গির্জার অন্দরে কেউ কেউ ‘জুডাস’ বলে দাগিয়ে দিয়েছেন তাঁকে। তবে কলকাতার আর্চ ডায়োসিসের সদ্য বিজেপিভুক্ত ধর্মযাজক রডনি বোর্নিয়োর দৃষ্টান্তে রাজ্যের রোম্যান ক্যাথলিক সমাজ এবং গির্জা কর্তৃপক্ষের ভিতরের চোরাস্রোতও প্রকট। এই পরিস্থিতিতে চার্চ এবং দলীয় রাজনীতির দু’নৌকায় সওয়ার হওয়া চলবে না বলেই শুক্রবার জানিয়ে দিয়েছেন কলকাতার আর্চবিশপ টমাস ডি’সুজ়া। প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টানদের চার্চ অব নর্থ ইন্ডিয়ার কলকাতা ডায়োসিসের বিশপ পরিতোষ ক্যানিংও রাজনীতি-সংস্রব থেকে দূরে থাকার কথা বলছেন।
একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং ধর্মযাজক হিসেবে রডনি বোর্নিয়োর ইস্তফা গৃহীত হওয়ার নির্দেশ জারি করেছেন আর্চবিশপ। কিন্তু রডনির বিজেপি-যাত্রার সিদ্ধান্তের পিছনে আর্চ ডায়োসিসের কিছু ‘অবিচার’ই দায়ী বলে অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যের রোমান ক্যাথলিকদের একাংশ। এ দিনই রোমান ক্যাথলিক সংগঠনের কয়েক জন সদস্য পার্ক স্ট্রিটে বিশপ হাউসে গিয়ে আর্চ ডায়োসিসের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে এ বিষয়ে কলকাতার আর্চ ডায়োসিস কর্তৃপক্ষ কিছু বলতে চাননি।
আর্চবিশপ টমাস ডি’সুজ়া বলেন, ‘‘রডনি বোর্নিয়ো বলেছেন, তিনি মানুষের সেবা করতে বিজেপিতে যাচ্ছেন। এই বিষয়ে আর কী ই বা বলার থাকে?’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘চার্চের লোকেরাও ভোট দেন। কিন্তু আমরা সরাসরি দলীয় রাজনীতি করতে পারি না। সুতরাং রডনি বিজেপিভুক্ত হওয়ার পরে ওঁর সঙ্গে আর্চ ডায়োসিসের সম্পর্ক থাকতে পারে না। উনি ধর্মযাজক হিসেবে কোনও দায়িত্বই পালন করতে পারবেন না।’’ রডনি অবশ্য এ দিন বলেছেন, ‘‘ধর্মযাজক হিসেবে দায়িত্ব পালনের অধিকার না থাকা এবং ধর্মযাজক না থাকার মধ্যে ফারাক রয়েছে। ধর্মযাজকত্ব তাঁর আচরণে। আমি যাজক হিসেবে অদীক্ষিত কী করে হব!’’
রডনিকে ঘিরে আর্চ ডায়োসিস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অন্য অভিযোগ নিয়ে রাজ্যের খ্রিস্টান সমাজে কিন্তু প্রশ্ন উঠছে। গত বছরই রডনির বিরুদ্ধে এক পড়ুয়ার সঙ্গে যৌন সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছিল। যা নিয়ে আর্চ ডায়োসিস কর্তৃপক্ষ তদন্তের নির্দেশ দেন। রডনির দাবি, তদন্তে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হলেও লিখিত শংসাপত্র পাননি। এ দিন আর্চ ডায়োসিস কর্তৃপক্ষ প্রসঙ্গে তিনি শুধু বলেন, ‘‘আমি ঈশ্বরের ডাকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কাদা ছোড়াছুড়ি করব না। ওঁরাই নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখুন।’’ বিষয়টি নিয়ে গির্জা কর্তৃপক্ষের মুখে কুলুপ। তবে ক্যাথলিক অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের সভানেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা মানটোশ বলেন, ‘‘ধর্মযাজকদের মধ্যে ক্ষোভের বিষয়টি নিয়ে স্বচ্ছতা দরকার। রডনির বিজেপি-যাত্রায় কারও ভাল হয়নি।’’
বিজেপির তরফে অবশ্য রোমান ক্যাথলিক, প্রোটেস্ট্যান্ট— সব মহলেই ধর্মযাজকদের সমর্থন চাওয়া হচ্ছে। তৃণমূলের তরফেও সব মহলে বিভিন্ন গির্জার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনের সময়ে এ দেশের খ্রিস্টানদের বড় অংশই বিজেপি বিরোধী অবস্থান নিয়েছিলেন। প্রোটেস্ট্যান্টদের মধ্যে কলকাতা ডায়োসিসের বিশপ পরিতোষ ক্যানিংয়ের সঙ্গে দেখা করে বিজেপির একটি দল। তখন মুর্শিদাবাদের একটি গির্জায় স্থানীয় বিজেপির ‘জুলুম’ নিয়ে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিশপ ক্যানিং বলেন, ‘‘সংবিধান মেনে চলি। তাই নাগরিকত্ব আইন বিরোধী প্রতিবাদে ছিলাম। কিন্তু দলীয় রাজনীতিতে নেই। তবে সব দলের কাছেই খ্রিস্টানদের কিছু দাবিদাওয়া আছে। সেটা ওঁদের বোঝা উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy