টালা পার্কের সেই পুজো প্রাঙ্গণের সামনে পড়েছে এমনই পোস্টার। নিজস্ব চিত্র
এমনিতে সরস্বতীকে ঘোর বিপদেই মনে পড়ে বাঙালির। তার উপরে এই করোনা কালে ইস্কুল, কলেজ, পরীক্ষা নিয়ে নানা জটিলতা। তবু এখনই, আরও একটি বিশেষ কারণে বাঙালি তাঁর শরণাপন্ন হবে এটা অনেকেই ভেবে উঠতে পারেননি।
কাল, মঙ্গলবার বাগ্ দেবীর আরাধনা। তার প্রাক্কালে শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ ছেয়ে নতুন হোর্ডিং, ‘বাংলা থাক ভাল ভাষায়-ভালবাসায়।’ সরস্বতী পুজো উপলক্ষে এই বার্তার আহ্বায়ক উত্তর কলকাতার একটি নামী পুজো।
সরস্বতী পুজোর চাঁদার বিল হাতে আসা ছোকরাকে দেবীর নামের বানান-প্রমাদের জন্য পাড়ার গুরুজনেদের বকুনি বঙ্গজীবনে বহু দিনের একটি প্রিয় মস্করা। আবার ভোট-রাজনীতির অঙ্গনেও বাংলা ভাষা নিয়ে চলছে তোলপাড়। এই পটভূমিতে সরস্বতী পুজোর হোর্ডিং-বাণীর ভাষাচর্চা অনেকের কাছেই তাৎপর্যপূর্ণ ঠেকছে।
বাংলা ভাষাকে ভাল রাখার মরিয়া পণে অবশ্য রাজনীতির জাঁদরেল প্রতিপক্ষেরা কেউই কম যান না। বিজেপিকে বহিরাগত তকমা দিয়ে দূরে হটাতে তৃণমূলের অস্ত্র ভাষা-সংস্কৃতি। এর মোকাবিলায় বিজেপি-র সুভাষিত বক্তৃতা, সংলাপেও বাংলা ভাষারই খই ফুটছে। ফলে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতা বা ‘মন কী বাত’ মানেও এখন বাংলা-উদ্ধৃতির ছড়াছড়ি। রবীন্দ্রনাথ, সুভাষচন্দ্র, অরবিন্দ থেকে অনামী বাঙালি কবির লেখাও তাঁর রসনায় উদ্ভাসিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিজেকে বহুভাষী প্রমাণ করতে কসুর করেননি। তাঁর বক্তৃতাতেও হিন্দি তো বটেই গুজরাতি, গুরমুখী, রুশ নানা ভাষার কথা!
বাঙালির বিভিন্ন ভাষাচর্চা বা অবাঙালির বাংলা চর্চা, দুটোর ইতিহাসই বহু পুরনো। তবে এ যাত্রায় রাজনীতিকদের বক্তৃতায় কোনও ভাষাই ঠিকঠাক মর্যাদা পাচ্ছে কি না, তা নিয়েও রয়েছে ধন্দ। মমতার তেড়েফুঁড়ে অনভ্যাসের ভাষায় দক্ষতা প্রমাণের চেষ্টা, নেট-রসিকদের আলোচনায় ঘুরে-ফিরে আসেই। অধুনা বাংলা বলতে ‘উদ্বুধ’ নরেন্দ্র মোদীর দুর্বোধ্য উচ্চারণে ‘চোলায় চোলায় বাজবে জোয়ের ভেরী’ বা ‘ওরে গ্রহবাসী’ও ভোটরঙ্গে জনপ্রিয় সংলাপ হিসেবে এগিয়ে রয়েছে। ভোট-বাজারে হাততালি কুড়োনর চেষ্টা হিসেবে ধরলেও এই আলগা, ওপর-ওপর বাংলা চর্চার কোটেশন-কাঁটায় বাঙালি ক্ষতবিক্ষতও। এই পরিস্থিতিতে সরস্বতী পুজোয় ভাষাকে বাঁচানোর আর্তি বিজ্ঞাপনে খুবই প্রাসঙ্গিক বলে মনে করছেন বিজ্ঞাপন বিশারদ সৌভিক মিশ্র। “বহু সফল বিজ্ঞাপনই সমকালীন প্রসঙ্গ টেনে এনেই নজর কাড়ে। সরস্বতী পুজোয় ভোটের ভাষা-সন্ত্রাসের কথাও তাই বলা যেতেই পারে!”, বলছেন তিনি। নবদ্বীপের পুরোহিতমশাই সুশান্ত ভট্টাচার্যের চোখেও “সরস্বতী হলেন বাগীশ্বরী। তিনি জ্ঞান-বিদ্যা তো বটেই ভাষারও দেবী।”
ভোটের হাওয়ায় ভাল বাংলার সঙ্কটের পাশাপাশি বক্তৃতায় অর্থহীন অপভাষা বা কুকথার বাড়বাড়ন্তও অবশ্য এখন বাংলার রোজনামচা। রাজনীতির বিষয় থেকে দূরে সরে চটকদার চোখা সংলাপের মধ্যে দেখা গিয়েছে হুমকির সুরে প্রতিপক্ষ নেতার ‘বাপান্ত’ও। ভাষা নিয়ে এই টানাপড়েনে সরস্বতী পুজোর হোর্ডিং তা হলে এখন ঠিক কী বলতে চাইছে?
সংশ্লিষ্ট হোর্ডিং-বার্তার রূপকার টালা প্রত্যয়ের সহ-সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস বলছেন, “আমাদের সাদা মনে কাদা নেই! সে তো মা সরস্বতীর অঞ্জলির মন্ত্রেও মানে না বুঝে অনেকে ‘বিদ্যাস্থানেভ্য এব চ'র বদলে ভুল করে 'বিদ্যাস্থানে ভয়ে বচ' বলেন।”
কালী, দুর্গা বা গণেশ পুজোও আগেই রাজনীতির পরিসরে হাতিয়ার করেছে বাঙালি। ২০২১-এরভোট-হাওয়ায় ঘরোয়া বা স্কুল-কলেজের দেবী সরস্বতীও এ বার কিছুটা অন্য ভূমিকায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy