প্রতীকী ছবি।
হটমিক্স প্লান্ট ব্যবহার করে বিটুমিন মিশ্রণের মাধ্যমে হাওড়া সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ও ফুটপাত সারাইয়ের অনুমতি পেতে জাতীয় পরিবেশ আদালতের কাছে আবেদন করেছে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দর (কলকাতা বন্দর)। প্লান্ট ব্যবহারের যুক্তি হিসাবে তারা বলেছে, পথচারী এবং যান চলাচলের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা এড়াতে জরুরি ভিত্তিতে রাস্তা সারাইয়ের প্রয়োজন। তবে সেই আবেদন ঘিরেই বিতর্ক শুরু হয়েছে পরিবেশবিদ মহলের একাংশে।
পরিবেশবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, ক্রমবর্ধমান বায়ুদূষণের পরিপ্রেক্ষিতে হটমিক্স প্লান্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাড়ে তিন বছর আগেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল পরিবেশ আদালত। তা জানা সত্ত্বেও বন্দর কর্তৃপক্ষ ফের হটমিক্স প্লান্ট ব্যবহারের আবেদন করে থাকলে অন্য যে কোনও সংস্থাই তা করতে পারে। এক পরিবেশবিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেদের আবেদনে বলেছেন যে, নির্দিষ্ট সময়ে নিয়ন্ত্রিত ভাবে তাঁরা প্লান্টের ব্যবহার করবেন। কিন্তু যেখানে পুরো বিষয়ের উপরেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে, সেখানে তার সাময়িক ব্যবহারও কি যুক্তিযুক্ত?’’ আর এক পরিবেশকর্মীর কথায়, ‘‘যেখানে কলকাতা পুরসভার পামারবাজার ও গড়াগাছা হটমিক্স প্লান্টের দূষণরোধের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, তাছাড়া সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব প্লান্ট তৈরির জমি খোঁজার কাজ চলছে। সেখানে বন্দর কর্তৃপক্ষের এই আবেদনের অর্থ বোঝা গেল না!’’
বন্দরের কর্তাদের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, ওই সেতু দিয়ে দৈনিক প্রায় এক লক্ষ গাড়ি এবং দেড় লক্ষ পথচারী যাতায়াত করেন। হটমিক্স প্লান্টের মাধ্যমে সেতুর উপরিভাগের রাস্তা সারাই বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে শুধুমাত্র জোড়াতালি দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, বিকল্প পদ্ধতিতে সেতুর উপরিভাগ সারাইয়ের জন্য আইআইটি মাদ্রাজের কাছ থেকে পরামর্শও চাওয়া হয়েছিল। তারা একরকম উপাদান দিয়ে সেতু সারাইয়ের পরামর্শ দেয়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পরীক্ষামূলক ভাবে সেই উপাদান সেতুর উপরিভাগে ব্যবহারও করা হয়েছিল। কিন্তু সেই মেরামতির ফলাফল মোটেই সন্তোষজনক নয়। তার পর থেকে চেষ্টা করেও এ বিষয়ে সমাধানসূত্র বার করা যায়নি। তার ফলে সেতুর ডেক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা সেতুর সার্বিক স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক। তাই পথচারী ও যানবাহনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই এই আবেদন করা হয়েছে।
যদিও এই যুক্তি খারিজ করে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য পূর্ত দফতর কিন্তু পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে রাস্তা সারাই করেছে। ফলে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি যে নেই, তা বলার উপায় নেই। তবে তার পরেও হটমিক্স প্লান্টের মাধ্যমেই সেতু সারাইয়ের আবেদন আশ্চর্যজনকই বলতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy