Advertisement
১৭ জানুয়ারি ২০২৫
Sonam Wangchuk

‘প্রকৃতির উকিল হয়ে সংসদে যেতে আপত্তি নেই’: সোনম ওয়াংচুক

সরকারি প্রকল্প বা উন্নয়নের বিরোধিতা নয়, বরং মানুষের চাহিদায় বদল আনার লক্ষ্যে দেশের আনাচেকানাচে ঘুরছেন বাস্তবের ‘র‌্যাঞ্চো’।

জলবায়ু নিয়ে একটি আলোচনা সভায় সোনম ওয়াংচুক। কলেজ স্ট্রীটের মহাবোধি সোসাইটির প্রেক্ষাগৃহে।

জলবায়ু নিয়ে একটি আলোচনা সভায় সোনম ওয়াংচুক। কলেজ স্ট্রীটের মহাবোধি সোসাইটির প্রেক্ষাগৃহে। —নিজস্ব চিত্র।

স্বাতী মল্লিক
শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:৩৫
Share: Save:

‘আল ইজ় ওয়েল!’

বিপদের দিনে, সমস্যায় পড়লে বুকে হাত দিয়ে এই মন্ত্র আওড়ানোর টোটকা দিয়েছিলেন আমির খানের র‌্যাঞ্চো ওরফে ফুনসুক ওয়াংরু চরিত্রটি। ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমার এই চরিত্রটি বাস্তবে যাঁর আদলে তৈরি, লাদাখনিবাসী সেই সোনম ওয়াংচুক অবশ্য কলকাতায় পা দিয়ে শোনালেন পরিবেশের ‘আল ইজ় নট ওয়েল’-এর কথা। ৫৮ বছরের এই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার তথা উদ্ভাবক বললেন, ‘‘দেশের সরকার হল ‘আলাদিনের জিন’, আমরা যা চাইব সে সেটাই দেবে। আর আমরা হলাম আলাদিন। আমরাই কখনও জিনের কাছে বিশুদ্ধ বাতাস, পরিশুদ্ধ পানীয় জল চাইনি। তাই সরকারও দেওয়ার কথা ভাবেনি। তাই আলাদিন অর্থাৎ, মানুষের চাহিদাকে বদলাতে চাই, জিনকে নয়।’’

লাদাখের পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র বাঁচাতে গত কয়েক বছর ধরেই সরব সোনম। এ নিয়ে সরকারের নজর টানতে কখনও তিনি জমে যাওয়া ঠান্ডায় খোলা আকাশের নীচে ২১ দিন অনশন করেছেন, কখনও লাদাখের ‘ষষ্ঠ শিডিউল’-এর দাবিতে হেঁটে এসেছেন লেহ থেকে দিল্লি। আবার কখনও দিল্লির বুকে অনশনে বসেছেন। সংসদে পরিবেশের হয়ে কথা বলার জন্য প্রতিনিধিত্বের দাবি তুলেছেন। সে সময়ে সারা দেশ থেকেই তাঁর আন্দোলন সমর্থন করেছিলেন অনেকে। তাঁদের ধন্যবাদ দিতে ও পরিবেশগত বিপদ নিয়ে মানুষকে আগাম সতর্ক করতেই বৃহস্পতিবার শহরে এলেন অমায়িক, সদাহাস্যমুখ সোনম। এক দিনের ঝটিকা সফরে এ দিন বাইপাসের হোটেল থেকে হেঁটে মহাবোধি সোসাইটিতে পৌঁছন তিনি। সেখানে ‘ফ্রেন্ডস অব লাদাখ, ফ্রেন্ডস অব নেচার’ সংগঠন আয়োজিত এক আলোচনাসভায় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সোনম বলেন, ‘‘প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। অথচ আমরা লক্ষ্যও করছি না! পৃথিবীকে বাঁচাতে আরও একটা সংগ্রামের প্রয়োজন রয়েছে। কলকাতা বুদ্ধিজীবীদের শহর। তাই এই সংগ্রামে কলকাতা সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে বলে আমি আশাবাদী। আশা করব, এ রাজ্যের সরকারও পরিবেশ বাঁচানোর পথে অগ্রগামী হয়ে দেশের কাছে দৃষ্টান্ত তুলে ধরবে।’’

পরিবেশগত সমস্যা নিয়ে বলতে গিয়ে সোনমের মুখে শোনা গেল তাঁর জন্মভূমি লাদাখের কঠিন পরিস্থিতির কথা। ব্যাখ্যা করলেন, কী ভাবে বিশ্ব উষ্ণায়ন ও কালো কার্বন নির্গমনের জেরে ক্রমশ গলছে হিমবাহ। ২০০৬ সালে প্রথম হড়পা বান চাক্ষুষ করা লাদাখে আজ কয়েক বছর অন্তরই হড়পা বানে প্রাণহানি ঘটছে। এর ফল সমতলবাসীকেও ভুগতে হবে বলে সতর্ক করছেন এই পরিবেশকর্মী। জানাচ্ছেন, লাদাখের এক-দু’টি গ্রাম আজ ‘পরিবেশগত উদ্বাস্তু’ সমস্যার মুখোমুখি। ৩০-৪০ বছর পরে পুরো লাদাখেই এই সমস্যা দেখা দেবে। তখন সমতলেরও পরীক্ষা শুরু হবে। কারণ, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের মতো নদীতে তখন সারা বছর জল থাকবে না। ফলে কৃষিকাজ হবে না। তাপমাত্রা এত বেড়ে যাবে যে সালোকসংশ্লেষও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তাই সরকারি প্রকল্প বা উন্নয়নের বিরোধিতা নয়, বরং মানুষের চাহিদায় বদল আনার লক্ষ্যে দেশের আনাচেকানাচে ঘুরছেন বাস্তবের ‘র‌্যাঞ্চো’। বলছেন, ‘‘উন্নয়নও ঠিক পথে, ঠিক সময়ে করতে হয়। না-হলে একটা সময়ের পরে উন্নয়নই বিনাশের কারণ হয়।’’ শিক্ষাকে হাতিয়ার করে সাধারণ জীবনযাপনের মন্ত্র তাই চারিয়ে দিতে চান জনমানসে। যাতে সেই মন্ত্রে দীক্ষিত হয় আগামী প্রজন্মও। ‘‘এমন দিন আসুক, যে পরিবেশের সাহায্য ছাড়া কোনও দল রাজনৈতিক লড়াই জিততে পারবে না। পেঁয়াজের দামের জন্য যদি সরকার পড়ে যায়, তা হলে পরিবেশের উপরেও সরকার ভাঙা-গড়া নির্ভর করুক।’’— আশাবাদী শোনায় সোনমের গলা।

পরিবেশের কথা বলতে সংসদে প্রতিনিধিত্বের দাবি আগেও তুলেছিলেন সোনম। কখনও প্রতিনিধিত্বের সুযোগ এলে কি রাজি? সোনম বলছেন, ‘‘সংসদে প্রকৃতিকেও জায়গা দেওয়া উচিত। পশু-পাখি-পোকামাকড়-গাছগাছালির কথা বলার জন্য প্রতিনিধি প্রয়োজন। সুযোগ পেলে প্রকৃতির উকিল হয়ে সংসদে যেতে আপত্তি নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Sonam Wangchuk Ladakh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy