Advertisement
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ব্যথাকে তুচ্ছ করে করোনা-যুদ্ধে

গাড়ি চালাতে শিখেছেন প্রায় দু’দশক আগে। শুরুতে ট্যাক্সি চালালেও এখন প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে অ্যাপ-ক্যাব চালাচ্ছেন সোমনাথ।

যোদ্ধা: সোমনাথ ঘোষ।

যোদ্ধা: সোমনাথ ঘোষ।

ফিরোজ ইসলাম 
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২১ ০৫:২০
Share: Save:

কোমরের হাড় ক্ষয়ে গিয়েছে। বাতানুকূল ক্যাবে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে ব্যথাটা বাড়ে। একাধিক পেন কিলার খেয়ে কাজ চালিয়ে যেতে হয়। গাড়ি থেকে নেমে হাঁটার সময়ে সাহায্য নিতে হয় লাঠির। তবু শারীরিক প্রতিকূলতাকে তুচ্ছ করেই করোনা রোগী এবং তাঁদের পরিবার-পরিজনদের হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে চলেছেন অ্যাপ-ক্যাব চালক সোমনাথ ঘোষ। সিটু-র উদ্যোগে অন্য চালকদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে করোনা-যুদ্ধে শামিল জিঞ্জিরাবাজার সংলগ্ন রামপুরের বাসিন্দা, বছর আটত্রিশের এই যুবক।

গাড়ি চালাতে শিখেছেন প্রায় দু’দশক আগে। শুরুতে ট্যাক্সি চালালেও এখন প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে অ্যাপ-ক্যাব চালাচ্ছেন সোমনাথ। বাবা মারা যাওয়ার পরে ২০০১ সাল থেকেই সংসারের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। বৃদ্ধা মা ছাড়াও স্ত্রী, দশ বছরের ছেলে এবং তিন বছরের এক কন্যা রয়েছে তাঁর। গত ১৫ মে রাজ্যে গণপরিবহণের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ চালু হওয়ার পরেই বামপন্থী সংগঠন সিটু-র উদ্যোগে চালু হওয়া করোনা রোগীদের জন্য বিশেষ পরিষেবায় যুক্ত হন তিনি। পিপিই পরে রাত-বিরেতে রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া ছাড়াও ওষুধ বা অক্সিজেনের খোঁজে রোগীর পরিজনদের নিয়ে ছুটতে হয়েছে শহরের নানা প্রান্তে। করোনার সংক্রমণ তুঙ্গে থাকার সময়ে বহু রোগীর জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়ার কাজও করতে হয়েছে সোমনাথকে। করোনা রোগীদের পৌঁছে দিয়েছেন নেতাজিনগর থেকে এন আর এস হাসপাতালে। আবার সুস্থ হওয়ার পরে রোগীকে বাড়িতেও ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি।

করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কোমরের অস্থি প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার করাবেন বলে ঠিক করে রেখেছেন সোমনাথ। শারীরিক কষ্ট থাকলেও সেই ব্যথাকে জয় করেই কাজে নামেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘কোমরের ব্যথার কারণে বাঁ পায়ে ভর দিয়ে
হাঁটতে পারি না। তবে স্টিয়ারিংয়ে বসলে ব্যথার কথা কম মনে হয়। তখন শুধু সামনের রাস্তা আর সওয়ারির কথা ভাবি। বাড়িতে একা বসে থাকলে হয়তো ভয় পেতাম।’’

করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এ ভাবে সকলের সঙ্গে মিলে কাজ করতে পেরে খুশি সোমনাথ। তবে, এখনও প্রতিষেধক নেওয়ার সময় বার করে উঠতে পারেননি। ইচ্ছে আছে, চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে দ্রুত প্রতিষেধকটা নিয়ে নেবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE