়া ই শ্রীধরনের নেতৃত্বে ১৯৯৫ সালে তৈরি হয় দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশন (ডিএমআরসি)। ওই মেট্রোর একাধিক কর্তা একসময় কলকাতা মেট্রোয় ছিলেন। মেট্রোর প্রাক্তন কর্মী এবং আধিকারিকদের অভিযোগ, কলকাতার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে যেখানে দিল্লি ক্রমাগত এগিয়ে গিয়েছে, সেখানে দেশের প্রথম মেট্রো হয়েও চার দশকে এখানে মেট্রোর ইতিহাস শুধুই পিছিয়ে যাওয়ার। এ জন্য মেট্রো পরিচালনার ক্ষেত্রে নানা পর্যায়ের ব্যর্থতাকেই দুষছেন তাঁরা।

কলকাতা মেট্রোয় অপরিকল্পিত কর্মীসংখ্যা ছাড়াও পরিচালন ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতির সমস্যা রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে নিয়োগ না হওয়ায় মেট্রোয় ট্র্যাফিক ও অপারেশন্‌স বিভাগে কর্মীর অভাব রয়েছে। মেট্রোর শীর্ষকর্তাদের একাংশ পেশাদারিত্বের সঙ্গে সংস্থা চালানোর বদলে অবসরের আগে ঝামেলাহীন কাজের জায়গা হিসাবে সংস্থাকে বেছে নিয়েছেন বলেও মেট্রোর অভ্যন্তরে গুঞ্জন রয়েছে। এর ফলে বহু কর্তার মধ্যেই সেই উদ্যম ও তৎপরতা থাকে না বলে অভিযোগ।

অন্য দিকে, দিল্লি মেট্রো বহু বছর ধরেই দেশে ও বাইরে মেট্রো নির্মাণ এবং পরিচালন সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান বিক্রি করে বিপুল আয় করে। কলকাতা মেট্রো চার দশকেও কেন তেমন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারেনি, তার সদুত্তর মেট্রোকর্তাদের থেকে মেলেনি। আধিকারিকদের একাংশের দাবি, নানা সূত্র থেকে আয় বাড়িয়ে মেট্রোর ক্ষতির পরিমাণ কমানোর চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে খরচ কমানোর লক্ষ্য নিয়ে চলা হচ্ছে।

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সৌজন্যে ২০২৮ সাল নাগাদ কলকাতা মেট্রোর যাত্রীসংখ্যা ২৫ লক্ষের কাছাকাছি পৌঁছতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই সেই মেট্রোকে নিজেদের হাতে না রেখে দিল্লি মেট্রোর হাতে তুলে দেওয়ার বিরোধিতা করছে মেট্রোর কর্মী সংগঠনগুলি। মেট্রো রেলের মেন্‌স ইউনিয়নের নেতা শিশির মজুমদার বলেন, ‘‘বেসরকারিকরণের সব রকম ভাবে বিরোধিতা করব।’’ মেট্রোর প্রগতিশীল কর্মী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শুভাশিস সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘কর্তাদের একাংশ নিজেদের অপদার্থতা ঢাকতে মেট্রোকে বেসরকারিকরণের দিকে ঠেলছেন। এর সর্বাত্মক বিরোধিতা হবে।’’

কলকাতার মেট্রোকর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, রেল বোর্ডের সদস্যেরা প্রায়ই পরিদর্শনে আসেন। তা থেকে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া ঠিক নয়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE