আইএমএ-র ভোটে ভুয়ো ভোটার ধরলেন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন। অভিযোগ করলেন দলীয় সতীর্থর বিরুদ্ধে। ফাইল চিত্র।
‘এই চোর, বেশি কথা বলছিস কেন?’
‘ওই দেখ, ধর্ষণকারী পালাচ্ছে।’
‘মেরে চামড়া গুটিয়ে দেব।’
শনিবার সকাল থেকে বিকেল লেনিন সরণির ইন্ডিয়ান মে়ডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ), কলকাতা শাখার কার্যালয় থেকে ভেসে আসছিল এমনই সব বাক্যবাণ।
কখনও বাইরে তেড়ে আসছেন মহিলা-পুরুষ চিকিৎসকেরা। কখনও রাস্তার ব্যারিকেড ভেঙে তাঁদের দিকে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করছেন অন্য দল চিকিৎসক। সঙ্গে কুকথার স্রোত। দু’পক্ষকে ঠেলে সরানো পুলিশকর্মীদের একাংশ কখনও নিজেদের মধ্যে বলে উঠলেন, ‘ট্রেড ইউনিয়নের ভোটেও তো এমন হয় না।’ চিকিৎসক সংগঠনের নির্বাচনে দু’তরফের বাগ্যুদ্ধ থেকে ‘দাদাগিরি’-র নমুনায় বিস্মিত লেনিন সরণির পথচারী, বাসিন্দা বা দোকানদারেরা। তাঁদের বক্তব্য, “এমন মারামারি, গালিগালাজ হয় ডাক্তারবাবুদের ভোটেও!”
ওই দিন আইএমএ, কলকাতা শাখার নির্বাচন ছিল। সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দফায়-দফায় অশালীন কথা আর হাতাহাতিতে উত্তেজনার পারদ চড়েছিল। তবে সন্ধ্যায় গণনা শুরু হয়ে সারা রাত ধরে তা চলার সময়ে দু’পক্ষের চিকিৎসকেরাই বিভিন্ন কথাবার্তায় নিজেদের ‘ভুল’ স্বীকার করেছেন। যেমন, ভোটে লড়াই করা এক চিকিৎসকের কথায়, “এতটা বাড়াবাড়ি বোধহয় না হওয়াই উচিত ছিল। যা হল, তাতে তো আগামী সাত দিন চেম্বারে যেতে পারব না।” সেই সময়ে সামনেই ছিলেন সকাল থেকে ভোটের ডিউটি করা এক পুলিশ অফিসার। তিনি বলে উঠলেন, “একটা কথা বলি, কিছু মনে করবেন না স্যর। উর্দি পরে থাকা সত্ত্বেও এক জন চিকিৎসক হেনস্থা করলেন। তাই বাড়িতে স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময়ে জানালাম, ছেলেকে সিভিক ভলান্টিয়ার করব। তবু চিকিৎসক নয়!”
একটি সংগঠনের নির্বাচনকে ঘিরে চিকিৎসকদের এমন ব্যবহারে অবাক সাধারণ মানুষ। ওই দিন যখন দু’পক্ষই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া ব্যানার নিয়ে গলা ফাটাচ্ছিলেন, তখন পথচলতি অনেকেই জানতে চেয়েছিলেন, সেখানে কি কোনও কলেজের নির্বাচন হচ্ছে? কিন্তু চিকিৎসক সংগঠনের নির্বাচন শুনে অবাক হয়েছেন তাঁরা। কারও উক্তি, “এ তো পঞ্চায়েত ভোটকেও হার মানাচ্ছে।” চিকিৎসকদের সংগঠন বা তাঁদের ভোটাভুটির বিষয়টি আগে শোনেননি বলেই জানিয়েছেন অধিকাংশ মানুষ।
তালতলা এলাকায় এক খাবারের দোকানের দোকানির কথায়, “সকালে শুনলাম বাইরে থেকে নাকি ছেলেরা এসেছে। ডাক্তারবাবুদেরও ভোটেও এ সব হয়?” অনেকের প্রশ্ন, চিকিৎসকদের কাজ তো সেবা করা। সেখানে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে এঁরা কেন শামিল হচ্ছেন? শনিবার দিনভর সেই সব কাণ্ড সংবাদমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার হয়েছে। তা দেখে চারদিকে একটাই কথা, “চিকিৎসকদের থেকে এটা কাম্য না।” একমত শহরের বহু চিকিৎসকও। এক হাসপাতালের প্রবীণ চিকিৎসকের কথায়, “যা দেখলাম, তাতে লজ্জা হচ্ছে।”
নির্বাচনে নির্মল পক্ষের হয়ে সহ-সম্পাদক পদে জয়ী কৌশিক বিশ্বাসের কথায়, “দিনের শেষে সকলে চিকিৎসক। তাই কে কী ঘটিয়েছেন, সেটা পরের কথা। সকলের হয়ে বলছি, যা হয়েছে তা অনভিপ্রেত ছিল। আগামী দিনে লক্ষ্য থাকবে, যেন এমন না হয়।” বিপক্ষ গোষ্ঠীর হয়ে কোষাধ্যক্ষ পদে জয়ী অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, “গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনে পক্ষ-বিপক্ষ থাকাটা স্বাভাবিক। মুখ্যমন্ত্রীও বলেন, সকলে যাতে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। যে কোনও নির্বাচনেই এমন ঘটনা অনভিপ্রেত বটেই। কিন্তু অন্যায় দেখে প্রতিবাদ না করেও তো থাকা যায় না।’’
কিন্তু বহিরাগত নিয়ে আসা, ভোট লুটের অভিযোগ, মারামারি, বিক্ষোভের আবহে ভোট দেখে মানুষের বিস্ময়, “তবে আপনারাও ডাক্তারবাবু!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy